নাসিরনগরের ওসি প্রত্যাহার, হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি - Women Words

নাসিরনগরের ওসি প্রত্যাহার, হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায়  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল করিম জানান, আবদুল কাদেরকে প্রশাসনিক কারণে প্রত্যাহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, এখানকার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে। পরে নাসিরনগর গৌরমন্দিরে এক সমাবেশে রানা দাশগুপ্ত এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, নাসিরনগরে যা ঘটেছে, সেটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা পরিকল্পিত ঘটনা। এই এলাকায় ৪৪ হাজার হিন্দু ভোটার রয়েছে। তাঁরা যাঁদের ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি করেছেন, সেই জনপ্রতিনিধি আজ কোথায়। গত চার দিনে তিনি একবারও এখানে আসেননি।

হিন্দুদের উদ্দেশে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এরপর তিনি (জনপ্রতিনিধি) যদি এখানে আসেন, তাহলে আপনারা কালো পতাকা প্রদর্শন করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ হাজার, ১০ হাজার বা ২০ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এ ঘটনা তদন্তে আমরা সুপ্রিম কোটের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি দাবি করছি।’

এ সময় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, জয়ন্ত সেন, জে এল ভৌমিকসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।

আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ঘটনাস্থলের মন্দির পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

সাংবাদিকদের সুলতানা কামাল বলেন, এখানে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কাজেই তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে তাতে সত্য উঠে আসবে না। এ কারণে তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা নিরপেক্ষ নাগরিকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, হিন্দুদের মন্দির-বাড়িঘরে যে হামলা হচ্ছে, তা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। যারা এসব হামলা করে, তারা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

সুলতানা কামাল বলেন, এখানে কারা সমাবেশ করেছে, কারা অনুমতি দিয়েছে, সেগুলো সবার জানা। তাহলে কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বত্র রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। ১৯৭৫-এর পর থেকেই তারা শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের যাঁরা শক্তি, তাঁরা যেন কোথাও আপস না করেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি আজ ঘটনা তদন্তে নাসিরনগরে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে তারা কথা বলেছে।

সাংবাদিকদের এনামুল হক চৌধুরী বলেন, একাত্তরে যেভাবে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গেও তার মিল রয়েছে। এখানে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কেন, কী কারণে এখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো।

সূত্র: প্রথম আলো