গত ২৬ জুলাই মুক্তি পেল বহু প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘জেসন বোর্ন’। রবার্ট লুডলাম এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি বোর্ন সিরিজের এটি পঞ্চম ছবি এবং এটি দুটি বিশেষ কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, এ সিরিজের প্রথম তিনটি ছবি (বোর্ন আইডেনটিটি, বোর্ন সুপ্রিমেসি এবং বোর্ন আল্টিমেটাম) খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। অনেকের মতে জেমস বন্ডের চেয়েও জেমস বোর্ন অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে, অনেক বেশি বাস্তব ধর্মী। এই জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল ডগ লিমান (১) ও পল গ্রিনগ্রাজ (২,৩) পরিচালকদ্বয়ের অভূতপূর্ব টান টান উত্তেজনা তৈরির মাধ্যমে নতুন স্টাইল সৃষ্টি। আর জেসন বোর্ন চরিত্রে ম্যাট ডেমন এর অসাধারণ, অনুভূতিহীন অভিনয়। বোর্ন সিরিজের সব ছবির জন্যই বেশিরভাগ সিনেমাপ্রেমিই অপেক্ষা করেছেন।
দ্বিতীয়ত, এ সিরিজের চতুর্থ ছবি ‘বোর্ন লিগেসি’ খুব বেশি দর্শক জনপ্রিয় হয়নি। লিগেসিতে জেরমি রেনেরকে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং সেখানে জেসন বোর্নের কথা ও ছবি উল্লেখ থাকলেও ম্যাট ডেমনকে দর্শক মিস করেছে। ফলে ছবিটি খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। দর্শক বুঝিয়েছেন, বোর্ন মানে তারা ম্যাট ডেমনকেই বোঝেন। সিরিজের পঞ্চম ছবিতে ম্যাট ডেমনকে ফিরিয়ে এনেছেন পরিচালক পল গ্রিনগ্রাজ এবং তাও ছবির নাম দিয়েছেন ‘জেসন বোর্ন’।
২৯ জুলাই আমি ছবিটি দেখেছি ইংল্যান্ডের ব্রাইটন শহরের একটি প্রেক্ষাগৃহে। হল ভর্তি দর্শক মূলত এসেছিলেন টান টান উত্তেজনায় ভরপুর আরেকটি বোর্ন ছবি দেখতে। দর্শককে হতাশ করেননি পরিচালক। বরং এ ছবির কিছু দৃশ্য ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস সিরিজের ছবির অ্যাকশনকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছবির গল্প শুরু হয় বোর্নের সিআইএ এ যোগদানের আগের প্রেক্ষাপট থেকে। বোর্ন এর আসল পরিচয় কী এ নিয়ে রহস্যের জট খোলার জন্য বোর্নকে সাহায্য করতে চান সাবেক সিআইএ এজেন্ট নিকি পার্সন্স (জুলিয়া স্টাইলস)। কিন্তু, সিআইএ যখন বোর্ন আর নিকিকে হত্যা করতে চায়, তখন বোর্ন নিকিকে বাঁচাতে ব্যর্থ হলে শুরু হয় সিআইএ আর বোর্নের মধ্যকার লুকোচুরি খেলা। নতুন নিয়োগ পাওয়া এজেন্ট হিথার লি (এলিসিয়া ভিকান্ডার) সিআইএ এ যোগদান করেছেন ভালো কিছু করবেন বলে। তিনি জেসন বোর্নকে পুনরায় সিআইএ ফেরত আনতে চাইলে সিআইএ ডাইরেক্টর রবার্ট ডেউই (টম লি জোন্স) তাকে বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন। এছাড়া ছবিতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র নিয়ে আসা হয়েছে, যার নাম আরন কালর (রিজ আহমেদ)। যিনি একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন এবং যিনি সিআইএ এর রাজনীতির শিকার। এটাই এ সিনেমার মূল উপজীব্য। বাকিটুকু বড় পর্দায় দেখবেন সে আশা করছি। ছবিতে টান টান উত্তেজনা সাসপেন্স তৈরি করেছে। অন্য সব বোর্ন ছবির মতই এ ছবির লোকেশন ছিল ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন শহর। পরিচালক গ্রিনগ্রাজ বরাবরের মতই দারুণভাবে অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ধারণ করেছেন। ওয়ান টু ওয়ান অ্যাকশন সব সময়ই একটি বড় আকর্ষণ বোর্ন ছবিতে। এক মুহুর্তের জন্য চোখ ফেরানোর সময় থাকে না। ছবির মিউজিক সাসপেন্স ও রহস্য তৈরিতে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। আধুনিক সব টেকনোলজির ব্যবহার ছবিটিকে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
সবার অভিনয় বেশ ভালো। তবে, ম্যাট ডেমনকে তার চরিত্রের গতি ও প্রতিফলনের তুলনায় একটু বয়সের ভারে ক্লান্ত মনে হয়েছে। সুইডিশ অভিনেত্রী এলিসিয়া ভিকান্ডার অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ভিলেন চরিত্রে টম লি বরাবরের মতই কার্যকর। সিনেমাটোগ্রাফি খুব ভালো এবং দর্শককে ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু, এ ছবির মূল দুর্বলতা হলো এর গল্প। গল্পে খুব বেশি চমক নেই। গতানুগতিক বাংলা সিনেমার পিতা হত্যার প্রতিশোধের মতো। অনেক কিছুই দর্শক আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছেন। গল্পে মানবিক অনুভূতি নেই। এবং ছবিটি শেষ হলে দর্শক খুব বেশি অর্থ খুঁজে পান না, খাপছাড়া মনে হয়। সারা পৃথিবীর সিনেমাপ্রেমীরা এ ছবির জন্য অপেক্ষা করেছেন। ছবিটি বিনোদন দেবে তাতে সন্দেহ নেই। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখলে দর্শক খুব হতাশ হবেন না, এটুকু বলা যায়।
*মাহমুদুল হক মনি একজন চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক ও সমালোচক। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে লেখাপড়া করছেন।