যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একুশের প্রথম প্রহরে প্রতীকি শহীদ মিনারের পাদদেশে বিনম্র শ্রদ্ধায় পুষ্পার্ঘ প্রদান করা হয়। অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নর্থবেঙ্গল ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠান শুরু হয় স্থানীয় সময় সোমবার রাত আটটায়।
জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ এ আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আর আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উদ্বোধন হয় অনুষ্ঠানের।
উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ,রংপুর,দিনাজপর,নীলফামারী,চাপাইনবাবগঞ্জ,বগুড়া,সিরাজগঞ্জ,গাইবান্ধা,কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট,পঞ্চগড়,পাবনা জেলার সম্মিলিত আয়োজন ছিলো এতে ।প্রথমবারের মত ভাষাশহীদদের সহ সকল শহীদদের আত্মার জ্ন্য প্রার্থনা করা হয়।প্রথমে ইসলাম ধর্মীয় রীতিমতে ।তারপর হিন্দু ধর্মীয় রীতিমতে ।সর্বশেষে খৃষ্টান ধর্মীয় রীতিতে।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি? এই গানের সমবেত পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব।ছোটদের চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি আর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান করা হয়।ঋত্তিকা ব্যানার্জি প্রথম হয় দেশের গান গেয়ে।কবিতা আবৃত্তিতে প্রথম হয় কাব্য।ঋত্তিকার গান আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিয়ে গর্বিত হওয়ার আশা জাগায় মনে।কাব্য নামের ছেলেটি কবিতার মত দেখতে। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে কবিতা পুরোটাই সে মুখস্থ আবৃত্তি করে।নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আমরা অহংকার করতে পারি।আশা করতে পারি। দেশ থেকে যোজন যোজন দূরে একটুকরো বাংলাদেশ দীপ্তিময় হয়ে উঠবে এই নতুন প্রজন্মের হাত ধরে।
নতুন প্রজন্মের কাছে একুশের চেতনা পৌঁছাতে পেরেছি কিনা এর উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।এ প্রজন্মের কাছে আমরা একুশের চেতনা পৌঁছাতে অবশ্যই পেরেছি। তবে তার চর্চাটা অব্যাহত রাখতে হবে।বাংলা ভাষাকে মন থেকে ভালোবাসতে হবে।শুদ্ধ বাংলা বলা ও লেখার চর্চা করতে হবে।
হাসানুজ্জামান বাচ্চু আমার লেখা ‘মেঘের দেশে মেঘবালিকা’ বইটি উপস্থিত দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। দর্শকরা প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে বইটি সংগ্রহ করেন। সব কটি কপি বিক্রি হয়ে যায়।
কবিতা বাংলা সাহিত্যের প্রাণ। কবিতা যে গান বা অভিনয়ের চেয়ে আকর্ষনীয় হতে পারে তা এই অনুষ্ঠানে প্রমাণিত হয়েছে। কবিতা কে নান্দনিক মাত্রা যোগ করে উপস্থাপন করা হয়।শ্যামা, রীনা ,কাব্য, হাসান কবির ডাবলু র চমৎকার পরিবেশনা পুরো হল জুড়ে পিনপতন নিস্তব্ধতায় পরিবেশিত হয়। জয় হোক বাংলার।জয় হোক কবিতার।
রাত বারটা একমিনিটের পূর্ব পর্যন্ত আমরা উপভোগ করি দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনা। বারটা এক মিনিটে একের পর এক জেলা ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করে সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা জানায়।
নর্থবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসানুজ্জামানের আহবানে আমরা এবারই প্রথম একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়েছিলাম। নীলফামারী জেলা সমিতির সদস্যরা পেনসিলভেনিয়া থেকেও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন।
অমর হোক রফিক, সালাম ,বরকত ,জব্বারের আত্মত্যাগ। দেশান্তরী হয়েও দেশকে আমরা বুকের গহীনে লালন করি পরম যত্নে।চর্চা করি বাংলা ভাষাকে।আমরা যেন বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিয়ে যাই। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।