সিলেটে ‘বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব’ এ গুরুসদয় দত্ত চত্বরে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী চারু ও কারু পণ্য। বিচিত্র পণ্যের সম্ভার আর সুন্দর ডেকোরেশনের জন্য প্রথম দিন থেকেই এ চত্বরে দর্শকের সমাগম বেশি। এই প্রদর্শণীর নাম দেয়া হয়েছে কারুমেলা।
শিল্পীদের শ্রমে আর ঘামে ভেজা এসকল চারু ও কারু পণ্যে ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের কৃষ্টি, বাঙালি সংস্কৃতি। এখানে রয়েছে কুষ্টিয়ার একতারা ও দোতারা, ঝিনাইদহের বাঁশি ও শোলা, সিলেটের মনিপুরি বয়নশিল্প ও শীতল পাটি, সিরাজগঞ্জের গামছা, লুঙ্গি ও শাড়ি, কুমিল্লার খাদি, নারায়নগঞ্জের হাতপাখা ও কাঠ শিল্প, ঢাকার ধাতব শিল্প, উল ও পাটজাত পণ্য, শঙ্খ, রাজশাহীর পোড়ামাটির কারুশিল্প ও শখের হাড়ি, রাজশাহীর লহরি কাঁথা, মাগুরার শোলার মালা, বরিশালের মৃৎশিল্প, নারায়নগঞ্জের জামদানি, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির তাঁত, সাভারের ধাতব শিল্প, যশোরের নকশীকাঁথা, ময়মনসিংহের কাগজ শিল্পকর্ম এবং টাঙ্গাইলের শাড়ী ও বাঁশের কাজ।
ঝিনাইদহের শোলা শিল্পী গোপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। শোলা কাঠ থেকে তিনি তৈরি করেন শিল্পকর্ম। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শোলা শিল্পীর খ্যাতি অর্জন করেছেন। গোপেন্দ্রনাথ জানান, তাঁর তৈরি তাজমহলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একটি
তাজমহল বানাতে সময় লাগে দুই সপ্তাহ, যা ৩০০০ টাকায় ও বিক্রি হয়ে থাকে। ময়ূরপঙ্খি নৌকার দাম ৫০০০ টাকা, আর চড়ুই, দোয়েলের মূল্য ৫০ টাকা। প্রতি বছর বৈশাখী মেলায় ঢাকার হোটেল সোনারগাঁতে স্টল দেন তিনি। বিদেশীরা শোলার তৈরি শিণ্প কিনে নিয়ে যান।
তিনি আরও জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় ২০১১-১২ সালের দিকে তিনি জাপান ঘুরে এসেছেন। সেখানে ছিলেন ৪৯ দিন।ময়মনসিংহের কাগজ শিল্প নিয়ে কথা হলো মো. আরিফুল আজাদের সঙ্গে। তিনি বললেন, কাগজ শিল্পে শ্রমও বেশি দিতে হয়, পণ্যগুলোর দামও বেশি। প্রাকৃতিক কাগজ থেকে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ষ্টেশনারি ও উপহার সামগ্রী।
হরিদাস সাহা জানালেন, একটি ডায়েরি বানাতে আড়াই পৃষ্ঠা কাগজ লাগে, প্রতিটি পৃষ্ঠার দাম ১৭ টাকা। ডায়েরি বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। তাছাড়া খবরের কাগজ থেকে তৈরিকৃত ব্যাগের দাম ৪০০ টাকা। ১২০ গজ খবরের কাগজের রশি থেকে তাত বুনে এই ব্যাগ বানানো হয়।
তিনি বলেন, এই পণ্যগুলো সাধারণত বিক্রি হয় আড়ং এবং বিদেশে রফতানি করা হয়।
সাধারণ কাগজ থেকে তৈরি করা হয় হাতি। হাতি বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে হরিদাস সাহা জানান, প্রথমে আটাজাত গাম বা আঠায় কাগজ ভিজানো লাগে। তারপর মাপ মত কাটের ডায়াসে লাগানো হয়। পরে শুকাতে হয়। এই প্রক্রিয়া চলে ৭-৮ দিন।
মনিপুরি বয়নশিল্পের সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে দেশ-বিদেশে। শোলা, সিলেটের মনিপুরি বয়নশিল্প বিষয়ে মোংপকলেই সিনহা জানান,সিলেট শহর ও মৌলভীবাজার জেলার শতাধিক দক্ষ মণিপুরি তাঁতশিল্পীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ‘মোংরাই’ নামের টেক্সটাইল। ফলে মণিপুরি নারীরা হয়ে উঠেছেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী।
নারায়ণগঞ্জের চিত্রিত কাঠের পুতুলগুলো দেখতে খুব আকর্ষণীয়। বিভিন্ন ধরণের কাঠশিল্পের মূল্য ২০০ থেকে ১০০০০ টাকা বলে জানালেন বিরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা আর সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এলাকাতেই এগুলো বিক্রি করা হয়, বললেন তিনি।