জীবন দিয়ে বাল্যবিয়ের মাশুল দিলেন কুলসুম - Women Words

জীবন দিয়ে বাল্যবিয়ের মাশুল দিলেন কুলসুম

নওগাঁর সাপাহারে বাল্যবিয়ের বলি হলেন কুলসুম। অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণের পর গর্ভপাতের কারণে মারা গেলেন তিনি। হতভাগ্য কুলসুম উপজেলার পাতাড়ী ইউনিয়নের পাতাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে আসছিল কুলসুম। এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি সংস্থা বিডিও, বিএসডিওর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের স্পন্সর শিশু সদস্যও ছিল সে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় দরিদ্র পরিবারের শিশুটির ওপর নজর পড়ে পার্শ্ববর্তী তিলনী গ্রামের উকিল মণ্ডলের ছেলে আব্দুল করিমের (২৫)। তিনি ঢাকায় চাকরি করার সুবাদে বিয়ের প্রস্তাব দেন কুলসুমের মা-বাবার কাছে। শিক্ষিত ও চাকরিজীবী জামাই পাওয়ায় কুলসুমের মা-বাবাও রাজি হয়ে যান এ বিয়েতে। কুলসুমের মতের বিরুদ্ধেই বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।

বিয়েতে বাধ সেঁধে বসে এনজিও সংস্থা বিডিও, বিএসডিও। তাদের বিকাশ কেন্দ্রের স্পন্সর শিশু সদস্য হওয়ার কারণে তাঁরা কিছুতে এ বিয়ে হতে দেবেন না বলে তার মা-বাবাকে সাফ জানিয়ে দেন। দরিদ্র বাবা রফিকুল কারো কোনও কথার তোয়াক্কা না করে বিয়ের পর মেয়ের পিরিয়ড না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে তার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করবে শর্তে কুলসুমকে বিয়ে দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। শর্ত মোতাবেক বিয়ের পর কুলসুম থেকে যায় তার বাবার বাড়িতে। কিন্তু বিয়ের পর কুলসুমকে তার কর্মস্থল ঢাকায় নিয়ে যেতে উঠে পড়ে লাগেন স্বামী আব্দুল করিম। একপর্যায়ে কুলসুমকে তাঁর স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেন বাবা-মা। কিন্তু স্ত্রীর পিরিয়ড না হওয়ায় অপ্রাপ্ত বয়সে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে থাকেন রফিকুল। এক সময় কুলসুমের পিরিয়ড চালু হয় এবং গর্ভে সন্তান ধারণ করেন।

শিশু কুলসুমের পেটের বাচ্চার বয়স যখন সাত মাস তখনই জামাই তার স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে আসেন তিলনী গ্রামে। ঈদের পরদিন তিনি স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাতাড়ী গ্রাম থেকেও বেড়িয়ে যান। এরপর স্বামী ও শ্বশুরের বাড়িতে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে কুলসুম।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) কুলসুম পেটের ব্যথায় কাতর হলে এক সময় তার পেট থেকে সাত মাসের গর্ভপাত হয়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললে গর্ভপাতের পর মেয়েদের এরকম রক্তপাত হয়ে থাকে বলে জানান কুলসুমের শাশুড়ি মেজলা বেগম। বিকেলে কুলসুম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অবস্থা বেগতিক দেখে শ্বশুর বাড়ির লোকজন কুলসুমকে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগে পথেই মারা যান কুলসুম।

কুলসুমের এই অকাল মৃত্যুতে এলাকার শোকের ছায়া নেমেছে। বাল্যবিয়েই এর জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন তারা।

পাতাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মুকুল মিয়া বলেন, তাঁকে এ বিষয়ে কেউ জানায়নি।

সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলাম শাহ বলেন, তিনিও এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরীও একই বক্তব্য দেন। সূত্র : কালের কণ্ঠ