মরেই যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ‌‌‘ডেড সী’ - Women Words

মরেই যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ‌‌‘ডেড সী’

জর্ডান ও ইসরায়েল সীমান্তবর্তী ডেড সী মধ্যপ্রাচ্যের এক অবাক করা সাগর। এর পানি এতই ঘন যে চাইলেই কেউ তাতে ডুবে মরতে পারবেন না। বরং দিব্যি তাতে বসে বসে বই পড়া যায়। তবে দুঃসংবাদ হলো এমন ব্যতিক্রমী সাগর হয়তো একসময় হারিয়ে যাবে মর্ত্যলোক থেকে। কারণ দিন দিন এই ‘মৃত সাগর’ সংকুচিত হয়ে আসছে। তবে কি সত্যি সত্যি মরতে বসেছে ‘ডেড সী’?

তিরিশ বছর আগে যখন ইজরায়েলের এনগেডি রিজর্টটি তৈরি হয়েছিল তখন ডেড সীর পানি ছিল তার দেয়ালের গা ঘেঁষে। কিন্তু এখন এই সমুদ্র এত দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে যে তার পানি দেখতে হলে পর্যটকদের জন্য তৈরি এক ট্রেনে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২ কিলোমিটার। তবে ডেড সি-র প্রাচীন সব গুণাবলী অবশ্য এখনো অটুট রয়েছে।

ডেড সি একটি অতি লবণাক্ত পানি সমৃদ্ধ সাগর। এটি জর্ডানে অবস্থিত। ডেড সী’র পশ্চিমে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্বে জর্ডান অবস্থিত। জিবুতির আসাল হ্রদের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত পানির প্রাকৃতিক আধার। মৃত সাগর সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার বা ১,৩৭৮ ফুট নিচে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর ৩১.২০ অক্ষাংশ ও ৩৫.২০ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এন্ডোরেয়িক হাইপার-স্যালাইন ধরনের এই সাগরের পানির প্রধান উৎস জর্ডান নদী। এই সাগরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার। সমুদ্রের পৃষ্ঠতলীয় ক্ষেত্রফল ৮১০ বর্গ কিলোমিটার। সাগরের গড় গভীরতা ১২০ মিটার বা ৩৯৪ ফুট যার মধ্যে সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৩০ মিটার বা ১০৮৩ ফুট। এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নতম স্থান বা স্থলভূমি । এই সাগরের পানির লবণাক্ততা শতকরা ৩০ ভাগ যা অন্যান্য সমুদ্রের পানির চাইতে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত ।

Dead Sea 02 women wordsএখনো আপনি চাইলে খনিজ সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর কাদামাটি গায়ে মাখতে পারবেন কিংবা ঘন লবণাক্ত পানিতে নামতে পারবেন। তাতে ভেসে ভেসে বই পড়তে পারেন। ডেড সী-র পানিতে এভাবে ভেসে থাকার আগ্রহেই সেখানে যান অনেক পর্যটক।

Dead Sea 03 women wordsইউক্রেন থেকে আসা পর্যটক নাতালিয়া বলছেন তার এত দীর্ঘ যাত্রা বৃথা নয়। তিনি বলছেন, “আমি এর আগে কখনো এই কাদামাটি ব্যবহার করিনি। আমার খুবই ভাল লেগেছে। আমার মনে হচ্ছিলো কোন এক শক্তি আমাকে আকাশের দিকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

বেশ কয়েক বছর হলো ডেড সির আশেপাশের চেহারা খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। গতবছরও এখানে পর্যটকদের জন্য থাকার জায়গা, দোকানপাট সহ আরো অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা ছিল। কিন্তু এখন তার কিছুই আর বলতে গেলে নেই। কারণ পুরো এলাকা জুড়ে তৈরি হচ্ছে সিংকহোল। প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া মাটির গর্তে দেবে যাচ্ছে পুরো ভবনও।

“এটি খুবই নাটকীয় ঘটনা এবং দুশ্চিন্তারও বিষয়। বিশেষ করে যারা এই সৈকতের ওপর নির্ভর করে জীবনধারণ করত তাদের জন্য”, বলছিলেন অধ্যাপক গিডিবেয়ার, যিনি সিংকহোলের বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ।

গত কয়েক বছরে পুরো এলাকায় কয়েক হাজার চোরাবালির মত সিংকহোলে দেবে গেছে প্রচুর স্থাপনা। “অতীতে ভূতত্ত্ববিদরা প্রাচীন চিহ্ন দেখে বোঝার চেষ্টা করতো যে এসব সিংকহোল কিভাবে তৈরি হয়। এখানে আমরা চোখের সামনে দেখছি যে সিংকহোল কিভাবে তৈরি হয়। একজন ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে এটি দেখতে পারা এবং এনিয়ে গবেষণা করতে পারাটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।”

ডেড সীর চারপাশে হাঁটলেই মনে হয় যে ভূতত্ত্বের ব্যবহারিক দিকটি আপনি নিজ চোখে দেখছেন।

লবণের তৈরি মাটি পায়ের নীচে পড়ে ক্রিস্টালের মত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ছে।

কিন্তু কেনো মৃত্যু ঘটছে ডেড সীর? কারণটা হলো জর্ডানের যে নদী থেকে এখানে পানি আসে, সেই নদীর পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদিও এই সমস্যা সমাধানের একটি পরিকল্পনা আছে। লোহিত সাগর থেকে মরুভূমির ওপর দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করা। যেই প্রকল্পটি হবে অনেক ব্যয়বহুল।

Dead Sea 04 women wordsতবে পরিবেশবাদী গোষ্ঠি ইকোপিসের সালাম আব্দুর রহমান বলছেন, এই অর্থ ব্যয় করাটা যুক্তিসঙ্গত। “ডেড সী সুন্দর কি না সেটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা মনে করি ডেড সী হচ্ছে জীবনধারণের অবস্থার একটি নির্দেশক। এই অঞ্চলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা যে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, ডেড সী তারই নিদর্শন। যে কারণে ডেড সি রক্ষা করতে পারলে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাবে যে আমরা আমাদের পরিবেশের রোগ সারিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলছি”

সূত্র : বিবিসি, আননোনওয়ার্ল্ডবিডি