ভারতীয় সাংবাদিকের মূল্যায়নে মাশরাফি - Women Words

ভারতীয় সাংবাদিকের মূল্যায়নে মাশরাফি

টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা সতীর্থদের মধ্যে যেমন জনপ্রিয়; তেমনি জনপ্রিয় সাংবাদিকদের মাঝেও। দেশি হোক আর বিদেশি হোক; সাংবাদিকদের কাছে মাশরাফি বেশ প্রিয় ক্রিকেটার। ওপার বাংলার প্রথম সারির দৈনিক এই সময় এ সাংবাদিক সব্যসাচী সরকার লিখেছেন তার মাশরাফি দর্শনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। পাঠকদের জন্য সব্যসাচী সরকারের লেখাটি তুলে দেওয়া হলো:

 
তখনও শেষ হয়নি বাংলাদেশের প্র্যাকটিস। শুরু হয়নি কোচ চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহের প্রেস মিট। এজবাস্টনের প্রেস গেটের হাত দশেক দূরেই পাওয়া গেল তাকে। মাশরাফি মুর্তজা। বাংলাদেশের নামী ক্রিকেটলেখক ও লেখক মুস্তাফা মামুনের সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত। মামুন দীর্ঘদিনের বন্ধু, দেখা হতেই ডেকে নিলেন আর বাংলাদেশ অধিনায়ককে শেষ চারে পৌঁছনোর জন্য অভিনন্দন জানিয়ে হাত বাড়াতেই বললেন, “বাংলায় কথা বলার চেয়ে ভালো আর কী আছে ?”

মিক্সড জোন হলে আলাদা কথা, এই টুর্নামেন্টে আর কোনো দেশের ক্যাপ্টেন এ ভাবে স্টেডিয়াম চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিতে পারেন ভাবাই যায় না। অথচ রাজনীতিবিদ হোক বা রুপালি পর্দার নায়ক, জনপ্রিয়তায় বাংলাদেশে মাশরফির কাছাকাছি কেউ নেই। সাকিব-তামিমও নয়। তারকাসুলভ হামবড়া ভাব একেবারে নেই। সাংবাদিকদের সঙ্গে মিশেন একেবারে বন্ধুর মতো। সহজ প্রশ্ন করলে “মিডিয়া ম্যানেজারের অনুমতি নিয়ে আসুন” বলে কাটিয়ে দেওয়া নেই, বরং যে কোনো আড্ডায় মুহূর্তে মধ্যমণি হয়ে উঠতে পারেন।

প্রশ্ন করলাম, এ বার ইংল্যান্ডে সাদা বল একদম সুইং করছে না কেন ? মাশরাফির ঝরঝরে ব্যাখ্যা, “দেখেন, এবার বলের সিমগুলো বেশ পাতলা দেখছি। নরম প্লাস্টিকের মতো। ফলে কয়েকটা ওভার পরেই সিমগুলো বসে যাচ্ছে। ফলে বোলাররা ক্রস সিমে ফেলছে। তা ছাড়া অন্যান্যবার এখানকার উইকেটে বোলারদের জন্য কিছু না কিছু থাকত। এ বার তো দেখছি বোলারদের জন্য কিছুই নেই। ”

তা হলে তো টুর্নামেন্টটাই ব্যাটসম্যানদের টুর্নামেন্ট হয়ে যাচ্ছে? মাশরাফি হাসেন, “সে তো ঠিকই বলছেন। আপনিই বলুন না, বোলারদের জন্য কী থাকছে উইকেটে ? পুরোপুরি ব্যাটসম্যানদের উইকেট। তাই এত রান হচ্ছে। সামান্য সুইং যেটা ইংল্যান্ডে বরাবর হয় তাও এবার দেখা যাচ্ছে না। ”

দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী সহ অসংখ্য ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীর বার্তা পেয়েছেন। সেমিফাইনালে পৌঁছে ইতিহাস সৃষ্টি করা নিয়ে তার যুক্তি পরিষ্কার- “অস্ট্রেলিয়ার কাছেও সুযোগ ছিল শেষ চারে যাওয়ার। আমাদের কাছেও তাই। আমরা সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। অস্ট্রেলিয়া পারেনি। ”

বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার চেয়েও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে পৌঁছনোকে আগে রাখার কথা আগেই বলেছেন বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যমকে। ব্যাখ্যাও পরিষ্কার, “আমাদের গ্রুপে উপমহাদেশের কোনো টিম ছিল না। তার উপর ইংল্যান্ডে টুর্নামেন্ট। সেখান থেকে এখানে পৌঁছনোটা কৃতিত্বের। ”

আপাতত বাংলাদেশ অধিনায়কের পাখির চোখ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। কিন্ত্ত সেমিফাইনাল বলে কোনো বাড়তি চাপ নেওয়ার ব্যাপারই নেই। বললেন, “আমরা নিজেদের ক্রিকেটটা খেলব। সেমিফাইনাল বলে আলাদা চাপের ব্যাপার নেই। ”

কথায় কথায় এক সাংবাদিক রশিদ লতিফের ভিডিও পোস্ট করে শেবাগকে আক্রমণ করার কথা তুললেন। মাশরাফি বললেন, “কে কী বলছে, বাদ দিন। শেবাগ যে সর্বকালের সেরা ওপেনারদের একজন তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমার কাছে উনি প্রথম তিনের মধ্যে থাকবেন। কী সব ইনিংস খেলেছে !”

এরই ফাঁকে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে এক ভক্তের অটোগ্রাফের আবদার মেটালেন। আলাদা সময় দিলেন এক বাংলাদেশি সাংবাদিককে। কখনও একটুও বিরক্তি নেই নেই কোনোরকম অসহিষ্ণুতা। নিয়ম অনুযায়ী টিম হোটেলে তার স্যুইট পাওয়ার কথা। সেটা প্রতিবারই কোচকে ছেড়ে দেন। আর তার হোটেল রুমের দরজা টিমমেটদের জন্য অবারিত। বহুবার এমন হয়েছে, তার রুমে আড্ডা দিতে দিতে তার বিছানাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে কেউ। মাশরাফি নিজে শুয়ে পড়েছেন মেঝেতে। ঢাকায় তার বাড়িতেও নিরাপত্তারক্ষীদের রক্তচক্ষু নেই। ভক্তরা দেখা করতে পারেন তার সঙ্গে।

মাশরাফি বা ‘ম্যাশ’ আসলে আপাদমস্তক টিমম্যান। বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে কল্পলোকের নায়ক; কিন্ত্ত এমন নায়ক যিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে নন। কথা শেষ করার সময় নিজেই বললেন, “ভালো লাগল। আবার কথা হবে। ” এটুকুই সৌজন্যই বা আজকের মহাতারকারা দেখান কোথায়? সেখানে বাংলাদেশেব মতো ক্রিকেটপাগল দেশে জনপ্রিয়তম হয়েও একেবারে আমজনতার হৃদমাঝারে মাশরফি। বাংলাদেশ ফাইনালে যাক বা না যাক, কিছু এসে যায় না। এরকম ব্যতিক্রমী চরিত্রের জন্যই না ক্রিকেট খেলাটা এত মহান!