দু'ঘণ্টা যেন দুই দিন... - Women Words

দু’ঘণ্টা যেন দুই দিন…

ফাহিমা নিপা

বিপদে পড়লে মানুষের বু্দ্ধি শুধু লোপ পায় না সেই সাথে অসংখ্য দুশ্চিন্তাও মাথায় ভর করে। কার সামনে কখন বিপদ এসে হাজির হয়, কেউ বলতে পারে না। যেমনটা আমার বেলায় ঘটে গেলো!

রান্না ঘরে কাজ করছি, ছেলে ইহতিশাম আমাকে ডাকতে ডাকতে আমার কাছে এল। এসেই রান্না ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল এবং দরজা লক হয়ে গেল। যদিওবা এই দরজায় লক সিস্টেম নেই, তারপরেও কীভাবে লক হল, সেটাই বোধগম্য হল না। অনেক চেষ্টা করলাম খুলতে, ব্যর্থ হলাম। ফায়সাল বাসায় নেই, জরুরি কাজে বাইরে গেছে।

এদিকে আমার সাথে মোবাইলও নেই; রান্না ঘরে প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল নেয়া হয় না এমনিতে। ওপরদিকে মেয়ে সাফা কান্না করছে বেডরুমে। একদিকে মেয়ের কান্না অন্যদিকে ছেলে তাড়া দিচ্ছে ড্রয়িংরুমে গিয়ে কার্টুন দেখবে। আবার দুশ্চিন্তা করছি যদি আগুন ধরে বা পানির টেপ লিক হয় তাহলে কীভাবে বের হব…!

মেয়ের বয়স ৮ মাস। সে বেডরুমে বেডে আছে না পড়ে গেছে। মোবাইল থাকলে জরুরি নাম্বারে কল করে সাহায্য চাইতাম। কিন্তু সেটাও পারছি না। অবশেষে জানালা খুলে অনেক জোরে চিৎকার করে সাহায্য চাইলাম এক ভদ্রলোকের কাছে। তিনি আবার ইংলিশ বোঝেন না।
ওদিকে আমিও যে ভালো করে ফ্রেঞ্চ বলতে পারি না; সবে শিখছি মাত্র। আবার আমি ৬ তলায় আর তিনি নীচ তলায়। সে কারণে আমার কথাও শুনছেন না ভালো করে। যাক, বুঝালাম কোনও রকমে যে, আমি রান্না ঘরে আটকা পড়েছি। তিনি সাথে সাথে কল করলেন ফায়ার সার্ভিসে। ফরাসিরা যেটাকে ‘পম্পিয়ার’ বলে থাকে। ইতোমধ্যে দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। ফায়সালও এসে চেষ্টা করলো দরোজা খুলতে। না পেরে ফোন করল আমাদের সোশাল ওয়ার্কার সারাকে। তিনিও এসে হাজির ১০ মিনিটের মধ্যে। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরাও ততক্ষণে হাজির। দরজার লক ভাঙলো তারা। আমরা মা ছেলে বের হলাম। আহ, কী প্রশান্তি! দু’ঘণ্টা যেন মনে হল দুই দিন…।

গভীরভাবে অনুভব করলাম, মুক্ত তথা স্বাধীন প্রাণীর অপার সুখ এবং বন্দি তথা পরাধীন প্রাণীর অসীম কষ্ট। পার্থক্য নিরূপিত হল স্বাধীনতা ও পরাধীনতার সংজ্ঞা। আসুন, কোনও পাখি বা প্রাণীকে বন্দি না-করার মানবিক প্রতীজ্ঞা করি।