র‌্যাম্পে হাঁটলেন পাকিস্তানের সাহসী নারী মুখতার মাই - Women Words

র‌্যাম্পে হাঁটলেন পাকিস্তানের সাহসী নারী মুখতার মাই

এবার র‌্যাম্পে হাঁটলেন পাকিস্তানের মুখতার মাই। নামটি অনেকের কাছে পরিচিত । তবে মুখতারের জীবনের গল্পটা নিদারুণ কষ্টের। 

২০০২ সালে পাকিস্তানের একটি গ্রামের এক পরিবারকে অপমান করার অভিযোগ ওঠে মুখতার মাইয়ের ভাইদের বিরুদ্ধে। সেই অপরাধের বিচারে বসে গ্রাম্য সালিস। স্থানীয় আদিবাসী মোড়লরা সালিসে মুখতারকে গণধর্ষণের রায় দেন। পোশাক ছাড়া পুরো গ্রাম ঘোরানোর রায়ও দেন মোড়লরা। কি এক অদ্ভুত রায়। সেই সময় মুখতার মাইয়ের বয়স ৩০ বছর। মোড়লদের নির্দেশে বাস্তবায়ন করে ১৪ জন পুরুষ।

ওইদিন সভ্যতার বর্বর সেই ছবি দেখেছিল পুরো বিশ্ব। কিন্তু, পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। এত কিছুর পরও ভেঙে পড়েননি সাহসী এই পাকিস্তানি নারী। হার মানেননি। পিছিয়ে যাননি একটি বারের জন্যও। মোড়লদের গায়ের জোরের কাছে হার মানলেও মনের জোরে তিনিই এগিয়ে। এরপর থেকেই মোড়লদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছেন। মুখতার মাই পাকিস্তানে ধর্ষণবিরোধী একটি মুখ। বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অভিযুক্ত ১৪ জনকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। ছয় অভিযুক্তকে ফাঁসির রায় দেওয়া হলেও এখন তারা সবাই মুক্ত।

গত মঙ্গলবার করাচিতে পাকিস্তান ফ্যাশন উইক এর র‌্যাম্পে যখন লাল গালিচায় হাঁটছিলেন তখন পুরো বিশ্ব যেন তাকিয়ে ছিল তারই দিকে। এটা যেন তার ওপর চালানো নির্যাতনের চিৎকার করে জানানো এক প্রতিবাদ। তা যেন নারীর ওপর নারকীয় ঘটনারও প্রতিবাদ। সম্ভবত মুখতার মাই-ই প্রথম এমন নজির গড়লেন। এর আগে বিশ্বের কোথাও কখনো এমনটি ঘটেনি।

নারীদের অধিকার আদায় ও আশ্রয়ের জন্য একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান খুলেছেন মুখতার। পাকিস্তানের মীরওয়ালায় নারীদের শিক্ষার জন্য গড়েছেন স্কুলও।

গত মঙ্গলবার রাতে করাচিতে তিন দিনের ওই ফ্যাশন শোয়ে পাকিস্তানের শীর্ষ মডেলদের সঙ্গে, অনেক নামিদামি ডিজাইনারদের সামনে ক্যামেরার ক্লিকে প্রথমে র‌্যাম্পে হাঁটতে একটু ইতস্তত করছিলেন তিনি। ৪৪ বছর বয়সী এই নারীর পোশাকের নকশা করেছেন রোজিনা মুনিব। স্কার্ফ দিয়ে মাথায় চুল ঢেকে হালকা সবুজ জামা পরে হাঁটেন তিনি। পাশের অন্যদের চেয়ে তার পোশাকটি একটু আলাদাই।

নিজের এই অভিব্যক্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এক একটা পদচারণা যদি অন্যদের সাহস জোগায়, নারীদের উৎসাহ দেয়, তাহলে আমি তা বারবার করতে চাই। এটা করতে পেরে আমি খুশি।’

ডিজাইনার রোজিনা মুনিব বলেন, তিনি র‌্যাম্পে মাইয়ের এই উপস্থিতির মধ্য দিয়ে জনগণকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন। সেই বার্তা হলো, ‘যদি আপনার সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, সেখানেই জীবনের শেষ নয়।’

মুখতার মাই বলেন, ‘যারা আমার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছেন আমি সেসব নারীদের কণ্ঠস্বর হতে চাই। বোনদের প্রতি আমার বার্তা হলো যে, আমরা দুর্বল নই। আমরা একটি হৃদয় এবং মস্তিষ্ক আছে, আমরা চিন্তা করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বোনদের বলতে চাই অবিচারের মুখে পড়লে বা শিকার হলে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চিত আমরা একটি বিচার পাব।’

রেশমা কোরেইশি নামে ভারতে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হওয়া এক নারী দুঃসহ জীবন কাটিয়ে ফ্যাশন শোতে মডেল হলেন কয়েক দিন আগে।

সূত্র : দ্য ইনডিপেনডেন্ট, কালের কন্ঠ