শহীদ জননী জাহানারা ইমামের শেষ চিঠি - Women Words

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের শেষ চিঠি

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। এই প্রজন্মকে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি।১৯২৯ সালের ৩ মে অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে জাহানারা ইমাম জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’।

তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা  জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷ মুক্তিযুদ্ধে ছেলের  আত্মত্যাগ এবং নিজের অবদানের কারণে তিনি শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন৷

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে নাগরিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে দেশের ১০১ জন বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি  একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ’গণআদালত’ এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে।

মৃত্যুর আগে জাহানারা ইমাম মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রমে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন আমেরিকার মিশিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট শহরের সাইনাই হাসপাতালে ৬৫ বছর বয়সে জাহানারা ইমাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের শেষ চিঠি উইমেন ওয়ার্ডসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

সহযোদ্ধা দেশবাসীগণ,

আপনারা গত তিন বছর একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরোদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এই লড়াইয়ে আপনারা দেশবাসী অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের অঙ্গীকার ছিল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছেড়ে যাবো না। মরণব্যাধি ক্যান্সার আমাকে শেষ মরণ কামড় দিয়েছে। আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাই নি। মৃত্যুর পথে বাধা দেবার ক্ষমতা কারো নেই। তাই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি এবং অঙ্গীকার পালনের কথা আরেকবার আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। আপনারা আপনাদের অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণ করবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন। আমি না থাকলেও আপনারা আমার সন্তান-সন্ততিরা – আপনাদের উত্তরসূরিরা সোনার বাংলায় থাকবেন।

এই আন্দোলনকে এখনো অনেক দুস্তর পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা, নারী, ছাত্র ও যুবশক্তি, নারীসমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে আছে। তবু আমি জানি জনগণের মতো বিশ্বস্ত আর কেউ নয়। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তাই গোলাম আযম ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দায়িত্বভার আমি আপনাদের, বাংলাদেশের জনগণের হাতে অর্পন করলাম। অবশ্যই, জয় আমাদের হবেই।

জাহানারা ইমাম