‘৬৩৮ ওয়েজ টু কিল কাস্ত্রো’ - Women Words

‘৬৩৮ ওয়েজ টু কিল কাস্ত্রো’

কিউবার কিংবন্তি নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর জীবন ছিল ৯০ বছর দীর্ঘ। তারমধ্যে দেশটির রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় অর্ধ শতাব্দিকাল। তাঁর ৪৯ বছরের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ৬৩৮ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলো। বলা বাহুল্য, প্রতিবারের চেষ্টাকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি বেঁচে ছিলেন দিব্যি।
কাস্ত্রোকে হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে পরবর্তী সময়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চ্যানেল ফোর। ‘৬৩৮ ওয়েজ টু কিল কাস্ত্রো’ নামের ওই প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয় কত কৌশলে তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যে সম্প্রচার করা হয় এটি।
ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার বেশিরভাগ উদ্যোগ ছিল ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ মূলত এর নেতৃত্ব দেয়। এ সময়ে পাঁচটি ভাগে সিআইএ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র বিভাগ তাঁকে হত্যার বিভিন্ন চেষ্টা চালায়। তাঁকে কিউবার ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে নেওয়া হয় ‘অপারেশন মঙ্গুজ’ পরিকল্পনা। ৪৯ বছরের শাসনামলে পুরো সময় তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ফেবিয়ান এসকালান্তে। তাঁর তথ্যমতে, ৬৩৮ বার কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা করে সিআইএ। প্রতিটি ষড়যন্ত্র ছিল অভিনব।
এসব ষড়যন্ত্রের মধ্যে জটিল ছিল কাস্ত্রোর চুরুটে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা। চুরুটের মধ্যে যে পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা হয়, তা কেস্ত্রোর মাথা উড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
কাস্ত্রোকে দুর্বল করতে তাঁর জুতো ও চুরুটের মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য রাখা হয় একবার। যার প্রভাবে তাঁর শরীরের সব চুল পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। খাবারে বিষ রেখে হত্যার চেষ্টা তো ছিল ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার। তাঁর ব্যবহৃত কলমে বিষযুক্ত সুচ রেখে ও পোশাকে জীবাণু ছড়িয়েও হত্যার চেষ্টা চালায় সিআইএ।
তবে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ছিল স্ত্রীকে দিয়ে তাঁকে হত্যা করানোর চেষ্টা। স্ত্রী মিরতার সাথে আঁতাত করে কাস্ত্রোকে হত্যার উদ্যোগ নেয় সিআইএ। বিষযুক্ত ক্যাপসুল দিয়ে তাঁকে হত্যার ফন্দি আঁটা হয়। কোল্ড ক্রিমের কৌটায় রাখা হয় ক্যাপসুল। কিন্তু এ ষড়যন্ত্রের কথা জেনে যান কাস্ত্রো। তিনি মিরতার হাতে পিস্তল তুলে দিয়ে বলেন, তাঁকে বিষ দিয়ে নয়, সরাসরি গুলি করে হত্যা করতে। মিরতা তা পারেননি।
ফিদেল কাস্ত্রোর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেও চেষ্টার কমতি ছিল না সিআইএর। একবার এক বেতারকেন্দ্রে সাক্ষাৎকার দিতে যান ফিদেল। এ সময় স্টুডিওতে নেশাজাতীয় দ্রব্য ছড়িয়ে দেয় তারা। যার প্রভাবে অদ্ভুত আচরণ করেন ফিদেল। বিচলিত হয়ে পড়ে পুরো কিউবা। তবে সেই চেষ্টাও যথারীতি ব্যর্থ হয়।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে পানামা সফরে যান কাস্ত্রো। সেখানেও তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়। একটি মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই মঞ্চে ভাষণ ডেস্কে ৯০ কেজি বিস্ফোরকদ্রব্য রাখা হয়। তবে কাস্ত্রোর নিরাপত্তাকর্মীরা এই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। সূত্র : প্রথম আলো