স্বামীর হাতে ধর্ষণ: বাংলাদেশি এক নারীর অভিজ্ঞতা - Women Words

স্বামীর হাতে ধর্ষণ: বাংলাদেশি এক নারীর অভিজ্ঞতা

বৈবাহিকসম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণকে জাতিসংঘ ভয়াবহ ধরনের পারিবারিক সহিংসতা বলে মনে করে। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এনিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?

বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন এমন নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, স্বামী দ্বারাও যে ধর্ষণ সম্ভবসেটি সামাজিকভাবেওএকটি অদ্ভুত ধারনা বলে বিবেচিত হয়। তাছাড়া, বাংলাদেশের কোন আইনেই বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণ বিষয়টিঅপরাধ হিসেবে চিহ্নিত নয়।
নিজেদের অধিকার নিয়ে দিন দিন সরব হচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা। কিন্তু স্বামীর হাতে ধর্ষণের ইস্যুটি এখনও কতটাগুরুত্ব পাচ্ছে সমাজে?
স্বামীর কাছে দিনের পর দিন যৌননির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন এক নারী বিবিসিরকাছে তার অভিজ্ঞতার কথাবলতে রাজী হন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে।ফলে, এই নারীর প্রকৃতনাম–পরিচয় তার অনুরোধে আমরা গোপনরাখছি।
বেশ লম্বা সময় প্রেম করে পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলেন নাসরিন (ছদ্মনাম)। তবে মাত্রমাসখানেকের মতোটিকেছিল ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার সেই আনন্দ।
খুব শীঘ্রই নাসরিনের মোহ কেটে গেলো যখন বুঝতে পারলেন স্বামী তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক চান। আর তাতেসায়না দিলেই জুটত ভয়াবহ নির্যাতন।
“যখন তার ইচ্ছে হতো তখনই আমি বিছানায় যেতে বাধ্য হতাম। ঘরে আমার মা থাকতো, ছোটএকটা ভাই থাকতো। নাবললে সেপ্রচণ্ড মারধোর করতো। সে আমার অসুস্থতাওমানত না। আমার যখন পিরিয়ড হতো তখন আমি একটু হাফছেড়ে বাঁচতাম। ভাবতাম হয়ত কয়েকটা দিন আমি টর্চারের হাত থেকে বেঁচে যাবো।”
দৈহিক ও মানসিকভাবে ভয়াবহপর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নাসরিন। তিনি বলেন, স্বামীর সঙ্গে দেড় বছরের মাথায়বিচ্ছেদের এটিই ছিল মূল কারণ।
উচ্চশিক্ষিত এবং প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত এই নারী বৈবাহিকসম্পর্কের মধ্যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণবলে মনে করেন।

নারীরাএনিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়
কিন্তু বিবিসির সাথেআলাপকালে আরওকজনএইধারণাটিই বুঝতেইপারলেননা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একনারীবলেন, “যদিআমিনাকরি, তবুওও(স্বামী) আমাকেসবকিছুকরতেপারবে।“
কিন্তু সেই আচরণকিসঠিক? এইপ্রশ্নে ঐনারীপ্রথমেবললেন– “না, ঠিকনয়।“। কিন্তু কিছুক্ষণ পরইবললেন, “মানুষেবলেস্বামীতো এরকমকরতেইপারে।“
বৈবাহিক সম্পর্ক থাকাকালীন স্বামীর হাতে ধর্ষণ– বিষয়টি বেশিরভাগের মানুষের কাছেপরিষ্কার নয়।এনিয়েকথাবলতেআগ্রহীমানুষওখুঁজেপাওয়াও দুষ্কর।
অধিকার বিষয়ক সংগঠনআইনওসালিশকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নীনাগোস্বামী বলেন,তাদেরকাছেএবিষয়নিয়েকোনোনারীঅভিযোগকরেননা।

“আমাদের কাছে যারা আসেন তারা সুনির্দিষ্টভাবে এমন অভিযোগ করেন না। কিন্তু পারিবারিক সহিংসতা বামারধোরের অভিযোগনিয়ে কথা বলার সময় তারা ম্যারিটাল রেপের কথাও বলেন। তাদের সাথে কথা বলার পর কিন্তুভয়াবহতাটাধীরে ধীরে বের হয়।”
বাংলাদেশেরআইনকী বলে
নীনা গোস্বামী বলছেন, বাংলাদেশের কোন আইনেই বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণ বিষয়টি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিতনয়।

বাংলাদেশের কোন আইনেই বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণ বিষয়টি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত নয়: নীনা গোস্বামী, আইন ও শালিশ কেন্দ্র

“বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সও যে রেপ, ম্যারিটালরেপ বলতে যা বোঝায় – সেটারকোন সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা নেই এবং সেখানে কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। ফলে আমরা তার প্রতিকারও দিতেপারিনা।”
বাংলাদেশে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন যাবত বিষয়টিকে পারিবারিক সহিংসতাহিসেবে স্বীকৃতির জন্যে আন্দোলন করেছে।
বাংলাদেশে সরকারি হিসেবেই ৪৭ শতাংশ মেয়ের১৮ বছরের নিচে বিয়ে হয়। অপরিপক্ব শরীরে তাদেরও একইঅভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
নীনা গোস্বামী বলছেন, “এটা নিয়ে সরকার যেমন আগ্রহ দেখায়নি তেমনি শুধু সরকারকে দোষ দিলে হবে না, এটানিয়ে যখন পাবলিক ডিসকাশন হয়েছে সেখান থেকেও খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা