মেয়ে, নি‌জের নিরাপত্তার ব্যূহ নিজেই তৈরী করো - Women Words

মেয়ে, নি‌জের নিরাপত্তার ব্যূহ নিজেই তৈরী করো

তন্বী ওয়াহাব

রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। পাশ দিয়েই রিকশা চলে গেল। ফিল করলাম রিকশা অনেকদূর চলে গেলেও রিকশা যাত্রী অনেক কায়দা করে শরীরকে মুচড়িয়ে দেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অটোতে বা সিএনজিতে উঠেছেন, চালকের সামনে আয়না দুটো এমনভাবে সেট করা যাতে করে পেছনের নারীযাত্রীর শরীরের কিছু নির্দিষ্ট অংশ দেখা যায়। যার কিনা রাস্তার চাইতে আয়নার দিকেই সমস্ত মনোযোগ আটকে রয়েছে। এরকম আরো কয়েকশত উদাহরণ দেয়া যাবে। আর এগুলো একটা মেয়ের জন্য নিত্যদিনকার ঘটনা। যাকে ছুঁয়ে না, ধরে না, প্রতিনিয়ত চোখ দিয়ে ধর্ষিত হতে হয়। আচ্ছা বলুন তো এই উৎকট, বিবেকবর্জিত মানুষরূপী জন্তুগুলোর জন্য কি কোন চিড়িয়াখানা রয়েছে?

আপনি হয়তো বলতে পারেন, আরে ওই মেয়েতো পর্দা করে নাই। ওরে যে সত্যি সত্যি ধর্ষণ করে নাই এটা ওর কপাল। ধর্ষণ নামক একটা জঘন্য ক্রাইমকে যদি আপনি ধর্মীয় বিধি-নিষেধ দিয়ে জাস্টিফাইড করতে চান তাহলে আপনাকে গিলোটিনে শিরোচ্ছেদ করে মেরে ফেলা উচিত। একটা মেয়ে কখনো জিন্স, মিনি স্কার্ট, বিকিনি পড়ার কারণে ধর্ষিত হয় না। সে ধর্ষিত হয় কারণ তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে। যে কোন কাজেই হোক কিংবা অকারণেই হোক কোন মেয়ে লেট নাইট বাইরে থাকতে পারে। সে কিন্তু ধর্ষিত হতে বের হয়নি। সে ধর্ষিত হয় কারণ তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে। একজন প্রস্টিটিউট, যার জীবিকার প্রধান উপায় তার শরীর। সেখানেও যদি জোর-জবরদস্তির ব্যাপার চলে আসে সেটাও কিন্তু ধর্ষণ। প্রস্টিটিউট মানে এই না যে আপনি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার কামবাসনা পূর্ণ করবেন। আমার একটা প্রশ্ন আছে যদি আমার চলা-ফেরার জন্যই আমাকে ধর্ষিত হতে হয় বা আপনার টেস্টোস্টেরণ হরমন ক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে আপনারা যখন হঠাৎ চলার পথে থমকে দাঁড়িয়ে প্যান্টের জিপার খুলে অথবা লুঙ্গি তুলে অর্ধউলঙ্গ হয়ে রাস্তার পাশে আপনার পৌরুষ দণ্ড বের করে প্রাকৃতিক কর্ম করতে বসে যান তখন কি কোন মেয়ে আপনাকে গিয়ে উত্ত্যক্ত করে??

আমি জিন্স পড়লে আমি হোর, আমি অনেক রাত অবধি  বাইরে থাকলে আমি একজন প্রস্টিটিউট, আমি ফ্রেণ্ডলি হলে আমি স্লাট, কিন্তু আপনি আপনার দৃষ্টি সংযত না করে কোন মেয়ের বডি মেজার করলে আপনি একজন গর্বিত পুরুষ। রাতের অন্ধকারে কোন অনাঘ্রাতার উপর সওয়ার হলেও আপনি একজন গর্বিত পুরুষ। সাব্বাস!! এই না হলে আপনি পুরুষ!! আচ্ছা, এগুলা বাদ দিলাম। একটা ছয় বছরের বাচ্চা কেন আপনার জন্য সুড়সুড়ির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলতে পারবেন? যার নিজের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কেই কোন পরিষ্কার ধারণা নেই তাকে কেন আপনার শিকারে পরিণত হতে হয়? সত্যিটা জানেন কি, এই পৃথিবীতে খুব কম মেয়ে শিশুই আছে যারা এ্যাবিউজিং এর শিকার হয়না। আমরা বলি, চ্যারিটি বিগিনস এ্যাট হোম। সত্যটা হলো, এ্যাবিউজিং বিগিনস এ্যাট হোম। একটা মেয়ে তার আত্মীয়র কাছেও নিরাপদ না। বলা হয়ে থাকে কুৎসিত মেয়েরা নাকি বাড়ির মতোই নিরাপদ। হাসতে হয় এই ভেবে যে কিছু কিছু মানুষের নাকি কুৎসিত মেয়েদের প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ থাকে। এই ধরণের বাসনার হয়তো মেডিক্যাল সায়েন্সে কোন টার্মিনোলজি থেকে থাকবে।

সবচেয়ে রূঢ় সত্যটা হচ্ছে, এই পৃথিবীতে একটা মেয়ে যতোদিন বেঁচে থাকবে ততোদিন তার জন্য কোন নিরাপদ জায়গা নেই। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায় তখন নিজের নিরাপত্তার ব্যূহ নিজেকেই তৈরী করতে হয়। তারপরও যদি নিজেকে রক্ষা করা না যায়, তবে মৃত্যু কখনও সমাধান হতে পারেনা। ইউ হ্যাভ টু ওয়্যার দ্যা শিল্ড অব বোল্ডনেস!!!! সমাজ তোমার বিপরীতে চলে যাবে, পুরো পৃথিবী তোমার বিপরীতে চলে যাবে কিন্তু তোমার বোল্ডনেস তোমার সাথে থাকবে।

so girls what do you want to wear?
A fairy gown, a diamond necklace or the BOLDNESS?
The choice is up to you.