জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। রোববার ছাত্রলীগের কয়েক দফা হামলায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম, অনিমেষ সাহা, রাইসুল ইসলাম, আল আমিনসহ আন্দোলনরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট চলছে। সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে সকাল সাড়ে আটটার দিকে শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হন। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষদে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ নেতা-কর্মীরা সকাল নয়টার দিকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা দেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন তাঁরা। তখনওই শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন অনুষদে চলে যান।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্লোগান দেন। বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাঁরা তখন মাইক নিয়ে নিতে চান। শিক্ষার্থীরা এতে বাধা দিলে ছাত্রলীগ কর্মীরা আবারও তাঁদের মারধর করেন। এতে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মেহরাব আজাদ, সাধারণ শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বি, অনিমেষ রায়, মোহাম্মদ রাজন।
বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার সড়ক অবরোধ করেন। তাঁদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে এখানেও কয়েকজনকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থানে থাকায় পিছু হটে ছাত্রলীগ। বেলা দেড়টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অবকাশ ভবনের ক্যানটিনে সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ। ফলে সংবাদ সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কাউকে মারা হয়নি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। তবে কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সে বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে।
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের একটি ফেইসবুক পেইজের আহবানে গত ২ আগস্ট থেকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের জায়গায় হলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে বাম সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পেইজটি থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপরেও আন্দোলন অব্যাহত থাকলে ছাত্রলীগ নেতারাও তাতে যোগ দিতে চান।
পল্টন মোড়ে অবস্থান ধর্মঘট পালনকালে গত বুধবার ছাত্রলীগ সভাপতি শরীফুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হাতাহাতিও হয়।
ফেইসবুকে বাম সংগঠনের কর্মীরা ছাত্রলীগকে এই আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রচার চালিয়ে আসছে। তবে ছাত্রলীগ দাবি করছে, আন্দোলনকারীদের সিংহভাগই তাদের।
সূত্র: প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪