বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আইএস নেতা, নীল প্রকাশ 'বেঁচে আছেন' - Women Words

বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আইএস নেতা, নীল প্রকাশ ‘বেঁচে আছেন’

২০১২ সালের ঘটনা। নীল প্রকাশের এক বন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, সে কি ধার্মিক? উত্তরে নীল প্রকাশ বলেন, আমি একজন বৌদ্ধ, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। বন্ধুটি তাঁর কথা শুনে প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, তাহলে তুমি বৌদ্ধ নও, তুমি বিভ্রান্ত।

সামান্য এই বাক্য বিনিময় নীলের জীবনকে বদলে দেয়। ঘটে নতুন এক অধ্যায়ের সূত্রপাত। মেলবোর্ন থেকে নীলকে নিয়ে যায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের কেন্দ্রস্থলে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নীল প্রকাশ হয়ে যান আইএসের শীর্ষ সদস্য সংগ্রহকারীদের একজন আবু খালেদ আল-ক্যাম্বোডি। অথচ এই নীলের স্বপ্ন ছিল একজন র‍্যাপ সংগীত শিল্পী হওয়ার।

বছর দেড়েক আগে, ২০১৫ সালের মে মাসে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইরাকের মসুলে এক বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন নীল। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কোন একটি দেশে নীলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, কয়েক সপ্তাহ আগে নীল নিজেকে তুরস্কের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। তার মানে, নীল বেঁচে আছে। এতদিন বহাল তবিয়তেই বেঁচে ছিলেন।

নীলের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। তার বাবা এসেছেন ফিজি থেকে। মা ক্যাম্বোডিয়ার। ২০১২ সালে কুড়ি বছর বয়সে প্রথম ক্যাম্বোডিয়া বেড়াতে যান নীল। পরে আইএসের এক প্রচারণা ভিডিওতে নীল বলেছিল, ক্যাম্বোডিয়া গিয়ে যে বৌদ্ধ ধর্ম তিনি দেখেছেন, তা তার কাছে ‘কোন মানে তৈরি করেনি’। সেবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে এসে মুসলমান ধর্ম গ্রহণে উদ্যত হন তিনি। তবে এই ধর্মটি সম্পর্কে তিনি খুব অল্পই জানতেন। পরে একদল মুসলমান বন্ধুর সাথে সময় কাটাতে শুরু করেন তিনি এবং ধর্মটি সম্পর্কে জানতে থাকেন। এক পর্যায়ে কলেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এরপরে মেলবোর্নে জুম্মার নামাজ পড়ানো হত এমন একটি স্থানীয় অবকাশ কেন্দ্রে গিয়ে হারুন মেহিচেভিচের সাথে পরিচিত হয় নীল। হারুন বসনিয়া থেকে মেলবোর্নে এসে বসতি করা এক অভিযুক্ত চরমপন্থি। এরপর থেকেই প্রকাশ মেলবোর্নের আল ফুরকান ইসলামিক সেন্টার এবং বইয়ের দোকানগুলোতে সময় কাটাতে শুরু করেন। এসব জায়গাতেই তিনি হারুন এবং অন্যান্যদের দ্বারা চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ হন।

কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়ার পর এক বছর পর্যন্ত জীবনাচরণ বদলাননি নীল, এক পর্যায়ে এ কারণে তিনি লজ্জিত হন। তার কথায়, আমি নিজেকে বললাম, এ আমি কি করছি? আমার চাকরি আছে, আমার রোজগার আছে, একটি গাড়ি আছে, ঘর আছে—তাহলে আমি কি আত্মত্যাগ করলাম? আল্লাহর জন্য আমি কি করলাম?

এরপর সবকিছু বিক্রি করে দেন নীল এবং ‘হিজরত’ করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়া হয়ে সিরিয়ার রাক্কায় প্রবেশ করেন নীল। তার ভাষায় যেটি ছিল ‘জিহাদের ভূমি’। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়াতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন নীল। এরমধ্যে একটি ঘটনায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরি নিয়ে আক্রমণ চালায় এক ১৮ বছরের তরুণ নুমান হায়দার, যাকে পরে গুলি করে হত্যা করা হয়।

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে আইএসের ১২ মিনিটের একটি প্রপাগাণ্ডামূলক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে নীলকে নুমান হায়দারের প্রশংসা করতে দেখা যায়। ওই ভিডিওতেই তিনি নিজেকে বদলানোর কাহিনী তুলে ধরেন এবং অন্যদেরকে বদলাতে আহ্বান জানান।

সূত্র : বিবিসি