জাম্বিয়ায় নারীদের ছুটি নিয়ে বিতর্ক - Women Words

জাম্বিয়ায় নারীদের ছুটি নিয়ে বিতর্ক

জাম্বিয়ায় মাসিকের সময় কর্মজীবী নারীদের এক দিনের ছুটি দেয় প্রতিষ্ঠান। আইন অনুসারে, এই ছুটির জন্য নারীদের কোনো আবেদন করতে হয় না। চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্যও দেখাতে হয় না।

এএফপির খবরে প্রকাশ পেয়েছে, নারীদের ছুটি-বিষয়ক এই আইন ‘মাদারস ডে ২০১৫’ নামে পরিচিত। এ নিয়ে দেশটিতে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এক পক্ষ বলছে, শারীরিক প্রয়োজনেই নারীদের এই ছুটি প্রয়োজন। বিরোধী পক্ষ বলছে, আইনটি বৈষম্যমূলক।

জাম্বিয়া আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ। দেশটিতে দেড় কোটি মানুষের বাস। যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে এখানে একধরনের ট্যাবু রয়েছে। এসব বিষয়ে খোলামেলাভাবে কেউ কথা বলতে চান না। বললেও সেটি নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। এই ট্যাবু এমনই যে মা-বাবাও সন্তানকে পৃথিবীতে আসা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়, সন্তানকে মা-বাবা হাসপাতাল থেকে কিনে এনেছেন।

জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকার সরকারি চাকরিজীবী এক নারী সুপে লুচেম্বে (৩৬)। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে পাওয়া এই এক দিনের ছুটি মাসিকের সময়ে শারীরিক সমস্যাগুলো সামলাতে আমাকে সাহায্য করে। আমি মনে করি, এই ছুটি খুব প্রয়োজন। আমি এই আইন সমর্থন করি।’

জাম্বিয়ার বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়কারী কাউন্সিলের (এনজিওসিসি) মাদুবে সিয়াউয়া বলেন, মাদারস ডে খুব প্রগতিশীল আইন। মাসিকের সময় অনেক নারীই তীব্র শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। কারও বেশি রক্তপাত হয়, কেউ ব্যথায় ভোগেন। কারওবা বমি হয়। এ কারণে ওই এক দিন নিজেদের যত্ন নিতে নারীদের ছুটি দেওয়া দরকার। এটি কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক নয়। নারীদের প্রয়োজনেই এমন ব্যবস্থা।

এই আইনের পক্ষে আন্দোলন করেছেন এজিওসিসির সারা লংউই। তিনি বলেন, এই আইন পাস করার জন্য জাম্বিয়াকে ঈর্ষা করা যেতে পারে।

তবে মাদার ডে আইনে সবাই খুশি নন। অনেক কর্মজীবী নারী বলছেন, এতে ছুটির অপব্যবহার হয়। বিশেষ করে পুরুষেরা এই ছুটি নিয়ে বাঁকা মন্তব্য করেন।

অ্যালিয়েন্স ফর কমিউনিটি অ্যাকশনের প্রধান লরা মিতি (৪৬) বলেন, ‘আমি কখনো মাদারস ডে ছুটি নিইনি। আমি জানি না অন্যদের কেন এটা দরকার। এটার অপব্যবহার হয়। যদি কারও ওই সময়ে বেশি শরীর খারাপ থাকে, তাহলে অসুস্থতাজনিত ছুটি নিতে পারে।’

লরা মিতি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক জনশক্তি বছরে ১২ দিন ছুটি পাবে, এটা খুবই অপেশাদার ও অনুৎপাদনশীল। বিশেষ করে করপোরেট ওয়ার্ল্ডে।

লুসাকার সরকারি চাকরিজীবী চিসেলওয়া কাওয়ান্ডা (৩৩) বলেন, এই আইন বিভ্রান্তিকর। যদি এক দিন আমি কাজ না করি, তাহলে পরের দিন কাজের চাপ পড়ে। মাসিক তো কেবল এক দিনের জন্য হয় না।

আইনের বিরোধীরা বলছেন, যেসব নারী গৃহস্থালির কাজ করেন বা জমি চাষ করেন, তাঁরা এ ধরনের ছুটি পান না।

জাপান, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় একই ধরনের আইন রয়েছে। ব্রিটেনের ব্রিস্টল এলাকায় অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানে মাসিকের সময় কর্মজীবী নারীদের জন্য কর্মঘণ্টা শিথিল করা হয়।

যতই সমালোচনা হোক, জাম্বিয়ার সরকার মাদারস ডে আইনের পক্ষে। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সিসিলে মালিনদেতিকামানগা এএফপিকে বলেন, বিশেষ ওই সময়ে অনেক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাজে ঠিকভাবে মন দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জাম্বিয়া সরকার নারীদের জন্য আরও কিছু প্রকল্প নিয়েছে। এ বছর সরকার স্কুলগামী মেয়েদের বিনা মূল্যে স্যানিটারি প্যাড বিতরণ করেছে। গ্রামাঞ্চলে স্কুলে মাসিকের সময় মেয়েদের অনুপস্থিতি ঠেকাতে সরকার এই বন্দোবস্ত করেছে।

জাম্বিয়ার নারীরা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। দেশটিতে বাল্যবিবাহ এবং শিশুমৃত্যুর হার উচ্চ। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীদের জীবন খুব কষ্টের।

সূত্র: প্রথম আলো