মানবিক হৃদয়ের ব্যতিক্রমী চিকিৎসক শামীমা আখতার - Women Words

মানবিক হৃদয়ের ব্যতিক্রমী চিকিৎসক শামীমা আখতার

romena-lais-women-wordsআজ যার কথা লিখছি তিনি হলেন অধ্যাপক ডা. শামীমা আখতার। শামীম বলেই ডাকি আমরা তাকে। মানুষ মানুষের জন্যে জীবন জীবনের জন্যে। ১৯৯০ সালে আমার ছোট বোন রুনার জন্য চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। তখন শামীম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পড়তো। খবর পেয়েই শামীম তার সহপাঠীদের নিয়ে ছুটে আসলো। ক্রসম্যাচিং করার পর শামীম আর লস্কর রুনাকে দুই ব্যাগ রক্ত দিয়েছিলো।

শামীমা আখতার, সুনামগঞ্জের চিকিৎসক হারিসউদ্দিন ও হাসিনা বেগমের পঞ্চম সন্তান। অত্যন্ত মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এস সি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সব শিক্ষকরা তাকে অনেক ভালোবাসতেন। ১৯৮৩ সালে এস সি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে এস.এস.সি ও ১৯৮৫ সালে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেন। ১৯৯২সালে এম.বি.বি.এস পাশ করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। ১৯৯৪ সালে পঞ্চদশ বিসিএসএ উত্তীর্ন হয়ে সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন। বিসিএস ক্যাডার হিসেবে প্রথম পোষ্টিং ছিল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ।

এই কেন্দ্রে যোগদান ছিল তার জন্য খুবই আবেগময়। কারণ, সেখানে তার আব্বারও পোস্টিং ছিল। সেখান থেকে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি তিন জেলায় একমাত্র মহিলা চিকিৎসক হিসাবে ১৯৯৭ -১৯৯৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। খাগড়াছড়িতে থাকাকালীন তার খুব ইচ্ছে ছিল চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার। কারণ চর্ম ও যৌনরোগে মহিলা চিকিৎসক খুব বেশী ছিলো না তখন । এই বিষয়ে মহিলা চিকিৎসকের অভাবে মেয়েদের অনেক কষ্ট করতে দেখেছেন তিনি। এই লক্ষ্য নিয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। ২০০০ সালে চর্ম ও যৌন রোগে ডিপ্লোমা (ডিপ্লোমা ইন ডার্মাটোলজি অ্যান্ড ভেনেরিওলজি) প্রাপ্ত হন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) থেকে। পরীক্ষায় পাশ করে ওই বছরই সিলেট  ওসমানী মেডিকেল কলেজে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে উক্ত পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে পিজি হাসপাতাল থেকে প্রথম বারেই এফ সি পি এস ডিগ্রী পাশ করে ২০০৫ এ সহকারী অধ্যাপক হিসাবে আবার ওসমানী মেডিকেলে যোগদান করেন।

১৯৯৫ সালে ডা. মো. তারেক আজাদকে বিয়ে করেন।

সুনামগঞ্জের গর্ব, সতীশচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গর্ব  ডা. শামীমা আখতার। আমাদের নক্ষত্র। ২০০৭ সাল পর্যন্ত মোট ১২ বছর সরকারী চাকরী করার পর সেখান থেকে পদত্যাগ করে সিলেটের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব- রাবেয়া মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।।২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক পদমর্যাদায় একই প্রতিষ্ঠানে চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। ওসমানীতে থাকার সময় থেকেই শামীমা ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষক ছিলেন। পরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান এন্ড সার্জন (বিসিপিএস) এর শিক্ষক হিসাবে এফসিপিএস (চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ) এর পরীক্ষক নিয়োজিত হন। কিন্তু তখন তার আব্বা ছিলেন মৃত্যু শয্যায়। তাই এই আনন্দ আব্বার সঙ্গে ভাগ করতে না পারার দুঃখ তার মনে গেঁথে রয়েছে। এছাড়াও ২০০৮ সাল থেকে তিন রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সাংস্কৃতিক কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে নিয়োজিত।

শামীমা সময় সুযোগ পেলেই পরিবার ও বন্ধুদের সাথে নিয়ে বেড়াতে বের হন। তিনি মালয়েশিয়া, দুবাই,নেপাল ভিয়েতনাম, সিংগাপুর, মক্কা, মদিনা, জেদ্দা, আবুধাবি ও ভারত ভ্রমন করেছেন।

তার দুই সন্তানের জন্মদিন চার বছরের ব্যবধানে একই দিনে ২৯ শে ডিসেম্বরে- এটি শামীমার সুখের স্মৃতি।

‘তোমরা ভিতরে-বাহিরে, মননে ভালো মানুষ হও। নিজের কাছের মানুষ ও দূরের, সবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিও। একা না, সবাইকে নিয়ে সুখি হও। মেয়ে বলে কখনো নিজেকে দুর্বল বা কম মেধাবী মনে করবে না। নতুন প্রজন্মের কাছে শামীমার এটাই প্রত্যাশা । শামীমার জীবন আরো উজ্জ্বল ও সফলতায় ভরে উঠুক।