সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবনাবসান - Women Words

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবনাবসান

আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মৃত্যুবরণ করেছেন। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে আজ রোববার ভোররাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী কামরুল হক জানান, আজ ভোররাত পৌনে চারটার দিকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। ভোররাত ৪টা ২৪ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

কামরুল হক আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে অসুস্থবোধ করছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গত শুক্রবার সকালে তাঁকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর অবস্থার বেশ অবনতি হয়। রাত নয়টার দিকে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনি আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ শোক জানিয়েছেন।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি এক নম্বর ছিলেন বলে তাঁর মনে হয়। তাঁর মৃত্যুতে বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবে বলে মনে করার কারণ নেই।

ওবায়দুল কাদের জানান, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শেষবিদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে তাঁর মরদেহ রাজধানীর জিগাতলার বাসভবনে যাবে। দুপুর ১২টায় মরদেহ নেওয়া হবে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। বেলা তিনটায় মরদেহ নেওয়া হবে সংসদ ভবনে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর সংসদে ‘অবিচুয়ারি রেফারেন্স’ হবে। আগামীকাল সোমবার সকাল নয়টায় তাঁর মরদেহ সিলেটে যাবে। সকাল ১০টায় সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বেলা ১১টায় মরদেহ যাবে সুনামগঞ্জে। সেখান থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ তাঁর নির্বাচিত এলাকায় নেওয়া হবে। বিকেলে তাঁর শেষকৃত্য হবে।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ছাত্র জীবনেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। হাওরাঞ্চলের ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলনে দীর্ঘদিন তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রবীণ এ পার্লামেন্টারিয়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। পরে এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

নব্বই দশকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও একতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রেলমন্ত্রী নিযুক্ত হন। যদিও সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর তিনি পদত্যাগ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাঁকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিপরিষদে রাখেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংসদে সব সময় সরব এ সংসদ সদস্য একজন অভিজ্ঞ সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

সূত্র: প্রথম আলো, এনটিভিবিডি