চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামির পরলোকগমন - Women Words

চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামির পরলোকগমন

ইরানের বিখ্যাত ও গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামি (৭৬) মারা গেছেন। সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্যারিসের একটি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। ইরানের বার্তা সংস্থা গুলোর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
৪০ টির বেশি সিনেমা নির্মাণ করেছেন তিনি। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তাঁর ‘টেস্ট অব চেরি’ সিনেমাটি ১৯৯৭ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পাম ডি ওর (স্বর্ণ পাম) জিতে নেয়। তার অন্য উল্লেখযোগ্য সিনেমা ক্লোজআপ, দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস, সার্টিফায়েড কপি, শিরিন, লাইক সামওয়ান ইন লাভ প্রভৃ্রিতি।
তাঁর মৃত্যুর পর খ্যাতিমান ইরানি চলচ্চিত্রকার মোহসেন মাখমালবাফ বলেছেন, পুরো পৃথিবীই তাঁর অসাধারণ কাজের কথা জানে, কিন্তু নিজের দেশে তা পুরোপুরি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিয়ারোস্তামির মাধ্যমেই ইরানি ছবি আন্তর্জাতিক সুনাম পেয়েছে। কিন্তু ইরানে তাঁর ছবিগুলোর প্রদর্শনী সেভাবে হয়নি। তিনি চলচ্চিত্রের ভাষা পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, হলিউডি ছবির তুলনায় চলচ্চিত্রকে মানবিক করে তুলেছেন। তিনি ছিলেন জীবনীশক্তিসম্পন্ন একজন মানুষ। তিনি জীবনকে ভালোবাসতেন এবং তাঁর চলচ্চিত্রে জীবনেরই জয়গান গেয়েছেন, তাই মৃত্যুর সঙ্গে তাঁকে মেলানো যায় না। তাঁর মৃত্যুকে মানা যায় না।
চলচ্চিত্র পরিচালক আসগর ফরহাদি বলেছেন, কিয়ারোস্তামি শুধুই একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আধুনিক মরমি কবি। চলচ্চিত্রে ও ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন মরমি। তিনি অন্যদের জন্য পথ তৈরি করে গেছেন। শুধু চলচ্চিত্র জগৎই একজন মহান নির্মাতাকে হারাল না, পুরো পৃথিবীই একজন সত্যিকার মহান মানুষকে হারাল।
১৯৪০ সালের ২২ জুন তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন কিয়ারোস্তামি। তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ইরানের টেলিভিশনের জন্য কমার্শিয়াল তৈরি করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে তিনি দ্য সেন্টার ফর দ্য ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট অব চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়ং অ্যাডাল্ট (কানুন) এর চলচ্চিত্র বিভাগে যোগ দেন। তাঁর প্রথম ছবি দ্য রিপোর্ট নির্মিত হয় ১৯৭৭ সালে। ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লব হয়, তখন অনেক শিল্পীই দেশ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কিয়ারোস্তামি ইরানেই থেকে গিয়েছিলেন। নতুন সরকারের কঠোরতার মধ্যেই তিনি নিজের কাজ করে যাচ্ছিলেন। মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় আসার পর কিয়ারোস্তামি তাঁর সিনেমার শুটিং ইরানের বাইরে করতেন।
তাঁর নির্মিত ট্রিলজি হল হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম (১৯৮৭), লাইফ অ্যান্ড নাথিং মোর… (১৯৯২) ও থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ (১৯৯৪)।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে ২০১২ সালে লাইক সামওয়ান ইন লাভ ছবিটি দেখানো হয়। ফিল্মমেকার পত্রিকায় তখন তাঁর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল। এতে তিনি বলেন, ‘সিনেমার শুরু আর শেষ আসলে আমাদের একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। ধরেন, এটা একটা নব্বই মিনিটের ফুটবল ম্যাচ। এর বেশিও না, এর কমও না। আমরাই ঠিক করে দিচ্ছি, দর্শক কতক্ষণ থাকবে। সিনেমার বেলায়ও তা-ই। কিন্তু পরিচালকের তো কিছু দায়বদ্ধতা থেকে থাকে। তাই তাকে গল্প শুরু আর শেষ করার একটা জায়গা বেছে নিতেই হয়।
সূত্রঃ প্রথম আলো