লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলা, তিন হামলাকারীসহ নিহত ১০ - Women Words

লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলা, তিন হামলাকারীসহ নিহত ১০

ম্যানচেস্টারের হামলার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার লন্ডন ব্রিজ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাতজন।স্থানীয় সময় শনিবার রাতের এই হামলায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৮ জন।পুলিশের গুলিতে সন্দেহভাজন তিন হামলাকারী নিহত হয়েছেন। নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে এ হামলার ঘটনা ঘটলো। খবর বিবিসির।

লন্ডনের কেন্দ্রে ব্যস্ত লন্ডন ব্রিজে পথচারীদের ওপর দ্রুত গতির একটি ভ্যান উঠিয়ে দেয় সন্দেহভাজন  সন্ত্রাসীরা। এর পরপরই তারা সাদা রঙের ওই ভ্যান থেকে ছুরি হাতে বেরিয়ে আসে এবং কাছের বারা মার্কেট এলাকায় সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও বার রয়েছে।

ব্রিটিশ পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের প্রধান মার্ক রাউলি জানিয়েছেন, হামলা শুরুর ৮ মিনিটের মাথায় বারা মার্কেট এলাকায় তিন হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।

হামলাকারীদের শরীরে ক্যানিস্তারের মত কিছু বাধা দেখে প্রথমে সুইসাইডাল ভেস্ট বলে ভাবা হলেও পরে দেখা যায় সেগুলো ভুয়া। 

দ্য ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ বলছে, তাঁদের একজন কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার পরপরই পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে।  লন্ডন ব্রিজ ও লন্ডন ব্রিজ রেল স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানান, লন্ডন ব্রিজে হামলার পর তাঁরা ভ্যান থেকে কয়েকজনকে বের হয়ে বারা মার্কেটের দিকে যেতে দেখেছেন। পরে ওই এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়। কাছাকাছি সময়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হামলাকারীর একটি ছবি পোস্ট করা হয়। তাতে দেখা যায়, একটি পানশালার বাইরে সন্দেহভাজন এক হামলাকারী মাটিতে পড়ে আছেন।

লন্ডন ব্রিজ এলাকার পানশালাগুলোর এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, তিনি তিনজন হামলাকারীকে চারজনকে ছুরিকাঘাত করতে দেখেছেন।

লন্ডনের অ্যাম্বুলেন্স সেবা সূত্রে জানা গেছে, ৪৮ জন আহতকে পাঁচটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

হামলার সময় লন্ডন ব্রিজে অবস্থান করছিলেন বিবিসির সাংবাদিক হলি জোনস। তিনি বলেন, একটি ভ্যান ঘণ্টায় প্রায় ৫০ মাইল গতিতে এসে কয়েকজনকে আঘাত করে। তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যানের চালক ডানদিকে ঘুরে গিয়ে পাঁচ থেকে ছয়জনকে ধাক্কা দেয়। আমার সামনে ভ্যানটি দুজনকে এবং পেছনে তিনজনকে ধাক্কা দেয়।’

জোনস আরও বলেন, তিনি দেখেছেন পুলিশ একজনকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করছে। আহতদের মধ্যে ফরাসি এক নারীও রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন । তিনি এটিকে ভয়ংকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমবের রাড বলেন, এই হামলা ‘ভয়ংকর’। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে যারা শনিবারের সন্ধ্যা উপভোগ করছিলেন তাঁদের লক্ষ্য করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, আমরা বিস্তারিত জানি না। তবে লন্ডনের সাধারণ জনগণ ও পর্যটকদের ওপর এটি কাপুরুষোচিত হামলা। শনিবার সন্ধ্যায় আনন্দ করার সময় তাঁদের ওপর এই হামলা চলে। তিনি এই হামলার নিন্দা জানান।

এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলার ঘটনা তদন্তে ও হামলাকারীদের বিচারে সব ধরনের সহায়তা দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত ২২ মে ম্যানচেস্টারে কনসার্টে আত্মঘাতী হামলায় ২২ জন নিহত হন। ইসলামিক স্টেট ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল।

গত ২২ মার্চ ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পথচারীদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ায় পাঁচজন নিহত ও ৪০ জন আহত হন।। এ ছাড়া পার্লামেন্টের বাইরে পুলিশের এক কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ২০০৫ সালের ৭ জুলাই। সেদিন লন্ডনের চার জায়গায় একসঙ্গে আত্মঘাতী হামলায় ৫২ জন নিহত হন।

রয়টার্স জানিয়েছে, ইসলামিক স্টেট শনিবার ইনস্ট্যন্ট ম্যাসেজিং সার্ভিস টেলিগ্রামে একটি বার্তা ছাড়ে, যেখানে রোজার মাসে ট্রাক, ছুরি বা বন্দুক- যা পারে তাই নিয়ে ‘ক্রসেডারদের’ ওপর হামলা চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের অনুসারীদের।