রূপার জন্য বেদনাহত - Women Words

রূপার জন্য বেদনাহত

রোমেনা লেইস

রূপার ঘটনাটা জানার পর থেকেই তাঁর জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছি। রূপা আসলে আমার সন্তানের মতো।প্রতিদিন এই যে সকালে ছেলে মেয়েরা সবাই বের হয়ে যায়, ভালভাবে ফিরে আসুক- কায়মনোবাক্যে এই থাকে আমার প্রার্থনা ।

রূপার মতো স্বপ্ন নিয়ে একদিন আমরাও বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম।বাসে ট্রেনে ফেরীতে কতো রকমের লোকজন থাকে।

একবার সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট পৌঁছানোর পর ট্রেন আসতে আরো দেরী আছে। একটা রেস্টুরেন্টে ভাত খাচ্ছি।পাশের কেবিনে কয়েকজন আলোচনা করছে।ভীড়ের ভেতর তারা মেয়েদের কোথায় কে টাচ করেছে।এক বাহাদুর বলছে, এক মেয়ে ট্রেনে উঠছিলো।সেই মেয়ের বুকে সে টাচ করেছে।বিশ্বাস না হলে তার হাত শুঁকে দেখতে বলছে বন্ধুদের।ঐ মেয়ের পারফিউম এর ঘ্রাণ ওর হাতে।কী অসভ্য।

রুচি হয়না ওদের কথা শুনতে।মন তেতো হয়ে যায়।বাবা মার নিরাপদ কোল ছেড়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণে বের হতে হয়।এরকম পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলতে শিখি।নিউমার্কেট এলাকায় একদল খবিশ লোক ছিলো ।সব সময় সুযোগের সন্ধানে থাকে।আমরা সাপের মত হাঁটা দিয়ে সেই খবিশদের বোকা বানাই।ওদর হাত এগিয়ে আসার আগেই আমরা পিছলে বের হয়ে যাই।এগুলোর কোনো ট্রেনিং সেন্টার থাকে না।মেয়েদের সিক্সথ সেন্স থেকে, বুদ্ধি থেকে নিজেদের বাঁচাতে সবাই শিখে যায়।

একবার আমাদের একদল ভাইবোন বলাকা সিনেমা হলের সামনে দিয়ে আজিমপুরের দিকে যাচ্ছিলাম।একজনের পেছনে চিমটি কাটলো এক লোক।জানতে পেরে আমাদের এক ভাই যখন ঐ লোককে সেইম জায়গায় চিমটি দিলো তখন সেই লোক পড়ি মরি করে দৌড়ে পালালো। ইডেনে পড়াকালীন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো তা আর নাই বা বললাম ।

একজন রূপা ।বাবা মায়ের কতো আদরের।ভাই এর কতো স্নেহের।রূপার জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়।তাই সে পড়াশুনার পাশাপাশি চাকারিও করে।শিক্ষক নিবন্ধনের পরীক্ষা দিয়ে সে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাচ্ছিলো। তার ভাই সেলফোনে খোঁজ নিচ্ছিলেন সে কোথায়, কতক্ষণে পৌঁছাবে গন্তব্যে।বড়ভাই এর আদরের রূপা উন্নত বিশ্বের দেশ ইউ এস এতেও একই।একজন ভারতীয় মেয়েকে চিনি। সে বাবা-মার আদরের ছোট কন্যা।নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারী পড়ছে। যারএক ভাই এনওয়াইপিডি তে জব করে।প্রতি রাতে বোন যখন ক্যাব নেয়, গাড়ির নম্বর ভাইকে দেয়।ভাই ট্র্যাক করেন বোন কখন কতদূরে আছে।

বলছিলাম রূপার কথা। কতো সংগ্রাম করে আজ যখন রূপা স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায়, এই সময় এমন করে একটা মেয়েকে অত্যাচার করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা তার ঘাড় মটকে, মাথা থেঁতলে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে।

এতো সাহস কোথায় পায়? সাহস পায় কারণ বিচার হয় না।কোনো কোনো ধর্ষককে খুঁজে পাওয়া যায় না।পাওয়া গেলেও টাকা পয়সা ঢেলে বিচার কাজ পিছিয়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায় অপরাধি ।ইতিহাস সাক্ষী। আমি ভুলিনি নীহার বানু হত্যার কথা।ধর্ষক বাবু পালিয়ে চলে যায় পশ্চিম জার্মানী। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত একজন ধর্ষকেরও কঠিন বিচার হলো না।দ্রুত বিচারের আওতায় এনে একজন ধর্ষককে সাজা দেয়া হোক।পরের দিন থেকে দেখা যাবে ধর্ষণ করার আগে সব ধর্ষণকারী দ্বিতীয় বার ভাববে ।

হুমায়ূন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ সিনেমায় দেখেছিলাম সেই মানসিক বিকারগ্রস্থ বোনের দূরবস্থা যে করেছিলো, তাকে হত্যা করতে পিছপা হয়নি ভাই টি। এভাবে বিচার না হতে থাকলে এরপর দেখা যাবে জনগন আইন হাতে তুলে নেবে।

যে পিতা স্ত্রীর বর্তমানে কন্যা শিশুটিকে ধর্ষণ করে গর্ভবতী করেছে তার কী বাঁচার কোন অধিকার আছে?তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। কিংবা বাড়ির পাশের যে চাচা পাঁচবছরের শিশু পূজাকে ধর্ষন করেছিলো তাকে।

ভারতে দিল্লীর গ্যাং রেপের পরেও ভাবতাম আমরা ভারতের চেয়ে ভাল অবস্থায় আছি। কিন্তু সেই ঘটনারতো বিচার হয়েছে।

রূপার ঘটনার পর আজ শুধু মনে হচ্ছে রূপাতো চলেই গেলো।ওর ধর্ষক ও হত্যাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।পুলিশবাহিনীকে ধন্যবাদ।এখন আশা করবো তাদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক, যেন আর কোনো রূপাকে কেউ এভাবে অত্যাচার করে মেরে ফেলার সাহস না পায়।এভাবে আর কোনো রূপা যেন হারিয়ে না যায়।