অনন্যা হক Archives - Women Words

Tag: অনন্যা হক

মোহজাল (শেষ পর্ব)

মোহজাল (শেষ পর্ব)

অনন্যা হক মোমেনা কে আর তুলতে হলো না কথা গুলো।কদম আলী অসুস্থ হবার পর থেকে এই বিষয়ে ভাবছিল।ঢাকা শহরে ছেলের বাসায় থাকতেই মনে একটা ভয় কাজ করছিল,বাড়ি ফিরে যেতে পারবে তো! ছোট বউ কে দেয়া কথা তার রাখতে হবে।সে মরে গেলে এ সংসারে তার ঠাঁই হবে না।তাকে কেউ ভাল মত গ্রহণই তো করেনি।বাড়ি থেকে বের করে দেবে এরা। বাড়ি তে এসে অবধি শরীর ভাল বোধ হয় না,একটা কেমন অজানা ভয় ঢুকেছে মনে।একে কি মৃত্যু ভয় বলে? সে বুঝতে পারে না।গায়ে জ্বর থাকে,কাশি যায় না এতদিন হয়ে গেল। কদম আলী বলতে থাকে,বাড়ি তে কেউ আসার আগেই আমি তোমারে ঘর করার কিছু টাকা, আর একটা জমি লিখে দেব।তুমি কাল সকালে জমির রে ডাকে আনবা আমার কাছে। ও রে সাক্ষী রাখে করতি হবি,নাহলি আবার তুমি বিপদে পড়ে যাবা। -আপনি এত তাড়াহুড়ো করতিছেন কেন? আমার খুব ভয় করতিছে,এত অল্প সময়ে কি হলো আপনার,চিন্তা করেন না এত, আল্লাহ রে ডাকেন। মুখে এই কথা বললেও,মনে মনে ভাবে, যেন সত্যি হয় ত
মোহজাল (পর্ব: উনিশ)

মোহজাল (পর্ব: উনিশ)

অনন্যা হক আবার কবে আসবা? পারলি তাড়াতাড়ি আসো। আমার ভয় করে বাজান।আমি তোমার জমির চাচা রে বলি জমি কেউ কেনে কিনা,লোক দেখুক।দলিল দস্তাবেজ সাবধান করেই রাখছি, এসব নিয়ে চিন্তা কোর না। -আব্বা আমি আসি,ভয় করেন না,সব ঠিক হয়ে যাবি। -সাবধানে যাইও,পৌঁছে খবর দিও।তোমার বোন দের কইও,আমারে যেন একটু দেখতি আসে। -ছোট মা,যাই।কোন সমস্যা হলি জমির চাচা রে খবর দিবা। আমারে যেন ফোন করে। রজব বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। মোমেনা এতক্ষণ গরুর ঘর পরিষ্কার করছিল।দূর থেকে কাজের ফাঁকে দেখছিল বাপ বেটা কথা বলছে।কি বলছে কিছু শোনা যায় না।তার কৌতুহল হলেও কাছে আসেনা। এটুকু বুদ্ধি তার আছে, এখন ওখানে তার যাওয়া ঠিক হবে না। ভরা সংসারে বুড়ার শেষ বয়সের বউ,জোয়ান পোলাপান, একটু সমঝে চলতে হবে সে বুঝ তার আছে। রজব বের হয়ে যাবার সময় তার কাছে এসে বলে যায়।কদম আলী বারান্দার খাটে জুবুথুবু অবস্থায় শুয়ে দেখে ছেলে মোমেনা কে বলে গেল। কদম আলী ভাবে,
মোহজাল (পর্ব:আঠারো)

মোহজাল (পর্ব:আঠারো)

অনন্যা হক আজও মোমেনা দুপুরে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিল। বসে রাস্তার লোক আসা যাওয়া দেখছিল। আজ স্বামী কে নিয়ে আসার কথা।কখন আসবে জানে না কিছু। কেউ তো যোগাযোগ করেনি, জমিরের কাছে শোনা। বড় মেয়ের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়।তাকে ফোন দিয়েছিল, সেও বলেছে আজ আসবে। রান্না করে রেখেছে ছেলে আর তার আব্বার জন্য। খুব চিন্তা হচ্ছে কেমন দেখবে স্বামী কে। চোখ লেগে আসছিল ঘুমে। পেটে খিদা, ভাবছে ভাত টা খেয়ে নেবে কিনা,কখন আসবে জানে না তো। উঠতে যাবে এমন সময় একটা অটোর শব্দ পেল। অটো এসে বারান্দার সামনে থামে। দরজা খুলে সামনের বারান্দায় গেল।রজব নেমে মোমেনা কে দেখে বলে,ছোট মা আব্বার বিছানা টা ঠিক করো,শরীর টা ভাল না, এখনই শুয়াই দেই। মোমেনা স্বামী কে দেখার জন্য আর দেরি না করে চিন্তিত হয়ে ঘরে গিয়ে ঢুকে বিছানা ঠিক করতে থাকে। অবাক হয় রজবের মুখে কোন দ্বিধা ছাড়া এত সহজে মা ডাক শুনে। তাহলে কি তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো
মোহজাল (পর্ব: সতেরো)

মোহজাল (পর্ব: সতেরো)

অনন্যা হক মোমেনা তার ঘরের খাটে বসে কাথা সেলাই করছে।দখিন দিকের জানালা টা খোলা।খাঁ খাঁ দুপুর।মা চলে গিয়েছে নিজের বাড়িতে। ছেলে দুটো বাইরে কোথাও আছে।ঘরে একা সে। সেলাই করতে করতে হাত থেমে যায়,দেখে জমির আসছে বাড়ির দিকে।তার ঘরের পাশের গলি দিয়ে ঢুকবে বাড়ি তে।মোমেনা বের হয়ে আসে তার সাথে কথা বলতে। জমিরের কাছেই স্বামীর খবর নেয় সে।এই কদিনে তাকে কেউ কিছু জানায়নি।ঐ মোবাইলের মাধ্যমে জমির যতটুকু জানতে পারে সেটাই সে জানে। বাইরে এসে বারান্দার কোণার দিকে এগিয়ে গিয়ে ডাকে জমির ভাই আর কোন খবর আছে?জমির এগিয়ে এসে উঠোনে দাঁড়ায়। আসেন বসেন একটু, মোমেনা বলে। -চিন্তা করে কি চেহারা করিছো ভাবী? না এখন আর বসবো না। বউ ভাত বাড়ে বসে আছে। -বউ রে খুব ভয় পান মনে হয়? -পাই তো, কিডা না পায়?এমনি দেরি হয়ে গেছে,মোবাইল করছিল। -ভাবী আইছিল সকালে।মানুষ তো ভালই,ভয় পান কেন? -নিজের দোষে পাই।দোষ আছে বুঝছো না? কি কর ঘরে একা একা?
মোহজাল (পর্ব: ষোল)

মোহজাল (পর্ব: ষোল)

অনন্যা হক সাত দিন হাসপাতালে ভর্তি রাখার পর একটু সুস্থ হলে রজব তার আব্বা কে নিজের বাসায় নিয়ে আসে।এখনও কদম আলীর অনেক কাশি,ওষুধ দিছে অনেক।খেতে হবে যতদিন ইনফেকশন না যায়। রজবের ঘর দুটো,দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে। এক ঘরে আব্বা কে রেখে অন্য ঘরে ছেলে মেয়ে নিয়ে উপর নীচ করে থাকে। অনেক বছর একা নিজের মত থেকে সবার যে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল সেখানে একটা হঠাৎ রদবদলে সবাই কিছু টা অসুবিধার মধ্যে পড়ে। রজবের বউ ফরিদা এক মুখরা,খরদরজাল নারী।নতুন কালের থেকেই তার লাজ লজ্জা কম ছিল।কারো ভাল মন্দ, সুবিধা অসুবিধা তে তার কিছু যায় আসে না।সে তো শুরু থেকেই এমন দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত ছিল না। তবুও রজব তাকে উপেক্ষা করে বাপ কে নিয়ে যায় বাসায়।পনেরো দিন হতেই ফরিদা বলে, এমন করে কতদিন চলবি,বাড়ির লোক বাড়ি দিয়ে আস।ওষুধ যা খাতি হবি কয়েই তো দিছে,এখন আর কি।কত শখ করে বিয়ে করলেন উনি,সেই বউ দেখেশুনে রাখুক। ছেলে মেয়ে নিয়ে এমন ঠাসাঠাসি ক
মোহজাল (পর্ব: পনেরো)

মোহজাল (পর্ব: পনেরো)

অনন্যা হক সকালে রজব তার আব্বা কে নিয়ে চলে যায় শহরে।মোমেনার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।চাটাই এর বেড়া টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।যাবার সময় কদম আলী শুধু বলে,ছোট বউ সাবধানে থাকবা।দোয়া কর,আমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসব। রজব কোন কথা বলেনি তার সাথে এই দু দিনে।ওরা বিদায় নিয়ে চলে গেলেও মোমেনা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। ওর মনে হয়,সে এ বাড়ির কেউ না,কদম আলীও তার কেউ না।এই সংসারে তার কিই বা অধিকার আছে বুঝতে পারে না।এতদিন যাই হোক,ওরা আসার পর থেকে এটা বেশি বুঝতে পারছে।সব কিছু তে কত জোর এদের,নিজেকে একটা দাসী বাদী ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। এই যে নিয়ে গেল,কই একবারও তো বললো না,মা তুমি চল সাথে। উনি আর ফিরে আসে কিনা,কেমন অবস্থা হয় কিভাবে জানবে সে।তবে সুস্থ হলে আটকিয়ে রাখতে পারবে না,এটা বোঝে সে।এই জন্য শুধু আল্লাহ কে ডাকা ছাড়া আর কোন গতি নেই তার। বাড়ি তে মেয়েরা আছে,রান্না করতে হবে ভেবে বাড়ির ভেতরে ঢোকে।দেখে তিন বোন বারান্দায় খাটে
মোহজাল (পর্ব: চৌদ্দ)

মোহজাল (পর্ব: চৌদ্দ)

অনন্যা হক আজকাল কদম আলীর মাঝে মাঝেই শরীর খারাপ হয়।মোমেনা চিন্তায় পড়ে যায়।যে লোক নামাজ বাদ দেয় না কোন দিন,সে আজ ফজরের নামাজ পড়তে উঠলো না। আজ ঘুম থেকে ওঠে দেরি করে।ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা কল তলায় যায়।মোমেনা কে ডাকে। মোমেনা গিয়ে দেখে বালতি খালি।বলে,খাড়ান ভরে দেই,আজ বেলা করে উঠলেন যে? -শরীর ডা ভাল না। -হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় যান,আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি। কদম আলী বারান্দার খাটে গিয়ে আবার শুয়ে পড়ে।মোমেনা দূর থেকে খেয়াল করে।তাড়াতাড়ি খাবার গুছিয়ে ঘরের বারান্দায় যায়। -কি বেশি খারাপ লাগতিছে আপনার? -হ,মাথা ঘুরায়, বসতে পারি না।ছেলে মেয়ে গুলো রে খবর দেয়া দরকার।শরীর খারাপ শুনে যদি আসে। মোমেনা ভয় পায়।কি বলে এই লোক,মাত্র দুই বছরের সংসার, এত তাড়াতাড়ি এমন কি শক্ত অসুখ করলো! বলে,এই যে খাবার আনছি,ওঠেন তো,এই সেদ্ধ ডিম ডা খান,দেখেন ভাল লাগতি পারে। -তুমি বুঝতে পারবা না,এখন আমার খাওয়া সম্ভব না।মোমেনা আরো বিচ
মোহজাল (পর্ব: তেরো)

মোহজাল (পর্ব: তেরো)

অনন্যা হক মোমেনা আজ আর কদম আলীর বিছানায় যায় না। এ পাশের খাটে শুয়ে পড়ে।নাক ডাকার আওয়াজ টা জোরে হতে থাকে, মোমেনার ঘুম আসে না।তার মনে হয়, এই সংসারে সে মেহমানের মত।কিছু যেন তার না। হঠাৎ পাশের বাড়ির জমির ভাই এর কথা মনে পড়ে।আসতে যেতে এ বাড়ির উপর দিয়ে যায়।কদম আলীর চাচাতো ভাই। সেদিন এ পথে যাওয়ার সময় তার রান্না ঘরের বারান্দার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন মোমেনা একাই বাড়ি তে।কেবলই বাজার খুলে বসেছে। জমির আলী কে বলে,কেমন আছেন ভাই? কিছু বলবেন? ভাবি কই,কয়দিন দেখি না। -সে তার বাপের বাড়ি গেছে।অনেক দিন পর গিল,থাকবি কিছু দিন।পোলাপানের পরীক্ষা শেষ তাই। মোমেনা কি বলবে,বসতে বলবে কিনা বোঝে না। এ লোক টা কে নিয়ে তার মনের ভেতরে একটা খটকা লেগেছে আগেই।চলতে ফিরতে কেমন করে যেন তাকায় তার দিকে।মাঝে মাঝে কথা বললেও ঐ চলতে ফিরতে।কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি টা তার ভাল লাগে না।তাই মোমেনা সাবধানে থাকে। আজই একেবারে কাছে এসে দাঁড়
মোহজাল (পর্ব: বারো)

মোহজাল (পর্ব: বারো)

অনন্যা হক কদম আলী ঘরে ঢোকে,কেমন যেন চেহারা টা বেশ ফ্যাকাশে লাগে দেখতে।ঘুম ঘুম চোখেও মোমেনার খেয়ালে আসে। -এত দেরি করলেন,আমার ঘুম ধরে গিছলো।নেন হাত মুখ ধুয়ে নেন,ভাত বাড়ি আমি,বলে মোমেনা রান্না ঘরে চলে যায়। ভাত খেতে বসে আজ কদম আলী খুব কম খেল।মোমেনা বলে, এই কয় টা ভাত খেলেন,কি হইছে আপনার,শরীর খারাপ নাকি? আমারে কন, জমির ভাই রে খবর দেই, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাক। যদি রাতে বেশি খারাপ করে,তখন কি করবেন,আপনার চোখ মুখের চেহারা কেমন লাগতিছে। -না,তেমন কিছু না।আজ দুই বছর হলো পোলাপান গুলো বাড়ি আসে না,আমার মনে শান্তি নেই,তাই শরীর ডাও ভাল লাগে না। কদম আলী বলে না যে, একজন কে পাঠিয়েছিল ছেলের কাছে বুঝিয়ে বাড়ি আসার কথা বলতে।সে আজ ফিরে এসে বললো,ছেলে এসব মানতেই পারবে না। বাড়িও আসবে না।সব শুনে বোঝে না কদম আলী কি করবে। মোমেনা কে নিয়ে তার সুখ, শান্তি এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। চুপচাপ ভাত খেয়ে ঘরের দিকে উঠে
মোহজাল (পর্ব: এগারো)

মোহজাল (পর্ব: এগারো)

অনন্যা হক কুপি জ্বালিয়ে চুলার কাছে মোমেনা বসে আছে।চুলায় রাতের ভাত।কারেন্ট চলে গিয়েছে। গ্রামে এমনই হয়, যাওয়া আসার ভেতরে থাকে।এ কারণে সিরিয়াল গুলো ঠিক মত দেখতে পারছে না।শহরের বাসায় সন্ধ্যায় কাজ সেরে নিয়মিত দেখতো।আপা পুরোনো টিভি টা ছেড়ে দিত ওদের জন্যই। অনেক দিনের অভ্যাস,এতটুকু বিনোদন সে বেশ উপভোগ করতো।কিন্তু এখানে কারেন্টের আনাগোনায় মেজাজ টা বিগড়ে থাকে তার। আজও ভাত চুলায় হয়ে আসছে,তখন কারেন্ট চলে গেল।উঠে গিয়ে হারিকেন টা ধরিয়ে বড় ঘরের বারান্দায় রেখে আসে।কদম আলী নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছে। পুরো বাড়ি টা একটা ভুতুড়ে বাড়ি হয়ে রয়েছে।গ্রামের বাড়িতে এমন একা থাকা বেশ কষ্টকর।ছড়ানো বাড়ি লোকজন ছাড়া মানায় না।একটা ছেলে মেয়ে নেই কদম আলীর কাছে।মোমেনা ভাবে,একজন কেউ কাছে থাকলে কি আর এই বুড়া কালে তাকে বিয়ে করে আনতো! কদম আলীর ফেরার নাম নেই।যদি ছেলে দুটো কে আনতে পারতো তাহলে বাড়ি টা এমন শুনশান লাগতো না।পুরো জী