তিনি ছিলেন ডেনমার্কের এক কলেজছাত্রী। আর এখন সিরিয়ার আইএস জঙ্গিদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠেছেন জোয়ানা পালানি। সেজন্য তাঁর মাথার দামও ঠিক করে ফেলেছেন কুখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। ডেনমার্কের ২৩ বছর বয়সি এই সুন্দরীকে যে মারতে পারবে, তাকেই ১০ লাখ ডলার (সাত কোটি টাকা) উপহার দেবে আইএস।
কিন্তু কেন আইএসের নজরে পড়লেন জোয়ানা? কারণ ডেনমার্কের নাগরিক হলেও সিরিয়াতে এসে আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রীতিমতো প্রশিক্ষণ নিয়ে লড়াইতে নেমে পড়েন এই সুন্দরী। বছর দেড়েক আগেই পড়াশোনা ছেড়ে সিরিয়াতে চলে আসেন জোয়ানা। তার পরেই কুর্দ বাহিনীর হয়ে আইএস বিরোধী লড়াইতে সামিল হন তিনি।
বয়স সবে তেইশ হলেও আলোচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। আর সাধারণ মেয়ের মত হয়েও অসাধারণ হয়ে উঠেছেন সাহস আর চঞ্চলতা দিয়ে।
ইরাকের রামাদিতে জাতিসংঘের এক শরনার্থী শিবিরে জন্ম তাঁর। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জোয়ানার পরিবার যখন ডেনমার্কে আশ্রয় নেয়, জোয়ানা তখন খুব ছোট। ডেনমার্কে বেড়ে উঠা এই তরুণী ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন অসমাপ্ত রেখেই যোগ দেন কুর্দদের নিজস্ব সেনাবাহিনী পেশমেরগায়। সিরিয়া ও ইরাক থেকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের তাড়াতে একুশ বছর বয়সেই সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে এরই মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ার সাড়া ফেলেছেন লাস্যময়ী কুর্দিশ তরুণী।
কেউ কেউ তাঁকে জোয়ান অব ইরাক বলে থাকেন। ফ্রান্সের একশো বছরের যুদ্ধের কিংবদন্তি নায়িকা জোয়ান অব আর্কের সঙ্গে তাঁর নামেও যেমন মিল, তেমনি মিল রণাঙ্গনে সাহসিনী ভূমিকাতেও। কুর্দ বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইরাক, সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সেই জোয়ানার মাথার দাম ঘোষণা করল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জোয়ানাকে হত্যা করলেই মিলবে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারের ইনাম। আরব মিডিয়ায় এমনই ঘোষণা করেছে আইএস। তবে এই মুহূর্তে জোয়ানা রণাঙ্গন থেকে অনেক দূরে। ডেনমার্কের জেলে বন্দি। সে প্রসঙ্গে আসার আগে তাঁর জীবনের গোড়ার কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক।
জোয়ানার পরিবারের আদি বাড়ি ইরানের কুর্দিস্তানে। ১৯৯৩-তে ইরাকের রামাদিতে জাতিসংঘের একটি শরনার্থী শিবিরে জন্ম হয় ইরানিয়ান-কুর্দী জোয়ানার। তার আগে কুয়েতকে কেন্দ্র করে ইরাকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের ঝড়। জোয়ানার বাবা আর দাদা ছিলেন কুর্দ বাহিনী পেশমেরগারের যোদ্ধা। জোয়ানার জন্মের পর তার পরিবার দেশ ছেড়ে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় শিবিরে যখন এসে পৌঁছয় ছোট্ট জোয়ানা, তখন সে সবে হাঁটতে শিখেছে। তারপর ডেনমার্কেই বেড়ে উঠা সেখানকার নাগরিক হয়ে। কোপেনহেগেনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ও দর্শন নিয়ে পড়াশোনার সময় ২০১৪ সালে আচমকাই শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে হাতে তুলে নেন বন্দুক। চলে যান সিরিয়ায়। প্রথমে সিরিয়ায়, পরে ইরাকের মাটিতে আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শুরু হয় তাঁর লড়াই। সেই লড়াইয়ের কথা, ছবি নিজেই ছড়িয়ে দিতে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। একদিকে অস্ত্র হাতে, অন্য দিকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পোস্টে চলতে থাকে আইএস-এর বিরুদ্ধে জেহাদ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ জোয়ানার নানা ছবি প্রায়শই ভেসে উঠেছে ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামে। রীতিমতো নজরকাড়া সুন্দরী জোয়ানার নানা পোজের ছবিতে সরগরম হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা। তার মাধ্যমেই নিজের কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন দুনিয়ার নানা প্রান্তে।
আইএস বিরোধী যুদ্ধে ‘ছুটি’ নিয়ে গত বছর ফিরেছিলেন ডেনমার্কে। লক্ষ্য ছিল কিছুদিন পর আবার ফিরবেন ইরাকে, সিরিয়ায়। কিন্তু বাদ সাধল ডেনমার্ক সরকার। ইউরোপে বেলজিয়ামের পর ডেনমার্কই হল সেই দেশ, যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি তরুণ-তরুণী দেশ ছেড়ে গিয়ে আইএস-এ যোগ দেন। এটা আটকাতে কড়া আইন আনা হয়েছে সেখানে। সেই আইনেই জোয়ানার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। বলা হয়, এক বছরের মধ্যে দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না জোয়ানা। সেই নির্দেশে গত ছ’মাস জেলে কাটাতে হয় তাঁকে। এ বছর জুন মাসে লুকিয়ে কাতারে যান। ফিরেই ধরা পড়ে আবার জেলে।
জোয়ানার আইনজীবী এরবিল কায়া অবশ্য ডেনমার্ক প্রশাসনের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছেন। বলেছেন,এটা খুব লজ্জার একটা ঘটনা। যে আইএসের বিরুদ্ধে ডেনমার্ক সহ গোটা বিশ্ব-জোট লড়ছে, সেই আইএসের বিরুদ্ধেই লড়তে যাওয়া একজনকে শাস্তি দিচ্ছে আমাদের দেশ। আর কোথাও এমনটা ঘটেনি।
দোষী সাব্যস্ত হলে জোয়ানার দু’বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
এ সংক্রান্ত অন্য সংবাদ পড়ুন-
আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করায় ডেনিশ তরুণীর জেল!