খুনের ঘটনার মুহূর্ত সরাসরি ফ্রেমবন্দি করার অভিজ্ঞতা খুব কম পেশাদার আলোকচিত্রীর হয়। বিশেষ করে হত্যার পরপরই আততায়ীর প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ক্যামেরায় ধরার নজির খুব কম। সেই বিরল কাজটি করেছেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটোগ্রাফার বুরহান ওজবিলিচি। তুরস্কে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কার্লভ খুন হন তখন আততায়ীর ছবিগুলো ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি। যা এখন পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে গেছে। আঙ্কারার ওই আর্ট গ্যালারিতে ওজবিলিচির তোলা ছবিতে দেখা যায়, রুশ রাষ্ট্রদূতকে খুন করার পর সে জোরে জোরে চিৎকার করছে এবং দুই হাত উপরের দিকে তুলে আকাশে তার পিস্তল তুলে ধরছে। সেই মুহূর্তের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন নিজের ব্লগে-
‘অবশ্যই আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বন্দুকধারী আমার দিকেও ঘুরে দাঁড়াতে পারে, এই আশঙ্কা তো আমার ছিলই। আমার চোখের সামনে দেখলাম একটা জীবন ঝড়ে পড়লো।’
গ্যালারিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন কার্লভ। তখন পুলিশের সদস্য মেভলুত মের্ট আলটিনটাস তাকে গুলি করে হত্যা করে। এসময় সে ডিউটিতে ছিলো না। তুর্কী সংবাদ মাধ্যম বলছে, সে ছুটিতে ছিলো।
ওজবিলিচি লিখেছেন, অফিস থেকে তার (ওজবিলিচি) বাড়িতে যাওয়ার পথেই পড়ে ওই গ্যালারি। তিনি এখানে ঢু মেরেছিলেন এই আশায় যে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে বর্তমান সম্পর্কের কথা তুলে ধরার কিছু ছবি হয়তো তিনি এখানে পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তিনি লিখেছেন, “তার পরিবর্তে আমি চরম এক বিশৃঙ্খলার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে গেলাম।
দাঙ্গা পুলিশের ২২ বছর বয়সী সদস্য আলটিনটাস যখন তার হাতে খুন হওয়া রুশ রাষ্ট্রদূতের মৃতদেহের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো, তখন সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে ছুটোছুটি করতে শুরু করে। বন্দুকধারী আততায়ী তখন আরবি ও তুর্কী ভাষায় চিৎকার করতে থাকে। সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে তখন সে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে।
ওজবিলিচি লিখেছেন, লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। কেউ কেউ খাম্বার পেছনে গিয়ে আশ্রয় নেয়, ঢুকে পড়ে টেবিলের তলায় এবং অনেকে মেঝেতে শুয়ে যায়। আমিও ভয় পেয়েছিলাম এবং বুঝতে পারছিলাম না কি করব। কিন্তু একটি দেওয়ালের পেছনে আংশিক আড়াল পেয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে আমি আমার কাজ করতে থাকি। অর্থাৎ ছবি তুলি।
তিনি বলেন, এর বিপদ সম্পর্কে তার ধারণা ছিলো। কারণ অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলো। তবে তিনি মনে করেন এই দৃশ্যটা তাকে ধারণ করতেই হবে, ‘যখন আমি আমার অফিসে ফিরে গেলাম ছবিগুলো সম্পাদনা করতে, একটা ছবি দেখে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। দেখি রাষ্ট্রদূত যখন বক্তব্য রাখছিলেন সে তখন তার পেছনে দাঁড়িয়েছিল।একজন বন্ধুর মতো, অথবা একজন দেহরক্ষীর মতো, লিখেছেন তিনি।
আততায়ী আলটানটিসও পরে সেখানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
সূত্র : বিবিসি