সাক্ষ্য দিলেন খাদিজা, বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন - Women Words

সাক্ষ্য দিলেন খাদিজা, বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন

সিলেটের কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস বখাটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করলেন। রোববার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বিচারকের কাছে এ আবেদন জানান তিনি। সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো  আগামী ১ মার্চ বুধবার মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ ধার্য করেছেন।

পরিবারের সদস্যদের সাথে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালত চত্বরে এসে পৌঁছান খাদিজা। বদরুলকে আদালতে আনা হয় ১১টা ৫০ মিনিটে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় বেলা ১২টায়।

খাদিজার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার মধ্যে দিয়ে বহুল আলোচিত এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ নিয়ে খাদিজাসহ মোট ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, খাদিজা সাক্ষ্য প্রদান শুরু করলে বদরুল উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এসময় তিনি কিছু বলার সুযোগ চান আদালতের কাছে। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘প্লিজ স্যার আমি বলতে চাই। আমি মিথ্যা বলব না। আমি একজন শিক্ষক স্যার, আমি একজন ছাত্রলীগ নেতা, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আমি মিথ্যা বলব না।’ এসময় আদালত তাকে থামিয়ে দেন এবং সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন।

আদালতে খাদিজা বলেন, ‘ঘটনার দিন কলেজে পরীক্ষা দিয়ে এক বান্ধবীর সাথে বেরিয়ে আসছিলাম, তখন বদরুল আমার পথরোধ করে। সে আমার উপর ধারালো চাপাতি দিয়ে হামলা চালায়। আমাকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।’ এ পর্যায়ে খাদিজা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় আইনজীবীরা তাকে শান্ত্বণা দেন। এরপর খাজিদা বলেন, ‘বদরুল আমাকে অনেকটা প্রতিবন্ধী বানিয়ে দিয়েছে। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা খাদিজার কাছে তখন আবারও প্রশ্ন করেন, আপনি বদরুলের কি ধরণের শাস্তি চান? উত্তরে খাদিজা আবারও বলেন, ‘আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

সাক্ষ্য প্রদান শেষে বদরুলের আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী খাজিদাকে জেরা করেন। তিনি খাদিজাকে প্রশ্ন করেন, বদরুলের সাথে আপনার পরিচয় কিভাবে হয়েছিল? জবাবে খাজিদা বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে সে আমাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকতো। এরপর বদরুলের আইনজীবী আদালতে বদরুলের সাথে খাদিজার’ যৌথ একটি ছবি প্রদর্শন করেন। এসময় বাদীপক্ষের এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানান।

বদরুলের আইনজীবী খাদিজাকে বলেন, বদরুলের সাথে আপনার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। খাদিজা বিষয়টি অস্বীকার করেন। আইনজীবী এরপর বলেন, সেদিন যেখানে যখন ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে আপনি (খাদিজা) স্বেচ্ছায় বদরুলের সাথে গিয়েছিলেন। খাদিজা এ বিষয়টিও অস্বীকার করেন।

খাদিজার সাক্ষ্য প্রদান শেষ হলে আসামীপক্ষ সাফাই সাক্ষ্য দেবে না জানালে আদালত যুক্তিতর্কের দিন ধার্য্য করেন। এর আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারানুযায়ী আসামী পরীক্ষা সম্পন্ন করেন আদালত। এ সময় আবারো বদরুল চিৎকার করে বলতে থাকেন, খাদিজা সুখে থাক, আল্লাহর আদালতে তোমার বিচার হবে। আমার ফাঁসি হোক। এরপর তাকে পুলিশ ও অন্যরা থামিয়ে দেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে খাদিজা বলেন, মিডিয়ার ভাইদের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশবাসী সবার দোয়ায় আমি মোটামুটি সুস্থ আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি অনেক অবদান রেখেছেন আমার সুস্থ হয়ে উঠার জন্য।

খাদিজা বলেন, আমার যে পরিস্থিতি হয়েছে এদেশের কোনো মেয়ের সে ধরণের পরিস্থিতি হোক আমি চাই না। আমি চাই সব মেয়েই তার ভবিষ্যত নিজে তৈরি করুক।

আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান বলেন, আজ এই মোকদ্দমার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী তারিখে আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করব। তারপর রায় হবে।

তিনি বলেন, খাদিজা আদালতের কাছে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেছে। আমরাও ন্যায় বিচার আশা করি।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে বের হয়ে হামলার স্বীকার হয় খাদিজা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বখাটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম তাকে চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে সাভারের সিআরপিতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি বাড়িতে আসেন।

এই ঘটনায় বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা করা হয়। গত বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বদরুল।