সেরা চিকিৎসা, সেবা নয় - Women Words

সেরা চিকিৎসা, সেবা নয়

আবদুল্লাহ জুবেরী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল! সম্ভবত দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। হাসপাতাল নিয়ে যাদের ন্যুনতম অভিজ্ঞতা আছে তারা কেউই এখানে চিকিৎসা নিতে আসতে চাইবেন না এখানকার পরিবেশ এবং ক্ষেত্রবিশেষে হয়রানির কারণে। যারা আসেন, তারা নিতান্তই বাধ্য হয়ে আসেন। এবং এই হাসপাতালের বেশিরভাগ রোগীই অন্য হাসপাতাল থেকে রেফার করা। কারণ একটাই – সম্ভবত দেশের সেরা চিকিৎসা এই হাসপাতালেই পাওয়া যায়। আবারও বলি ‘চিকিৎসা’, সেবা নয়। সেবা নয় কেন? কারন, যে পরিমাণ রোগি প্রতিদিন আসেন সেই তুলনায়, ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য কর্মচারী এবং লজিস্টিক্স খুবই সীমিত। আর দুর্নীতি এবং অপরাধের সিন্ডিকেট তো আছেই। এ বিষয়ে আলাদা আলোচনা দাবী করে। চিকিৎসার কথাই আজ বলি। আমার স্ত্রী আর্লি প্রেগ্নেন্সি কমপ্লিকেশন নিয়ে কয়েকজন ডাক্তার দেখান। তাদের দেয়া বিভিন্ন ইনভেস্টিগেশনে তেমন কিছুই ধরা পড়েনি। একদিন প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে সে মিরপুরের মেরি স্টোপস ক্লিনিকে গেলে তারা ধারণা করেন, গর্ভধারন জরায়ুর বাইরে ফ্যালোপিয়ান টিউবে হয়েছে। আর বলেন ব্যথা বাড়লে সরাসরি কোন সরকারি হাসপাতালে যেতে। পরদিন একজন কন্সাল্ট্যান্ট প্রফেসরকে দেখালে তিনি বলেন তাৎক্ষনিক অপারেশন করতে হবে এবং হাজার পঁয়ত্রিশ খরচ হবে। আমার স্ত্রী তাকে কোন অজুহাত দেখিয়ে কোন সরকারি হাসপাতালে পাঠাতে বলে। সেদিন বিকেলেই আমরা গেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তাররা সবরকমের রিপোর্ট দেখে খানিকটা রক্ষনশীল হবার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই নিবিড় পর্যবেক্ষেন কতটা নিবিড় হতে পারে, তা ওখানে না থাকলে জানতামও না। গড়ে প্রতি চল্লিশ মিনিট পরপর তার আপডেট হয়েছে। একটি কেবিন পেয়ে চেয়েছিলাম ওখানে যেতে। কিন্তু ডাক্তাররা রাজি হননি তাদের চোখের আড়াল হতে দিতে। এমন চিকিৎসা বাংলাদেশের কোথাও সম্ভব না। তাদের চিকিৎসায় শেষতক ভ্রূনটি জরায়ুতে ফিরে এসেছে। এটি আমাদের জন্যে রীতিমত মিরাকল। আমাদের কৃতজ্ঞতা এই পাঁচদিনে যেসব ডাক্তার ২১২ ওয়ার্ডে ডিউটিতে ছিলেন তাদের প্রতি। গাইনি ওয়ার্ড হওয়ায় ভেতরে আমার থাকার অনুমতি ছিল না। এই খারাপ সময়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গ দিয়েছে শিলা রাণী ও বৃষ্টি।  এদের কান্ড-কীর্তির কথা আরেকটা লেখায় উল্লেখ করতে হবে।

আবদুল্লাহ জুবেরী, সিনিয়র জারনালিস্ট , নিউ এজ