কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-২) - Women Words

কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-২)

reza-gotok-women-words

গোটা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের চোখ আগামী সপ্তাহের সুইডিশ নোবেল কমিটির দিকে। কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার?

তো চলুন এবার সম্ভাব্য সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের নাম ও একটু পরিচিতি খুটিয়ে দেখি। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান একজন। সেটি যে কোনো মহাদেশ থেকে হতে পারে। তো আমি আলোচনায় মহাদেশ ভিত্তিক একটা তালিকা তুলে ধরার চেষ্টা করব। শুরুতেই আমি বলতে চাই আফ্রিকা মহাদেশের সম্ভাব্য নামগুলি।

আফ্রিকা মহাদেশ:
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য যার নাম বেশ আলোচিত হচ্ছে তিনি হলেন সোমালিয়ার ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ। ১৯৭০ সালে নিজের দেশ সোমালিয়া ছাড়ার পর থেকে তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসিত একজন লেখক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, সুইডেন, সুদান, ভারত, উগান্ডা, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি বিভিন্ন সময়ে বসবাস করেছেন। জীবিত কনটেম্পোরারি লেখকদের মধ্যে ফারাহ অন্যতম। তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলো কালজয়ী।

nuruddin-farah-01-women-wor১৯৪৫ সালের ২৪ নভেম্বর নুরুদ্দিন ফারাহ ইতালিয়ান সোমালিয়াল্যান্ডের বাইদোয়ায় জন্মগ্রহন করেন। বাবা হাসান ফারাহ ছিলেন মার্সেন্ট আর মা আলীলি ফাদুমা ছিলেন একজন স্বভাব কবি। সোমালিয়া ও প্রতিবেশী দেশ ইথিওপিয়ার স্কুলে ছোটবেলায় ফারাহ পড়াশুনা করেন। তিনি ইংরেজি, আরবি ও আমহারিক ভাষায় পড়াশুনা করেন। ১৯৬৩ সালে সোমালিয়ার স্বাধীনতার সময় সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফারাহকে জোরপূর্বক ওগাডেন-এ নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়। তারপর থেকে বিভিন্ন দেশে তিনি বসবাস করেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করছেন।

নুরুদ্দিন ফারাহ’র প্রথম উপন্যাস ‘ফ্রোম এ ক্রুক রিব’ ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়। যেখানে এক নোমাদ বালিকার সঙ্গে এক বুড়োর বিয়ে ঠিক হবার পর ওই বালিকা পালিয়ে যায়। ইউরোপ সফরের সময় ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘এ ন্যাকেট নিডেল’। এই বই প্রকাশের পর সোমালিয়ান সরকার ফারহ’র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তারপর টানা ২২ বছর তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। ভারতের চন্ড্রিগড়ের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ফিলোসফি, লিটারেচার ও স্যোসিওলজি’র উপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন।

তাঁর বিখ্যাত ট্রিলজি ‘সুইট অ্যান্ড সৌর মিল্ক’ (১৯৭৯), ‘সারডিন’ (১৯৮১) ও ‘ক্লোজ সেসাম’ (১৯৮৩)। এই তিনটি উপন্যাস একত্রে ‘ভ্যারিয়েশানস অন দ্য থিম অফ অ্যান আফ্রিকান ডিকটেটরশিপ’ নামে বহুল পরিচিত। এছাড়া তাঁর ‘ব্ল্যাড ইন দ্য সান’ বিখ্যাত উপন্যাস। তাঁর উপন্যাস ‘গিফটস’ ১৯৯৩ সালে এবং ‘সিকরেটস’ ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি লেখেন পরবর্তী ট্রিলজি ‘লিংকস’ (২০০৪), ‘নটস’ (২০০৭) ও ‘ক্রোসবোনস’ (২০১১)। তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘হাইডিং ইন প্লেইন সাইট’ ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। ফারাহ’র লেখা নাটকগুলো হলো- ‘এ ড্যাগার ইন ভ্যাকিউম’ (১৯৭০), ‘দ্যঅফারিং’ (১৯৭৫), ‘ইউসুফ অ্যান্ড হিজ ব্রাদার্স’ (১৯৮২), ‘টারটার ডেলাইট’ (১৯৮০) ও ‘এ স্প্রেড অব বাটার’ ইত্যাদি। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের শর্ট লিস্টে রয়েছেন সোমালিয়ার এই নির্বাসিত লেখক নুরুদ্দিন ফারাহ।

ben-okri-women-wordsএ বছর সাহিত্যে নোবেল পাবার শর্ট লিস্টে আছেন নাইজেরিয়ার লেখক বেন ওর্কি। বেন ওর্কিকে তুলনা করা হয় সালমান রুশদি ও গ্যাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কুয়েজের সঙ্গে। ওর্কি’র বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো- ‘ফ্লাওয়ার্স অ্যান্ড স্যাডোস’, ‘দ্য ল্যান্ডস্কেপস উইদিন’, ‘দ্য ফামিশড রোড’, ‘সঙস অব এনচ্যান্টমেন্ট’, ‘অ্যাস্টোনিসিং দ্য গডস’, ‘ড্যাঞ্জারাস লাভ’, ‘ইনফিনিট রিচেস’, ‘ইন আর্কাডিয়া’, ‘স্টারবুক’ ও ‘দ্য এজ অব ম্যাজিক’।


বেন ওর্কি’র আলোচিত বইগুলো হলো- ‘ইনসিডেন্ট ইন দ্য শ্রিন’ (ছোটগল্প), ‘স্টার্স অব দ্য নিউ কারফিউ’ (ছোটগল্প), ‘অ্যান আফ্রিকান এলিজি’ (কবিতা), ‘বার্ডস অব হ্যাভেন’ (প্রবন্ধ), ‘এ ওয়ে অব বিয়িং ফ্রি’ (প্রবন্ধ), ‘মেন্টাল ফাইট’ (কবিতা), ‘টেলস অব ফ্রিডম’ (ছোটগল্প), ‘এ টাইম ফর নিউ ড্রিমস’ (প্রবন্ধ), ‘ওয়াইল্ড’ (কবিতা) ইত্যাদি। ২০১৪ সালে ওর্কি’র ‘দ্য ম্যাডনেস অব রিজন’ উপন্যাস দিয়ে নির্মিত হয় ফিচার ফিল্ম ‘এন’। এর আগে ওর্কি ম্যান বুকার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও ডিগ্রি পেয়েছেন।

pepetela-women-wordsঅ্যাংগোলার কথাসাহিত্যিক পেপেটেলা এ বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের শর্ট লিস্টে রয়েছেন। পেপেটেলা নামে লিখলেও তাঁর আসল নাম আর্থার কার্লোস মাউরিসিউ পেসতানা ডোস সান্তোস। পর্তুগিজ অ্যাংগোলায় ১৯৪১ সালে পেপেটেলা জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো ‘মায়োম্বি’, ‘ইয়াকা’, ‘এ গ্লোরিওসা ফ্যামিলিয়া’, ‘লুইজি’, ‘ও কুয়াসে ফিম ডো মুন্ডো’, ‘ও প্লানালটো ই এ এস্টেপে’, ইত্যাদি। অ্যাংগোলার স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পেপেটেলার উপন্যাসে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে উঠে এসেছে। রাজনীতি, সমাজ, স্যাটায়ার, আর সন্ত্রাস পেপেটেলার লেখার বিষয়বস্তু। পেপেটেলার বিখ্যাত নাটক দুটি হলো ‘এ কোর্দা’ এবং ‘এ রিভোলটা দা কাসা দোস ইদোলোস’। এ বছর পেপেটেলা সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।

wilma-stockenstrom-women-woদক্ষিণ আফ্রিকার নাট্যকার ও কবি উইলমা স্টকেনস্ট্রম এ বছর সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার শর্ট লিস্টে রয়েছেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী জেএম কোয়েটজি সম্প্রতি উইলমারের উপন্যাস ‘দ্য এক্সপেডিশান টু দ্য বাওবাব ট্রি’ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এটি সারা বিশ্বে খুব আলোড়ন তোলে। ল্যাংগুয়েজ ও মেটাফোর ব্যবহারের পাশাপাশি উপন্যাসটি সার্বজনিন স্বাধীনতার কথা বলে। উপন্যাস লেখার পাশাপাশি উইলমা রেডিও নাটক লেখেন, কবিতা লেখেন। কিন্তু নিজে থিয়েটারে অভিনয় করেন। একজন থিয়েটারঅন্ত প্রাণ হলো উইলমা। এ বছর তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হলে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন।

mia-couto-women-wordsমোজাম্বিকের লেখক মিয়া কোউটো এ বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর শর্ট লিস্টে রয়েছেন। ২০১৪ সালে তিনি সাহিত্যের প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার নিউস্টাট ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য দুনিয়ায় তিনি ‘স্মাগলার রাইটার’ হিসেবে বিখ্যাত। তাঁর কন্ট্রাডিকটোরি ওয়ার্ডস, ভাষা এবং বিষয়বস্তুর জন্য তিনি ইতোমধ্যে সাহিত্যাঙ্গনে ঝড় তুলেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো ‘এ ভারান্দা দো ফ্রাঙ্গিপানি’, ‘মার মে কুইয়ার’, ‘ ভিন্টে ই জিঙ্কো’, ‘ও আলটিমো ভো দো ফ্লামিংগো’, ‘জেসুসালেম’, ‘এ কনফিসাও দা লিওয়া’ ইত্যাদি।

চলবে
লেখকের এ সংক্রান্ত অন্য লেখা পড়ুন-
কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-১)