মিলনমেলায় আসা যাওয়ার পথের ধারে (৪) - Women Words

মিলনমেলায় আসা যাওয়ার পথের ধারে (৪)

romena-lais-women-words

মিলনমেলা ভেঙ্গে গেলো। প্যান্ডেল ছেড়ে স্কুলের মাঠে এসে জড়ো হলাম। বন্ধু, বড়বোন কিংবা ছোটবোনদের কাউকেই ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন।চমন আর তামান্নাসহ বিজুআপা, শাহানাআপা, বেবীদি, সীমাদি, শেফা আপা, রুনা, তুলিকা, তুলনা, মহুয়া, শাম্মী, খাইরুন, রেহানা, লাকি, শাম্মী, সঞ্চিতাদি  বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত স্কুলমাঠেই থাকলাম। মিলনমেলা ভাঙলেও তার রেশ চলতেই থাকলো।

মিলনমেলায় যোগ দিতে সব বাড়িতেই মেয়েরা ফিরে এসেছে। নায়না কানাডা থেকে এসেছে। নাসিরউদ্দিন চাচার মেয়ে । সিটি ফার্মেসীর বাসা বললে এক নামে চিনে সবাই। ওদের বাসায় দুপুরে দাওয়াত। শাহী আয়োজন । দাওয়াতে উপস্থিত হওয়ার পর একে একে মিলনমেলায় আসা বোনদের সকলেই আসলেন।আবারো সবাই একসাথে বসে গল্প, আড্ডা চললো।

রাতের বেলায় আবার লন্ডন থেকে আসা খাইরুনের বাসায় দাওয়াত। খাইরুনের বাসায় আমরা তিনবোন পৌঁছে দেখি তানিম আর ছবি আগেই পৌঁছে গেছে। একে একে আসলো রেহানা,বিউটি, নায়না । খাইরুনদের ক্লাসমেট ছেলেরাও আসলো। সাবেরীন আসলো। গান গাইলো মুবিন গানবাজ। দরদী কন্ঠে গাইলো “বকুল ফুল বকুল ফুল”। চমৎকার গায়কী ঢং এ গাইলো, “মধু কই কই  বিষ খাওয়াইলা।” মুখরোচক সব খাবারের সাথে ডাবের পানি, পিঠাপুলী কী নাই। বেশ রাতে ফটোসেশন আর আড্ডাবাজির পরে বাড়ি ফেরা হলো।

পরদিন দুপুরে আবার কুটুমবাড়িতে বসলো আসর। ছবি, নায়না, তানিম, আনার আপা, দিনার আপা, মিতু, খাইরুন, রেহানা, ছবি এবং আমরা তিনবোন। ১৯৮০ ব্যাচের ছেলেরা- শওকত, প্রবোধ, বিকাশ, সাবেরীন  ওরাই ট্রিট দিলো। গল্প আর খাওয়াদাওয়ার পর আমরা চলে গেলাম ইশতিয়াক রুপুভাই এর আব্বাকে দেখতে।

চাচাকে দেখে গেলাম কানিজের বাসায়। মিলনমেলার পুরোটা সময় এই বাসা আর কম্পিউটার ল্যাব ছিলো অন্যতম কেন্দ্র। ওখানে সীমাদি, মহুয়া, জেবিন, ফারিনদের সাথে কথা হলো। হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। কানিজদের টিনের চালের পুরনো ঘরে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আমাকে সেই ছেলেবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে গেলো। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে সেই বৃষ্টি থামলো।

পরদিন সকালবেলা চম্পা আসলো।আমার সাথে ওর ফেসবুকে পরিচয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ায়। ওর সাত বছরের একটি ছেলে আছে। আমরা কুটুমবাড়িতে চা খেতে খেতে অনেক গল্প করলাম। তারপর একটা রিকশায় করে গেলাম সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে। কলেজে ছবি উঠালাম। তারপর সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য যাদুঘর দেখে আবদুজ জহুর সেতু দেখতে যাচ্ছি, এসময় কৃষ্ণা ফোন করলো। সে আমার জন্য জলপাই’র আচার নিয়ে আমাদের বাসায় যাচ্ছে। পথেই দেখা হয়ে গেল কৃষ্ণার সাথে। ভালবাসা মেশানো সেই আচার হাতবদল হয়ে চলে এলো আমার কাছে। আব্দুজ জহুর সেতুতে আমরা ছবি তুলে বাসায় ফিরে আসলাম। চম্পা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমরা ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম । সালমার ফোন অলরেডি দুইবার আসলো। সালমা আর সাহারের চমৎকার বাসা। অনেক রকমের দেশী মাছ, দেশী খাবারের আয়োজন। জম্পেশ খাওয়াদাওয়া আর জম্পেশ গল্পগুজব হলো। চারতলার ছাদে গ্লাসডোরের পাশে দাঁড়িয়ে সুরমানদীর ভিউ এর সাথে ছবিও তোলা হলো।

এখান থেকে বিদায় নিয়ে গেলাম আ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ খসরুভাই আর মুনমুনভাবীর বাসায়। সেজু আপা আর রুমী আপার সাথে ছবি তোলা হলো। দীয়ার হাতে বানানো কাস্টার্ড আর ভাবীর বানানো মাংসের রোল খেয়ে বিদায় নিবো, তখনি খসরুভাই তাঁর লেখা তিনটি বই আমাকে দিলেন। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান কারণ ভাবী আবার দুষ্টামি করে বললেন –কেউ একটা বইও পায় না, তুমি তিনটা পেয়ে গেলে।

স্বপ্না আসতে পারেনি স্কুলের মিলনমেলায়। ওর আম্মাকে দেখতে গেলাম। দেখলাম অনেক ভালো আছেন এখন। বাসায় ফিরলাম ‘শাওনে’ কিছু কেনাকাটা করে। খোকন আর তার বউ অনেক রান্না করেছে। খোকন আমার আম্মার পোষ্য ছেলে। আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন খোকন পাঁচ-ছয় বছরের ছিলো। তখন ওর বাবা মারা গেলেন।  সে বলল, ‘আপা আমার আব্বামোরা গেছেন।’ আর চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো পানি। সেই খোকন আমার আব্বা-আম্মাকে আব্বা আর আম্মা ডাকে। আমাদের পরিবারের সদস্য। ও আর ওর বউ মিলে আজ পোলাও,কোরমা রেধে আমাদের খাওয়ালো। নার্গিসের আসার কথা ছিলো আসতে পারেনি। সালমা, সাহার এসে চলে গেলো। মিসবাহ, মুনিমরা আসলো। রাতের খাবারের সাথে চললো গল্পগুজব।

পরদিন সকালে আমাদের সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা চলে আসতে হলো। আম্মাসহ আমরা তিন ভাই-বোন। জেসমিন সিলেটে অপেক্ষায় ছিলো। আম্মার গলা জড়িয়ে কী যে কান্না করলো। নভো এয়ারলাইনস এ ঢাকা পৌঁছালাম সময় মত।

চলবে