মাদক ‍যুদ্ধের একজন নারী ঘাতক - Women Words

মাদক ‍যুদ্ধের একজন নারী ঘাতক

দায়িত্ব নেয়ার পর পরই মাদকের বিরুদ্ধে লোমহর্ষক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দোতার্তে। ফলশ্রুতিতে এক সপ্তাহেই কমপক্ষে দুই হাজার ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে। যারা এই খুনগুলো করছেন, তাদের মধ্যে এক নারী ঘাতকের নাম  মারিয়া। অবশ্য এটি তার ছদ্ম নাম। 

বিবিসি অনলাইনের খবরে প্রকাশ পেয়েছে, সরকারের পক্ষ হয়ে মাদক বিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসাবে টাকার বিনিময়ে তিনি অন্তত ছয়টি খুন করেছেন। মারিয়াকে দেখে খুনী বলে মনে হবে না, বরং  তাঁকে একজন ভীত,স্বন্ত্রস্ত নারী বলে মনে হবে। যার কোলে রয়েছে একটি শিশুও।

মারিয়া ব্রিটিশ এই গণমাধ্যমকে বলেন, কাছাকাছি একটি প্রদেশে দুইবছর আগে তিনি প্রথম খুন করেন। প্রথমবার বলেই তার সত্যি খুব ভয় লেগেছিল।

যে ‘হিট টিমে’ মারিয়া কাজ করেন, সেখানে মোট নারীর সংখ্যা তিনজন। একজন পুরুষের তুলনায় কোন সন্দেহ তৈরি না করেই তারা শিকারের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারেন, তাই তাদেরকে দলে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়।

কে এসব হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, জানতে চাইলে মারিয়া বলেন, “আমার বস, পুলিশের একজন কর্মকর্তা”।

পুলিশের নির্দেশে ঘাতক হিসাবে কাজ করতেন মারিয়ার স্বামী। একদিন সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের মনে হলো, তাদের একজন নারী খুনী দরকার।

মারিয়া জানান, “একদিন তাদের একজন মহিলার দরকার হলে, আমার স্বামীই সেই কাজের জন্য আমাকে ফাঁদে ফেললেন। কাজ নামার পর যখন আমি সেই ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যাকে আমার খুন করার কথা, তার কাছাকাছি গিয়ে আমি গুলি করলাম।”

মারিয়া এবং তার স্বামী এসেছেন ম্যানিলার কাছাকাছি একটি এলাকা থেকে। টাকার বিনিময়ে খুনের কাজ শুরুর আগে  নিয়মিত কোন আয়-রোজগারও ছিল না তাদের। এখন প্রতি হত্যার জন্য তারা ৪৩০ ডলার করে পান। এই অর্থ দলের আরো তিন চারজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয়। নিম্ন আয়ের ফিলিপিনোরা এটাকে একটি আর্শীবাদ বলে মনে করেন। কিন্তু মারিয়ার জন্য এটি একটি মরণ ফাঁদ, কারণ এ থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় তাঁর নেই।

চুক্তির বিনিময়ে হত্যাকাণ্ড এই দেশটিতে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখনকার মতো এত ব্যস্ত সময় তারা আর কখনোই কাটায়নি। কারণ প্রেসিডেন্ট দোতার্তে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। নির্বাচিত হলে প্রথম ছয়মাসেই তিনি এক লক্ষ অপরাধীকে হত্যা করবেন বলে নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছে। কিন্তু ফিলিপাইনের স্থানীয় মানুষের কাছে তার এই অভিযান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এই অভিযানের কারণে যারা মৃত্যুভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের একজন রজার, যদিও তারও এটি আসল নাম নয়।

তরুণ বয়সে শাবু নামের অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন এবং মাদক বিক্রিও শুরু করেন। অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও রজারের সখ্যতা ছিল। কিন্তু এখন তিনি প্রতিদিন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

রজার বলেন,“আপনার সামনেই যে ব্যক্তি দঁড়িয়ে আছে, সেই গিয়ে আপনার সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দেবে কি না, বা আপনাকে খুন করবে কি না, আপনি জানেন না। রাতেও ঘুমাতে পারিনা। সামান্য একটি শব্দেই জেগে উঠি। সবচেয়ে কষ্টকর ব্যাপার হলো, কাউকেই  বিশ্বাস করতে পারি না আমি।”

নিজের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হলেও সেই ভুল শোধরানোর আর কোন রাস্তা খোলা আছে কিনা, তা জানা নেই রজারের।

কিন্তু গুপ্ত ঘাতকদের মধ্যেও অপরাধবোধ তাড়া করছে। মারিয়া বলেন, ‘’আমি নিজেই অপরাধবোধে ভুগি’’। এই কাজে তার সন্তানরা আসুক বা তাদের কাজ সম্পর্কে জানুক, সেটা চাননা তিনি।

তবে চাইলেও ভাড়াটে খুনীর পেশা থেকে বেরিয়ে আসাও মারিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তার বস  অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তা তাদের হুমকি দিয়েছেন, কেউ যদি এই দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তাকেও হত্যা করা হবে।

তাই মারিয়ারও মনে হয়, তিনি যেন ফাঁদে আটকে রয়েছেন। সূত্র : বিবিসি