শুভশ্রীর প্রতিদিন... - Women Words

শুভশ্রীর প্রতিদিন…

শবনম সুরিতা ডানা

শুভশ্রীকে দেখতে বেশ। সে যে রঙের কাপড়ই গায়ে মেলে ধরুক না কেন, তাতে রঙের না শুভশ্রীর কার ঔজ্জ্বল্য আসলে বাড়ে, তা বলা মুশকিল। সে ঘরে এসে ঢুকলে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনেরা খানিক হলেও থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শুভশ্রীর ফিরে তাকানোর ওপর অন্তত জনা দশেক মানুষের নিত্যরাতের ঘুম নির্ভর করে চলে। মোট কথা, মানুষ সুন্দরী বলতে যা জানে, বোঝে, সেই অপশনগুলির পাশের বাক্সে নিয়মমাফিক ‘টিক’ চিহ্ন মেরে যাওয়া সুন্দরীদের দলের স্থায়ী বাসিন্দা এই শুভশ্রী।

কিন্ত বিষয়ে সে মোটেও বিরক্ত নয়। তার ভালোই লাগে বেশ। পুজোর বাজারের ভিড়ে যদি অন্যদের ফেলে দোকানদার তাকে এসে খাতির করে, এতে রাগ করার কি কিছু থাকতে পারে কখনো? নাহ, শুভশ্রী তখনও রাগ করতে জানত না। তবে একদিন আর পারা গেল না।

শুভশ্রী আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। স্বভাবতই তার স্বজনেরা যথেষ্ট পরিমাণে উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত। কিন্ত কানের পাশে নাছোড়বান্দা একটা কন্ঠস্বর অবিরাম বিড়বিড় করে চলেছে, ‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র!’
প্রথমে অতটা খারাপ লাগেনি কিন্ত শুভশ্রীর। মানুষ মানুষকে সুন্দর বললে খুশি হতে হয়, এতা তার জানা। সুতরাং সেও খুশি। কিন্ত চায়ের কাপে বেশী চিনি হলে যা হয় আর কি। দাঁতে শিরশির এক্ষেত্রেও।

শুভশ্রী কি তাহলে কেবলই সুশ্রী? তার চেহারা, শারীরিক গঠন, উজ্জ্বল বর্ণই কি তার সারা জীবনের একমাত্র সাফল্য? একমাত্র সম্বল? তুলনায় তার মেধা, পরিশ্রম, ব্যক্তিত্ব সবই কি ফিকে, অপ্রয়োজনীয়, বাড়তি? তার সারাটা জীবন কি শুধুই শুভশ্রীর নাম-মাহাত্ম্যের জয়গান হয়েই সীমিত?

শুভশ্রীর দিকে অনেকে তাকায়, যার যেমন খুশি। কেউ কিন্ত আসলে তাকে দেখতে পায় না।

শুভশ্রীর আজকাল তাই মন খারাপ। তাড়াতাড়ি ঘুমোতে চলে যায় রোজ। জোর করে ঘুম আনে চোখের পাতায়। আর ঘুম ভাঙলে সকালবেলা বাথরুমের আয়নায় নিজের দিকে তাকায়। ঘুমের ঘোরে আজকাল সে নিজেকে অন্য অন্য নামে ডাকে। কখনো চিত্রাঙ্গদা, কখনো চানু। যখন যেমন খুশি।

তখনই শুভশ্রী নিজেকে দেখতে পায়। যেমন ভাবে আর কেউ দেখেনি কখনো তাকে।

বড় একা। অথচ কী ভীষণ সুন্দর!