কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-৪) - Women Words

কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-৪)

reza-gotok-women-wordsসুপ্রিয় পাঠক, কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল, সেই আলোচনা করতে গিয়ে আমি মহাদেশ হিসেবে লেখা শুরু করেছিলাম। আমার কেন জানি মনে হয়েছে এবার এটি আফ্রিকা মহাদেশে যাবে। তাই আলোচনাটি একটু দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আজ তুলে ধরছি ইউরোপ মহাদেশের সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ীদের কথা। ইউরোপ এখনো গোটা বিশ্বের প্রধান কালচারাল হাব। হোরেস ইংডালসহ এবার সেই তালিকায় রয়েছেন ২৫ জন।

ইউরোপ মহাদেশ:
jon-fosse-women-wordsএবার ইউরোপ থেকে সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী ধরা হচ্ছে জন ফোসেকে। নরওয়ের এই মিস্টিক লেখক, কবি ও নাট্যকার এবার আলোচনায় রয়েছেন বেশ জোরেসোরে। গত বছর ফোসে তাঁর বিখ্যাত ট্রিলজি ‘স্লিপলেস’, ‘ওলাভ’স ড্রিম’ ও ‘ওয়ারিনেস’ এর জন্য পেয়েছেন নরডিক লিটারেচার পুরস্কার। কিন্তু গোটা ইউরোপেই তাঁকে হ্যারোল্ড পিনটার, স্যামুয়েল ব্যাকেট ও হেনরিক ইবসেনের সঙ্গেই কেবল তুলনা করা হয়। তাঁর বিখ্যাত নাটকগুলো হলো- ‘সামওয়ান ইজ গোয়িং টু কাম’, ‘অ্যান্ড নেভার উই উইল বি পার্টেড’, ‘দ্য নেম’, ‘দ্য চাইল্ড’, ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড’, ‘দ্য সন’, ‘নাইটসঙস’, ‘দ্য গিটার ম্যান’, ‘এ সামার’স ডে’, ‘অ্যটম ড্রিম’, ‘স্লিপ ইউ লিটল চাইল্ড অব মাইন’, ‘ভিসিটস’, ‘উইনটার’, ‘বিউটিফুল’, ‘ডেথ ভ্যারিয়েশনস’, ‘দ্য গার্ল অন দ্য সোফা’, ‘লিলাক’, ‘দ্য ডেড সঙস’, ‘ওয়ার্ম’, ‘স্লিপ’, ‘স্যাডোস’, ‘আই অ্যাম দ্য উইন্ড’, ‘দিস আইস’ ইত্যাদি। ফোসে যদি উপন্যাস বা কবিতা নাও লিখতেন, কেবল নাটকের জন্যই তিনি নোবেল পুরস্কারের একজন যোগ্য দাবিদার হতে পারতেন। এবার সাহিত্যে নোবেল যদি ইউরোপে যায় জন ফোসে হতে পারেন সেই নামটি।

kiki-dimoula-women-wordsজন ফোসের পর এবার আলোচিত নাম গ্রিসের কবি কিকি ডিমৌলা। যুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা মূলত কিকি’র লেখালেখির প্রধান বিষয়। কিকি’র ভাষা এবং শব্দচয়ন কৌশল আধুনিক যে কোনো কবি’র চেয়ে একটু ভিন্ন। লিংগুয়েস্টিক ইনজেনুইয়িটি-তে কিকি যেমন অতিমাত্রায় বিস্ময়কর, তেমনি ভাষায় তিনি ইমোটিভ পাওয়ার দিয়ে একটা আলাদা কৌশল করেন। কিকি’র কবিতায় জাতীয়ভাবে সৃষ্ট ডিসসল্যুশান ও হোমলেস বা উদ্বাস্তুদের আর্তনাদ মুখ্য হয়ে ওঠে। গ্রিসের একটি ব্যাংকে তিনি ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু কিকি’র কবিতা ইংরেজি, ফ্রেন্স, জার্মান, ইতালিয়ান, সুইডিশ, ডেনিস ও স্পেনিস ভাষায় অনুবাদ হয়ে গোটা ইউরোপের পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। ২০০৯ সালে কিকি ইউরোপিয়ান প্রাইজ ফর লিটারেচার পেয়েছেন। কিকি’র বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- ‘পোয়েমস’, ‘ইরিবাস’, ‘ইন অ্যাবসেন্টিয়া’, ‘অন দ্যট্রায়াল’, ‘দ্য লিটল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘মাই লাস্ট বডি’, ‘ফেয়ারওয়েল নেভার’, ‘লেথে’স অ্যাডোলসেন্স’, ‘ওয়ান মিনিট’স টুগেদার’, ‘ডিপারচার’স সাউন্ড’, ‘গ্লাস হাউস লন’, ‘উই মুভড নেক্সট ডোর’, ‘মিটিং’ ইত্যাদি। এ বছর কিকি ডিমৌলা’র নাম বেশ জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য।

antonio-lobo-antunes-womenএ বছর পর্তুগালের ঔপন্যাসিক অ্যান্টোনিও লোবো অ্যান্টুনেস-এর নাম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেশ আলোচিত হচ্ছে। পোস্ট মর্ডানিস্ট লেখক হিসেবে অ্যান্টুনেসকে তুলনা করা হয় স্যামুয়েল ব্যাকেট, থমাস বার্নহার্ট ও লাসলো ক্রাজনাহোর্কাই-এর সঙ্গে। অ্যান্টুনেস পেশায় একজন চিকিৎসক হওয়ায়, তাঁর লেখায় মনোলগ ও পর্তুগালের সৌন্দর্য ও অতীত ঐতিহ্যের এক জটিল নান্দনিকতা ফুটে ওঠে। অ্যান্টনেসের বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো- ‘এলিফ্যান্ট’স মেমোরি’, ‘দ্য ল্যান্ড অ্যাট দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘নলেজ অব হেল’, ‘অ্যান এক্সপ্লেনেশানস অব দ্য বার্ডস’, ‘ফাডো আলেক্সান্ডারিনো’, ‘অ্যাক্ট অব ড্যামনেড’, ‘দ্য রিটার্ন অব দ্য কারাভেলস’, ‘ট্রিটাইস অন দ্য সুল’স প‌্যাশনস’, ‘দ্য ন্যাচারাল অর্ডার অব থিংস’, ‘দ্য ডেথ অব কার্লোস গার্ডেল’, ‘দ্য ইনকুইুজিটরস ম্যানুয়াল’, ‘দ্য স্পেলেনডর অব পর্তুগাল’, ‘আই শ্যাল লাভ এ স্টোন’, ‘মাই নেম ইজ লিজিয়ন’, ‘ডিডন’ট সি ইউ চগজ ব্যবিলন ইয়েস্টারডে’ ইত্যাদি।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক ও স্ক্রিনরাইটার লাসলো ক্রাজনাহোর্কাই এবার খুব আলোচিত একটি নাম। পোস্ট-মর্ডার্ন ঔপন্যাসিকদের মধ্যে কেবল থমাস বার্নহার্টও স্যামুয়েল ব্যাকেটের পরেই তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। এর আগে তিনি দু’বার বেস্ট ট্রান্সেলেটেড বুক অ্যাওয়ার্ড এবং ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তাঁর ‘মাস্টার অব অ্যাপোকালিপস’ হাঙ্গেরির বাইরে জার্মানি ও ইংলিশ স্পিকিং দেশগুলোতে বহুল পঠিত। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো- ‘সাতানটাংগো’, ‘দ্য মেলানচোলি অব রেজিসট্যান্টস’, ‘দ্য প্রিজনার অব উর্গা’, ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’, ‘ফ্রম দ্য নর্থ বাই হিল, ফ্রম দ্য সাউথ বাই লেক, ফ্রম দ্য ওয়েস্ট বাই রোড, ফ্রম দ্য ইস্ট বাই রিভার’, ‘সেইবো দেয়ার বেলো’ ইত্যাদি। লাসলো’র উপন্যাস ও চিত্রনাট্য দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলা তার পাঁচটি ফিচার ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। সেগুলো হলো- ‘ড্যামনেশন’, ‘সাতানটাংগো’, ‘ওয়ার্কমিস্টার হারমোনিস’, ‘দ্য ম্যান ফ্রম লন্ডন’, ‘দ্য তুরিন হর্স’।

doris-kareva-women-wordsএস্তোনিয়ান কবি ডোরিস কারেভা’র নাম এবার বেশ আলোচিত। তাঁর কবিতায় রাজনীতি ও ইতিহাস এমন একটি adam-zagajewski-women-wordsমিউজিক্যাল ভংগিতে উঠে আসে যে, পাঠক একবার তাঁর কবিতায় আবিষ্ট হলে আর ছেড়ে যাবার উপায় নাই। তাঁর কবিতায় দুইটি প্রধান ভাগ লক্ষ্য করা যায়, একটি হলো মাইন্ড অপরটি হলো হার্ট। ডোরিস কারেভার পর আলোচিতনাম পোল্যান্ডের আধুনিক কবি অ্যাডাম জাগায়েস্কি। তাঁকে তুলনা করা হয় আধুনিক কবি জেসলা মিলোজ ও উইসলা সিমব্রস্কা’র সঙ্গে। সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র পতনের পর জাগায়েস্কি এই অঞ্চলের সবচেয়ে আলোচিত কবি। যাঁর কবিতার থিম এবং ইতিহাসের সংমিশ্রণ অসাধারণ।

ইউরোপ থেকে আর যাদের নাম এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য আলোচিত হচ্ছে তাঁরা হলেন- স্পেনের ঔপন্যাসিক এদোয়ার্দো মেনদোজা গারিগা, গ্রিসের লেখক ইরসি সোটিরোপোলস, ফিনল্যান্ডের কবি সার্কা তার্কা, ডাচ ঔপন্যাসিক চিস নুটবুম, এস্তোনিয়ার লেখক জান কাপলিনস্কি, পোল্যান্ডের লেখক ম্যাগডালেনা তুল্লি, হাঙ্গেরির লেখক পিটার নাদাস, ফিনিস কবি তুয়া ফর্সট্রোম, স্লোভেনিয়ার লেখক দ্রায়ো জাংকার, এস্তোনিয়ার কবি ভিভি লুইক, বেলজিয়ামের কবি লিওনার্দ নোলেন্স, পোল্যান্ডের লেখক ওলগা তোকারজাক, নরওয়ের হেমিংওয়ে খ্যাত কাজেল আস্কিলডেনসেন, রাশিয়ার লেখক লুডমিলা পেট্রুয়েসভস্কা, রুমানিয়ার লেখক মার্সিয়া কার্তারেস্কু, স্পেনিস লেখক জ্যাভিয়ার মারিয়াস, আইসল্যান্ডের কবি জিরোইর ইলিয়াসন, চেক লেখক পেত্র ক্রল ও রাশিয়ার লেখক মিখায়েল সিসকিন উল্লেখযোগ্য। এদের যে কেউ এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলে অবাক হবার কিছু নেই।

চলবে

লেখকের এ সংক্রান্ত অন্য লেখা পড়ুন-

কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-৩)
কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-২)
কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-১)