মোহজাল (পর্ব:আঠারো) - Women Words

মোহজাল (পর্ব:আঠারো)

অনন্যা হক

আজও মোমেনা দুপুরে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিল। বসে রাস্তার লোক আসা যাওয়া দেখছিল। আজ স্বামী কে নিয়ে আসার কথা।কখন আসবে জানে না কিছু। কেউ তো যোগাযোগ করেনি, জমিরের কাছে শোনা।

বড় মেয়ের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়।তাকে ফোন দিয়েছিল, সেও বলেছে আজ আসবে।

রান্না করে রেখেছে ছেলে আর তার আব্বার জন্য।

খুব চিন্তা হচ্ছে কেমন দেখবে স্বামী কে। চোখ লেগে আসছিল ঘুমে।

পেটে খিদা, ভাবছে ভাত টা খেয়ে নেবে কিনা,কখন আসবে জানে না তো। উঠতে যাবে এমন সময় একটা অটোর শব্দ পেল। অটো এসে বারান্দার সামনে থামে।

দরজা খুলে সামনের বারান্দায় গেল।রজব নেমে মোমেনা কে দেখে বলে,ছোট মা আব্বার বিছানা টা ঠিক করো,শরীর টা ভাল না, এখনই শুয়াই দেই।

মোমেনা স্বামী কে দেখার জন্য আর দেরি না করে চিন্তিত হয়ে ঘরে গিয়ে ঢুকে বিছানা ঠিক করতে থাকে। অবাক হয় রজবের মুখে কোন দ্বিধা ছাড়া এত সহজে মা ডাক শুনে।

তাহলে কি তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো এ সংসারে,সে মেনে নিল এত সহজে নাকি অন্য কিছু।

পোড় খাওয়া মন, এত সহজে খুশি হতে পারে না, কোন একটা কারণ হাতড়ে বেড়ায়।

চাদর আগেই পাল্টে রেখেছিল,শুধু ঝেড়ে দিয়ে, লুঙ্গি, গামছা বের করে রাখে।

রজব আব্বা কে ধরে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

-উনি কি এত খারাপ যে একা হাঁটতি পারে না?

কি হলো,চিকিৎসার জন্যি নিলে তো দেখে এমন লাগে কেন?

আপনি কেমন আছেন?

-আর ভাল হব কিনা জানি না ছোট বউ।

কেমন একটা চেহারা হয়েছে এই কদিনে, মনে হচ্ছে আরো বেশি বুড়া হয়ে গিয়েছে। কি হয়েছে মোমেনা কে কেউ বলেনি। মোমেনা বসে থাকে পাশে। রজব ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

-আপনারে অনেক কাহিল দেখাচ্ছে।বেশি শরীর খারাপ? ঢাকা গেলেন,ভাল হয়ে আসবেন ভাবছি।

-অনেক ওষুধ দিছে,শ্বাসকষ্ট তো কমে না।আমি ভাল নেই।

-তয় আইলেন ক্যান, আর কয় দিন হাসপাতালে থাকতেন।

-না, আর না। অনেক কষ্ট,ওখানে কে আমারে দেখবি। আমার বাড়িই ভাল। যে কদিন বাঁচি,এই বাড়ির আলো বাতাসে থাকি।

আমিই ইচ্ছে করে তোমার কাছে চলে আইছি।

ঐ শহরে আটকা ঘরে আমার দম বন্ধ লাগতো। তুমি আমারে দেখবা জানি। ছেলের বউ এর কথা বার্তা ভাল লাগে না। সুস্থ যদি হই বাড়ি তে থাকেই হব,মরি যদি নিজের ঘরে মরবো।

-কি সব আজেবাজে কথা কন? কিছুই হবিনে আপনার। ওষুধ খালি ভাল হয়ে যাবেন। মোমেনার মনে মায়া হয় স্বামীর জন্যে। বলে, আইছেন ভাল করছেন, আমি আপনারে দেখে রাখবো।

আপনি এখন গোসল করবেন? চলেন কল পাড়ে।

-এখন না,পরে। শরীরে বল পাইনে।

-তয় যাই,ভাত বাড়ি।

রজব ঘরে ঢুকে বলে একটা গামছা দাও আমারে। মোমেনা উঠে গামছা এনে দেয়। রজব কল তলায় চলে যায়। মোমেনা চিন্তিত হয়ে স্বামীর পাশে বসে থাকে।

গোসল না করেন ভাত খাবেন চলেন।পথে কিছু খাইছেন?

-না। আজকাল খিদা লাগে কম।

-রান্না ঘরে যাতি পারবেন তো? নাকি ঘরে খাবার আনরো?

-আজ ঘরেই আন।

রজব কে ভাত খেতে দিয়ে মোমেনা বসে থাকে সামনে। কি বলবে বুঝে পায় না।আজ বিপদে পড়ে মা ডাকছে তাকে। পরের ছেলে কি এত সহজে নিজের ছেলে হয়?

তার যোগ বিয়োগের বিয়ে। একটা সংসার চেয়েছিল। সংসার হলো। দুই বছর ঘুরতেই স্বামী অসুস্থ, কি রকম অসুস্থ বুঝতে পারছে না।

রজব খেতে খেতে বলে, আমি কালই চলে যাব। ছুটি নেই। তুমি আব্বা কে দেখে শুনে রাইখো,শরীর কিন্তু বেশি ভাল না। দোকানে যাওয়ার দরকার নেই এখন। অবশ্য পারবেও না।

-কেন,কি রকম অসুখ উনার? ওষুধে ঠিক হবিনে?

-বুঝতে পারছি না। ডাক্তার কইছে আব্বার ফুসফুসের সমস্যা।

-আমি তো পড়তে পারি না, ওষুধ কিভাবে খাওয়াবো?

-আব্বা জানে তার কাছে নিয়ে শুনে খাওয়াবা। যদি বেশি খারাপ হয়ে যায় তো বড় আপা রে খবর দিও।

-তার সাথে কথা হইছে,সে এসে কিছু দিন থাকবি। তার তো ছেলে মেয়েরা বড় হইছে।

-আমি ছুটি পালি আবার আসবো।

এরা আসবে দেখে ছেলে দের বাড়ি তে পাঠিয়ে দিয়েছিল। ভাবে,রজব গেলে আবার কাছে নিয়ে আসবে। এখন এদের বিপদ,এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। সে বোঝে,এখন তাকে ছাড়া এদের গতি নেই। নইলে এত তাড়াতাড়ি দিয়ে যেত না।

তাই এত নরম করে কথা বলছে।

রজবের বউ কে সে দেখেনি,সে কেমন স্বভাবের মোমেনা জানে না। রজব খেয়ে উঠে চলে গেলে মোমেনা অন্যমনস্ক ভাবে অল্প করে কয়টা ভাত খায়।

স্বামী কে এমন দেখার পর থেকে কেমন যেন মন টা চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

সকালে রজব চলে যাওয়ার আগে কদম আলীর কাছে গিয়ে বসে।

কদম আলী বারান্দার খাটে নির্জীব হয়ে শুয়ে আছে। এমন অবস্থায় কিভাবে দলিলের কথা তুলবে,একটা দ্বিধা কাজ করে মনে। তবুও মন শক্ত করে বলে,আব্বা জমির দলিল গুলো কোথায় রাখছেন? আমার তো জানা থাকা দরকার। আপনি অসুস্থ, আগের মত দেখে শুনে রাখতে পারবেন না। বেহাত হয়ে যাতি পারে। বলেন, আমি গুছিয়ে তালা মারে রাখে যাই।

-ক্যা রে বাপ,আমি কি আর বাঁচবো না?

-না, সে কথা বলিনি,মা নেই সংসারে,এখন তো এত নিশ্চিন্তে থাকার সময় না। এ তো বাস্তব কথা।

আমারে এখন বুঝিয়ে বলার সময় হইছে আপনার। মাঠে মাঠে এত জমি ফেলে রাখে কি হবি? আমার তো আয় রোজগার বেশি না।

শহরে অনেক কষ্ট করি,আপনি তো দেখে আসলেন।ভাল একটা বাসা পর্যন্ত নিতি পারিনে,ঠাসাঠাসি করে থাকতি হয়।

আর আপনার এখন ভাল চিকিৎসা দরকার।

-আমি বুঝছি বাপ, আর বলতি হবিনে। আমিও এসব নিয়ে ভাবতিছি। দেখি শরীর একটু ভাল হলিই খোঁজ খবর নেব জমির।

চলবে…

আগের অংশ পড়তে ক্লিক করুন