যৌন হয়রানি, বৈষম্য,সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারী সাংসদরা - Women Words

যৌন হয়রানি, বৈষম্য,সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারী সাংসদরা

বিশ্বব্যাপি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারী সংসদ সদস্যরা। নারী সাংসদদের কাজের ক্ষেত্রে বৈষম্য, যৌন হয়রানি এবং সহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসদ সদস্যদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে তা প্রকাশ পেয়েছে।

আইপিইউ মনে করে, এর ফলে জেন্ডার সমতা ব্যাহত হচ্ছে এবং গণতন্ত্রের ভীত দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বিশ্বের ৫টি অঞ্চলের ৩৯টি দেশের ৫৫ জন নারী সংসদ সদস্যের সাক্ষাতকার নিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালনা করে আইপিইউ । এতে বিভিন্ন পর্যায়ে মানসিক, যৌন এবং শারীরিক নির্যাতনের সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে।

গবেষণায় অংশ নেয়া এমপিদের ৮১ শতাংশের বেশি কোন না কোনভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

৪৪ শতাংশ বলেছেন মৃত্যুর হুমকি যেমন পেয়েছেন, তেমনি ধর্ষণ, মারধর কিংবা অপহরণের হুমকিও পেয়েছেন। এমনি সন্তানদের হত্যা কিংবা অপহরণের হুমকিও এসেছে।

আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন চুংগং বলেছেন, “এটি কিছুসংখ্যক নারী এমপিকে নিয়ে করা একটি জরিপ হলেও, এটা পরিস্কার যে এই সমস্যা আরও অনেক বিস্তৃত এবং আমরা যা ধারণা করি তার চেয়েও বেশি ঘটনা খবরের বাইরে থেকে যাচ্ছে”।

তিনি বলেন, “পার্লামেন্টারি কমিউনিটিকে বৈষম্য এবং হয়রানির বিরুদ্ধে আরো বেশি মুখ খুলতে হবে এবং রাজনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ততার মূল্য হিসেবে এটা যে কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না- সেটি খোলাসা করতে হবে”।

গবেষণায় অংশ নেয়া ইউরোপীয় একজন এমপি জানান, সামাজিক মাধ্যম মানসিক হেনস্থার একটি বড় ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, ” একবার আমাকে টুইটারে টানা চার দিন ধরে ৫শ’রও বেশি ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়”।

এশিয়া অঞ্চলের একজন সংসদ সদস্য তার অভিজ্ঞতায় বলেন, ” আমাকে আমার ছেলের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য যেমন তার বয়স, তার স্কুল, সে কোন শ্রেণীতে পড়ে ইত্যাদি লিখে তাকে অপহরণের হুমকি দেয়া হয়”।

যৌন নির্যাতনকে তারা বর্ণনা করেছেন অনেকটা “সাধারণ চর্চা” হিসেবে। কুড়ি শতাংশ নারী এমপি তাদের সাথে যৌন নির্যাতন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এবং তার সাত ভাগের বেশি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বলেও জানান।

শারীরিক নির্যাতনের কারণে আহত হওয়ার কথাও এসেছে। সংসদে নারী সদস্যদের ওপর পুরুষ এমপিদের মুরুব্বিয়ানা দেখানোর অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন সদস্যই বলছেন, নারী সদস্যরা উচ্চস্বরে কথা বললে যেভাবে মুখে আঙ্গুল দিয়ে থামতে ইঙ্গিত দেয়া হয় পুরুষদের বেলায় তেমনটি কখনও হয় না।

নারীর প্রতি বৈষম্যের বিষয়টিও উঠে আসে সমানভাবে। সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৬৫ শতাংশের বেশি নারীকে তাদের বিভিন্ন সময় অবমাননাকর মন্তব্য শুনতে হয়েছে।

নারী এমপিদের বক্তব্যে যেসব বিষয় উঠে এসেছে তার বিষয়ে পরিকল্পনা ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দেশের সংসদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইপিইউ।

আইপিইউ বলছে, এসব বিষয়ে সমাধান পেতে হলে এই সমস্যা যে রয়েছে সে বিষয়ে মুখ খুলতে হবে এবং নিরবতা ভেঙে এসব হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো প্রকাশ করতে হবে। সেজন্য সকল নারী ও পুরুষ সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার কথা বলা হচ্ছে এমপিদের এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে।