থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাসনিম - Women Words

থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাসনিম

থাইল্যান্ডের যান্ত্রিক নগরে তিনি খুঁজে ফেরেন হলুদ সরিষা ক্ষেত, পুকুর পাড়ে এক কাটির উপর শিমের বাগান, পিঠা বানানোর ঢেঁকিতে চাল গুড়া করার দৃশ্য। শৈশবের গ্রামের বাড়ির স্মৃতিগুলো সুদূর থাইল্যান্ডে গিয়ে তাঁর মনের জানালায় উঁকি দেয়। তিনি আনমনা হন। ফিরে যেতে চান শৈশবের গ্রামে। সেখানে বসেই ভাবেন আগামীর চট্টগ্রামকে নিয়ে।
তিনি বাংলাদেশের মেয়ে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মেয়ে সাঈদা মুনা তাসনিম। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন এই কৃর্তিময়ী। ব্যাংককের সুখুমভিতের আকামাই গলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বসে যখন কথা বলছিলেন তখন বাইরে ঝুঁম বৃষ্টি। কাজলকালো আকাশ হয়তো তাকে আরো বেশি আপ্লুত করছিল। উস্কানি দিচ্ছিল শৈশবে ফিরে যাওয়ার। Untitled-1
ছোটবেলা প্রতিবছর শীতকালে আমরা গ্রামের বাড়িতে যেতাম, বলছিলেন মুনা। বর্ণনা দিচ্ছিলেন ফেলে আসা দিনগুলোর, ‘শীতকালে ভোরে উঠে খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নিয়ে ঘরে ফেরা, নারকেল আর চালের গুড়া দিয়ে পিঠা বানিয়ে খেজুরের রস দিয়ে খাওয়া, কোরবানির ঈদে প্রতিবেশিদের কাছে গিয়ে গোশত ভিক্ষা করে আনা, পুকুরে জাল ফেলে বাবা-চাচাদের বড় বড় মাছ ধরা সবকিছু আমি ভীষণভাবে মিস করি।’ আরো মিস করি, ‘সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে পায়ে হেঁটে ওঠা, বাড়বকুণ্ড, বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে ঘুরে বেড়ানো, বাড়ি থেকে কয়েক মিনিট হেঁটে সাগর পাড়ে চলে যাওয়া, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, রামুতে বৌদ্ধদের প্যাগোডাগুলো, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির।’
সাঈদা মুনা তাসনিমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জাফরনগরে। বাবা সরকারি চাকরি করতেন, সেই সূত্রে ঢাকায় তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা।  বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে প্রথমে যোগ দেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনে প্ল্যানিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।  ১৯৯৩ সালে যোগ দেন ফরেন ক্যাডারে।  লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে, নিউইয়র্ক জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে আছেন থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে।  তিন সন্তানের জননী সাঈদা মুনা তাসনিমের শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশে।
চট্টগ্রাম নিয়ে ছবি বানাতে চাই
প্রগতিশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা সাঈদা মুনা তাসনিম ছায়ানটে দুই বছর গান শিখেছেন। সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষাটা পেয়েছেন পরিবার থেকেই। চট্টগ্রামে সূর্য সেন-প্রীতিলতাদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ সাঈদা মুনাকে গভীরভাবে আবেগতাড়িত করে। সেই ইচ্ছা থেকেই তিনি ছবি বানানোর স্বপ্ন দেখেন।
‘আমার ইচ্ছা কোন একসময় চট্টগ্রামকে নিয়ে একটা ছবি বানাব। সূর্য সেন, প্রীতিলতাদের বীরত্বগাঁথা, চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বঙ্গবন্ধুর মূলনীতিকে চট্টগ্রাম যেভাবে লালন করে, অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের কথা সেই ছবিতে তুলে ধরবো।’ বলেন সাঈদা মুনা।

 

তথ্য- বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে