পদত্যাগ করলেন ভারতের তৃতীয় লিঙ্গের অধ্যক্ষ - Women Words

পদত্যাগ করলেন ভারতের তৃতীয় লিঙ্গের অধ্যক্ষ

পদত্যাগ করেছেন ভারতের তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম এবং একমাত্র অধ্যক্ষ মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। পদত্যাগের সময় সহকর্মী-স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের অসহযোগিতার কাছে ‘হেরে যাওয়া’র কথাই বলেছেন কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের শীর্ষ ব্যক্তি। যদিও রূঢ় আচরণ ও অসহযোগিতামূলক মনোভাবের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা মানবীর দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তাঁক করেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়াব্লুমস এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মানবীর পদত্যাগের খবরটি নিশ্চিত করেছে।

৫১ বছর বয়সি মানবী ১৮ মাস আগে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিলেন কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে। ভারতে সৃষ্টি হয়েছিল লিঙ্গ-বৈষম্যবিরোধিতার অনন্য এক ইতিহাস। ইন্ডিয়া ব্লুমসের খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা মানবী সহকর্মী-স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের অসহযোগিতাকে কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিবিসি জানিয়েছে, নিজের পদত্যাগকে ‘হেরে যাওয়া’ বলে মন্তব্য করেছেন মানবী। নিজের লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে বিরামহীন হয়রানির কারণে ১৮ মাস দায়িত্ব পালনের পর চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আক্রমণের অভিযোগ তুলে কলেজটির দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তিনি মামলাও করেছেন।

তবে ভিন্ন কথাও শোনা গেছে। মানবীর শিক্ষার্থী-সহকর্মীরা ইন্ডিয়া ব্লুমসের কাছে অভিযোগ করেছেন, মানবীর আচরণ রূঢ় এবং অসহযোগিতামূলক। অন্যান্য শিক্ষকদের বক্তব্যের সূত্রে বিবিসি বলছে, লৈঙ্গিক পরিচয় নয়, তার প্রশাসনিক নীতির বিরোধিতা করেছিলেন তারা। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, কলেজে তার পরিচালনা পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন তারা।

ইন্ডিয়া ব্লুমস সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মানবীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে।

২০১৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের জন্য সংখ্যালঘু অধিকারসহ শিক্ষা, চাকরি ও স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পথ সুগম করে। তখন থেকেই কিছু কিছু কলেজ তাদের আবেদন ফর্মে তৃতীয় লিঙ্গের অপশন চালু করেছিল। সেই প্রগতিপন্থী সিদ্ধান্তেই অধ্যক্ষ হতে সমর্থ হয়েছিলেন মানবী।

ভারতে বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের প্রায় ৫ লাখ মানুষ সামাজিকভাবে ভীষণ পদুর্যস্ত। বরাবরই অবহেলার শিকার। লৈঙ্গিক-অসমতার আর্গল ভেঙে মানবীর অধ্যক্ষ হওয়ার ঘটনা সে কারণে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দুদিক থেকেই ছিল একটি মাইলফলক। তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত কেউই আগে ভারতে এরকম কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আসীন হননি। আর তাই এ অর্জনে কেবল তিনি নিজেই নন, অনেকেই ছিলেন উচ্ছ্বসিত। মানবীর ফেইসবুক পেজও ভরে গিয়েছিল অগণিত অভিনন্দন বার্তায়। এরআগে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যের একটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন।

তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের অধিকার অর্জনের আন্দোলনেও মানবী একজন পরিচিত মুখ। ২০০৩ সালে লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচার করেন তিনি। এরপর থেকেই তার জীবনে নেমে এসেছিল দুর্দশা।নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। পশ্চিমবঙ্গে পরিচয়ের স্বীকৃতি পেতে ৫ বছর লেগেছিল তার।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন