সিলেটে জঙ্গিবাদ বিরোধী নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত - Women Words

সিলেটে জঙ্গিবাদ বিরোধী নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

জঙ্গিবাদ নিপাত যাক, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবধ্য হও- এই শ্লোগান নিয়ে সিলেটে তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটির (গ্রাসরুটস্) আয়োজনে জঙ্গিবাদ বিরোধী নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও আয়ার সহযোগিতায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে এ সমাবেশ অনুঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল কলকাকলী একাডেমির পরিবেশনায় গণ সংগীত। এরপরে শুরু হয় আলোচনা সভা। তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি  (গ্রাসরুটস্) সিলেট জেলার সভাপতি সুষমা সুলতানা রুহির সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম। এর সঞ্চালনায় ছিলেন গ্রাসরুটস্ সিলেট জেলার নির্বাহী প্রধান হিমাংশু মিত্র।

শুরুতেই বক্তব্য রাখেন এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।

সভায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম জঙ্গিবাদ বিরোধী এই ধরনের নারী আলোচনা সভা বা নারী সমাবেশকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, অত্যন্ত যুগোপযোগী একটি বিষয় আপনারা নির্বাচন করেছেন, ভালো হত যদি আরও বেশি সংখ্যক নারীকে আমরা এখানে সচেতনতার জন্য একত্রিত করতে পারতাম। এটি আসলে নারী সমাবেশ। নারীরাই কিন্তু আমার মনে হয় যেকোন সামাজিক আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা কারো মা, কারো বোন, এবং পরিবারে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় দেই। তাই আমাদের ছেলেমেয়ে বা ভাই-বোন যাই থাকুক না কেন তারা আমাদের সান্নিধ্যেই বেশি সময় থাকে। এখানে বক্তারা বলেছেন যে জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। অবশ্যই, এর শেকড় অনেক গভীরে। কিন্তু আমরা দেখছি আমাদের বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্র অনেক রক্তের বিনিময়ে, যুদ্ধ করে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন দিয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে এবং আমাদের মা বোনেরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে । অনেক কষ্টে অর্জিত একটি দেশ।

তিনি আরও বলেন, বিগত দশ বছরে আমাদের অনেক উন্নয়ন বেগবান হয়েছে এবং আমরা অনেক উন্নয়নের মহাসড়কে পদার্পণ করেছি। দারিদ্রতাকে মোকাবিলা করে, নানারকমের প্রতিবন্ধকতাকে পিছে ফেলে আমরা এগোচ্ছিলাম, সেখানে আমাদের নারীদের জন্য আরও বেশি প্রতিবন্ধকতা ছিল বা আছে এখনো, সেটি আমাদের সবারই জানা আছে। আমরা সমাজের নারী-পুরুষ সকলে মিলে যারা আমরা সরকারের যে পর্যায়ে আছি, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের নারীরা যেন এগিয়ে যায়, তাদের যেন সত্যিকারের ক্ষমতায়ন হয়। ক্ষমতায়ন বলতে পেশিশক্তি নয়, আর্থিক ক্ষমতাই হল আসল ক্ষমতা। শিক্ষা থাকলে নিশ্চয়ই আপনি চেষ্টা করতে পারবেন, কিভাবে আর্থিকভাবে ক্ষমতাবান হবেন। আত্মকর্মসংস্থান বা যেকোন ইনকাম জেনারেটেড কাজে যদি আমরা মেয়েদেরকে নিয়োজিত করতে পারি, তাহলেই তারা আর্থিকভাবেভাবে ক্ষমতায়িত হবে এবং আর্থিক ক্ষমতায়নই হবে আসলে নারীর ক্ষমতায়ন। আমাদের নারীরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।

নাজমানারা খানুম বলেন, একটি অপশক্তি, একটি দুষ্টু চক্র নারীদের এই উন্নয়ন পিছিয়ে দেয়ার জন্য সংগঠিত হচ্ছে। শেকড় যেখানেই থাকুক না কেন, আমরা যেখানে দেখছি জঙ্গি কাহিনী যেসব জায়গায় ঘটছে বা জঙ্গি এ পর্যন্ত যা ধরা পড়েছে, তারা সবাই বাঙালি, তারা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ভাই, বোন, মা। আপনারা দেখেছেন যে শিশুসহ তারা আত্মঘাতী হচ্ছে। আলমপুরে আমাদের অফিস, তার নিকটেই যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান হল, তা আমার মনেহয় বাংলাদেশের মধ্যে ভয়াবহতম ছিল। এই জঙ্গি নির্মূলে আমাদের অনেকগুলো জীবন কিন্তু ঝড়ে গেছে। আমাদের অনেক কর্মকর্তা জীবন বিসর্জন দিয়েছে। তারা যে বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে, রাস্তায় যে বোমা মেরেছে, সেটি কিন্তু কোন দল, কার গায়ে পড়ছে, এর কিন্ত কোন বাছবিচার নেই। আমরা যে কেউ, যে কোন মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারি। সেক্ষেত্রে আমাদের সন্তানেরা কেন এই পথে যাচ্ছে? সেটি যেমন গবেষণার বিষয় সামাজিক বিজ্ঞানীরা সেটি বের করবে, তেমনি আমরা যারা তৃণমূলে আছি, আমরা যারা মায়েরা আছি, তারা কিন্তু চেষ্টা করতে পারি যে আমাদের পারিপার্শ্বিক যারা আছে, তারা যেন কোনভাবেই এই জঙ্গিবাদের দিকে পা না বাড়ায়। আমি মনে করিযে বুঝে না বুঝে, জেনে না জেনে এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা করে- অনেক সময় দেখবেন যে মসজিদে একটি ছেলে প্রতিনিয়ত হয়তোবা পাঁচ অয়াক্ত নামাজ পড়ে, খুবই নরম, খুবই ধীর স্থির, হয়তো মেধাবী, ঠিক এই ছেলেটিকেই কিন্তু তারা টার্গেট করে ব্রেইন অয়াশ করছে। এবং এটি একটি মাদকাসক্তের মত এই আসক্তিটি তার মধ্যে গেঁথে দিচ্ছে। এবং সে কিন্তু নিজের জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জঙ্গি হামলায় নিহত ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়ের (নিলয় নীল) স্ত্রী আশা মনি, আয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নুরুন্নাহার বেবি, গ্রাসরুটস্ সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি শামিম আরা শাম্মি ও সাধারণ সম্পাদক আরতি তালুকদার কলি, নারী মুক্তি সংসদ সিলেট জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য ইন্দ্রাণী সেন শম্পা, গ্রাসরুটস্ সিলেট জেলা কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা কমরেড সিকান্দার আলী,  গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ এস এম ফেরদৌস ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবুল হোসেন।