রিশা হত্যা: খুনিকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি - Women Words

রিশা হত্যা: খুনিকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি

বখাটের ছুরিকাঘাতে নিহত সুরাইয়া আক্তার রিশার (১৪) হত্যাকারীকে আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তাঁর স্কুল সহপাঠীরা। সন্দেহভাজন খুনি ওবায়দুলকে না পেয়ে তাঁর বোন ও ভগ্নিপতিকে আটক করেছে পুলিশ।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সোয়া তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা। অবরোধের কারণে কাকরাইলসহ আশপাশের সড়কে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়।

অবরোধ শেষে শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারে সময় বেঁধে দেন। পাশাপাশি  আগামীকাল বুধবার নিজেদের স্কুলে দোয়া ও শোকসভা এবং ১ সেপ্টেম্বর সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।

এদিকে ওবায়দুলের বোন মোছা. খাদিজা বেগম (৩৬) ও ভগ্নিপতি মো. খাদেমুল ইসলামকে (৪৬)  দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মিরাটাঙ্গী গ্রাম থেকে আটক করেছে পুলিশ।

বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাছ আহম্মদ বলেন, ঢাকার রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোশারফ হোসেন বীরগঞ্জ থানা-পুলিশের সহযোগিতায় গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওবায়দুল খানের মিরাটঙ্গী গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালান। তাকে পাওয়া যায়রি। পুলিশ মনে করছে, অল্পের জন্য ফসকে গেছেন ওবায়দুল। স্থানীয় লোকজন পুলিশকে জানিয়েছিল যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে তাঁকে দেখা গেছে। পাশের বাড়ি থেকে বোন ও ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রমনা থানার পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওবায়দুল খানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রমনা থানার উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ওবায়দুল যেন পালাতে না পারে, এ জন্য গতকাল সোমবার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ওবায়দুলের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জে অভিযান চালানো হয়েছিল। হত্যার পর সে সেখানে অবস্থান করেছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে তার ছবি প্রকাশ হলে সে গ্রামের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলের সামনের পদচারী-সেতু পেরিয়ে নিচে নামছিল রিশা।  সেখানেই পেটে ও হাতে ছুরিকাঘাতের শিকার হয় সে। ঘটনার পর রক্তক্ষরণে দুর্বল ও অচেতন হয়ে পড়ে রিশা। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে রোববার সকালে মারা যায় রিশা।

সে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির বাংলা ভার্সনের ছাত্রী ছিল। সে কাকরাইল এলাকার রমজান হোসেনের মেয়ে। যিনি পেশায় একজন কেবল অপারেটর।

রিশার মৃত্যুর দিন তার মা তানিয়া হোসেন জানান, মাস ছয়েক আগে ইস্টার্ন মল্লিকার বৈশাখী টেইলার্সে জামা বানাতে দিয়েছিল রিশা। যোগাযোগের জন্য তাঁর (রিশার মা) মুঠোফোন নম্বর রেখেছিলেন ওই দোকানের কর্মচারীরা। ওই নম্বরে ফোন করে দোকানের কর্মচারী ওবায়েদ রিশাকে উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি জানতে পেরে নম্বরটি বন্ধ করে দেন তিনি। এরপর থেকে ওবায়েদ রিশাকে  স্কুলের সামনে উত্ত্যক্ত করছিল বলে তিনি শুনেছেন। ওবায়েদই তাঁর মেয়েকে হত্যার জন্য ছুরিকাঘাত করেছেন বলে তাঁর সন্দেহ। এ ঘটনায় বুধবার রাতেই তার বিরুদ্ধে মামলা করেন রিশার মা।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে রিশা হাসপাতালে জবানবন্দিতে বলেছে, বখাটে ওবায়েদ তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেছে। হামলার আগের দিনও সে তার পিছু নিয়েছিল।

তবে পুলিশ জানতে পারে ওবায়েদ দুই মাস আগে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। বৈশাখী টেইলার্সের চার কর্মচারীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো