খাদিজার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু খাদিজা তাতে সাড়া দেয়নি। সেই ‘অপরাধের’ শাস্তি হিসেবে খাদিজাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঘাতক বদরুল আলম। তার কথায়, খাদিজা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে পাত্তা না দেওয়ায় আমি তার ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। নগরের আম্বরখানার এক দোকান থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে চাপাতি কিনি এবং হত্যার উদ্দেশ্যেই তাকে কোপাই। ইচ্ছা ছিল ওখানেই তাকে শেষ করে দেয়ার।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের কথায় উঠে আসে এসব তথ্য।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ ছাড়া পরিবার, স্বজন বা সংগঠনের কেউ নেই বদরুলের পাশে। ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের দেখতে আসা স্বজনরাও তার দিকে তাকাচ্ছেন তির্যক দৃষ্টিতে। তাকে নিয়ে রূঢ় মন্তব্য করছেন।
বদরুল জানায়, সে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুনাইঘাতি কুম্ভবয়ন গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। ২০০৮-০৯ সেশনে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বর্তমানে অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর হলে সিট পায়নি। সেকারণে লজিং মাস্টার হিসেবে আশ্রয় জুটে সদর উপজেলার আউশা এলাকার সৌদী আরব প্রবাসী মাসুক মিয়ার নগরের জালালাবাদ এলাকার বাসায়। সেখানে মাসুক মিয়ার অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে খাদিজা আক্তার নার্গিসকে পড়ানোর নামে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে বদরুল। পড়ানোর নামে প্রেমের সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালাতে থাকে। রাজি না হওয়ায় নানা হুমকিও দেয়। এসব জানাজানি হলে তাকে একপর্যায়ে তাড়িয়ে দেয়া হয় বাসা থেকে। তখন সে গিয়ে উঠে শাহপরান হলে। এ সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করত।
তারপরও পিছু ছাড়ে না বদরুল। খাদিজাও তার প্ররোচনা কিংবা হুমকি কোন কিছুর কাছে হার মানেনি। বদরুলের ভাষায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর হলে সিট পাইনি। এ সময় লজিং ছিলাম নার্গিসদের বাড়িতে। এ সুবাদে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু পরে কথা রাখেনি নার্গিস। আমি তাকে নিয়ে সব সময়ই সিরিয়াস। কিন্তু সে আমার বেলায় ছিল একবারে উদাসীন। তাই তাকে শেষ করে দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
বদরুলের কথায় আক্রোশ ঝরে, আগেই আমি তাকে বলেছিলাম, আমার মায়ের বুক খালি হলে তোর মায়ের বুকও খালি করে যাব। তারপরও সে আমাকে অবজ্ঞা করেই চলতে থাকে। বদরুল দাবি করে, নার্গিস যে মোবাইল সিম ব্যবহার করত সেটা আমার নামে কেনা। ওই সিমের কললিস্ট সংগ্রহ করে দেখেছি, আমি ছাড়া অন্য সবার সঙ্গেই সে যোগাযোগ রাখছে। একমাত্র আমাকে, আমার ফোনের পাত্তা দেয় না সে। এসব কারণেই তার ওপর আমি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি।
ঘটনার দিনের বর্ণনায় বদরুল জানায়, সোমবার এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় চাপাতিটি সঙ্গে থাকা ব্যাগে লুকিয়ে রাখি। পরীক্ষা শুরুর আগেই এমসি ক্যাম্পাসে পৌঁছাই। ওর কাছে গিয়ে কথা বলি। কিন্তু সে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দেয়নি। এতে আমি আরও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠি। পরীক্ষা শেষে নার্গিসকে হল থেকে বেরিয়ে আসতে দেখি। তাকে মসজিদের পাশে দেখে কাছে ভিড়তে থাকি। কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু সে এবারও পাত্তা দিতে চায় না। উল্টো রূঢ় আচরণ করে। আমি ব্যাগ থেকে চাপাতি বের করে তাকে কোপাতে থাকি। ইচ্ছা ছিল ওখানেই তাকে শেষ করে দেয়ার। কিন্তু লোকজন নার্গিসকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় আর আমাকে গণপিটুনি দিতে শুরু করে।
জানা গেছে এর আগেও একবার নার্গিসকে প্রাণে মারতে চেয়েছিল এই বদরুল। ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি শহরতলীর টুকেরবাজারে দা হাতে নার্গিসকে মারতে এলে এলাকাবাসী ধরে তাকে পিটুনি দেয়। মান বাঁচাতে তখন শিবির মেরেছে বলে ক্যাম্পাসে প্রচার করে বদরুল। তারপর থেকে ক্যাম্পাসে খুব একটা দেখা যায়নি তাকে। এমনকি বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গেও খুব বেশি মিশত না সে। শিক্ষাজীবন সম্পন্ন না করেই সে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
বেশ কিছুদিন পর সে ছাতকের আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করে। এ সময় বদরুল আবার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় নার্গিসের সঙ্গে। বদরুলের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায় ঘটনা ঘটানোর কিছু আগে সর্বশেষ পোস্ট করেছে সে। সেখানে লিখেছে, ‘নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষগুলোর কাছে আমি সবিনয়ে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া কেউ আপন নয়।’
বদরুলের হামলায় গুরুতর আহত নার্গিস বর্তমানে স্কয়ার হসপিটালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মেয়ের এ সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা মনোয়ারা বেগম। তার আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়ি। গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসছেন সেখানে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ, যুগান্তর
এ সংক্রান্ত অন্য সংবাদ পড়ুন-
চাপাতির কোপে আহত ছাত্রী লাইফ সাপোর্টে