মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সিরীয় নারীরা - Women Words

মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সিরীয় নারীরা

পানি ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের অভাবে অবরুদ্ধ সিরিয়ায় মেয়েলি রোগ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন এদেশের নারীরা।

অন্য আরো অনেক নারীর মতো হুদাও প্রতিমাসে তার ঋতুস্রাব নিয়ে মহা আতঙ্কে থাকেন। বিষয়টি অস্বস্তিকর ও বেদনাদায়ক। ২৩ বছর বয়সী হুদা সিরিয়ার দামেস্কের কাছেই পূর্ব ঘোউটা এলাকার সাকবা শহরে অবরুদ্ধ অবস্থায় বাস করছেন।

হুদা জানান, ২০১২ সাল থেকেই যখন মেয়েলি পণ্যগুলো আর বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তিনি বেশ বিপদেই পড়ে যান।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সাকবাতে নারীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যে স্বল্পসংখ্যক পণ্য পাওয়া যায় তা আমার এবং আমার স্বামীর জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল। ফলে আমাকে পুরনো কাপড় দিয়েই কাজ সারতে হয়।”

”কিন্তু এর ফলে আমি প্রচুর সংক্রমণে আক্রান্ত হতে থাকি। সুতরাং আমি কয়েকটি স্যানিটারি প্যাড কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবং প্রতিদিন মাত্র একটি প্যাড ব্যবহার করি যাতে সেগুলো খুব দ্রুত শেষ না হয়।”

”একটি প্যাড বারবার ব্যবহার করার ফলে ছত্রাক সংক্রমণ, কিডনি ব্যথা এবং জননাঙ্গ ও মূত্রনালীতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”

”আমি নিজের চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু অর্থের অভাবে দ্রুত চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।”

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াজুড়ে ৮ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। এদের সকলেই খাদ্য, পানি, ডিজেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে ভুগছেন।

কিন্তু অবরুদ্ধ এলাকাগুলোর নারী বাসিন্দারা প্রতিমাসে স্যানিটারি প্যাড ও পরিষ্কার পানির অভাবে অতিরিক্ত সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ফলে তারা মেয়েলি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

সিরিয়ায় এখনও নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলা একটি সামজিক ট্যাবু। ফলে বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে কথা বলা নারীদের বেশির ভাগই তাদের আসল নাম গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহারের অনুরোধ করেছেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাহায্য সংগঠন বলেছে তারা অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে সরবরাহ করা স্বাস্থ্যসহায়তা প্যাকেজে স্যানিটারি প্যাডও যুক্ত করেছেন। কিন্তু নারীদের অভিযোগ, তাদের চাহিদার তুলনায় অনেক কম স্বাস্থ্যসহায়তা পাচ্ছেন তারা।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা বলেছে, ২০১৬ সালে তারা ৮৪ হাজার স্বাস্থ্যসহায়তা প্যাকেজ সরবরাহ করেছে। প্রতিটি প্যাকেজে ১০টি করে স্যানিটারি প্যাড দেওয়া হয়েছে।

সিরিয়ার ৮ লাখ ৬০ হাজার অবরুদ্ধ মানুষের মাত্র এক তৃতীয়াংশ ঋতুস্রাবের বয়সী নারী। প্রতিবছর এদের অন্তত ১ কোটি স্যানিটারি প্যাড দরকার হয়।

এদিকে যুদ্ধের তীব্রতা নারীদের ওপর এত বেশি মানসিক চাপ ফেলছে যে এর ফলে প্রায়ই তাদের মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকছে বা অতিরিক্ত রক্তপাত ঘটছে। যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অস্থিরতা এবং উদ্বেগ নারীদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
সূত্র : দ্য ইনডিপেনডেন্ট, কালের কন্ঠ