বিরোধের জের ধরে কক্সবাজারে বৌদ্ধভিক্ষুর উপর হামলা - Women Words

বিরোধের জের ধরে কক্সবাজারে বৌদ্ধভিক্ষুর উপর হামলা

কক্সবাজারের অগ্গমেধা বৌদ্ধবিহারের ভেতরে উপেনদিতা মহাথের (৭৭) নামে এক বৌদ্ধভিক্ষুর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে আরেক বৌদ্ধভিক্ষু আজ বুধবার ভোরে এই হামলা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আহত উপেনদিতা মহাথেরকে (৭৭) কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বৌদ্ধবিহারের ভেতরে থাকা দ্বিতলবিশিষ্ট ‘উইমাহ্লাটারা ক্যাং’-এর ভিক্ষু।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, লাঠি বা লোহার রড দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে। উপেনদিতার মাথা কেটে গেছে। তাঁর হাত ও পায়ে আঘাত আছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন,মং য়াই ছিন নামের আরেক ভিক্ষু এই হামলা করেছেন। বিহারের জমি বিক্রির টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে উপেনদিতার ওপর এই হামলা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

উপেনদিতা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, মং য়াই ছিনের সঙ্গে উইমাহ্লাটারা ক্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাঁর বিরোধ রয়েছে। সম্ভবত এ কারণে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে মং য়াই ছিন এই হামলা চালিয়েছেন বলে জানান উপেনদিতা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে রক্তের ছড়াছড়ি। ভিক্ষু উপেনদিতার শয়নকক্ষেও রক্তের দাগ। আসবাবপত্র এলোমেলোভাবে পড়ে আছে।

এদিকে, আশপাশের রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন হামলার খবর পেয়ে বিহারে ছুটে আসেন।

কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অং চাই বিহারের নিচের তলার একটি কক্ষে ভাড়া থাকেন। তিনি জানান, ভোরে ভিক্ষুর চিৎকারে তাঁর ঘুম ভাঙে। দরজা খুলে তিনি ওপরে উঠতে চাইলে গেরুয়া কাপড় পরা এক ব্যক্তি তাঁকে বাধা দেয়। ভয় দেখিয়ে অং চাইকে নিজ কক্ষে ফেরত পাঠানো হয়। পরে তিনি বিহার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মুঠোফোনে ঘটনাটি জানান। তাঁরা ঘটনাস্থলে আসার আগেই হামলাকারী পালিয়ে যায়।

নয় বছরের শিশু চা চে কয়েক বছর ধরে উপেনদিতা ভিক্ষুর সঙ্গে থেকে তাঁর সেবা করে আসছে। শিশুটির বাড়ি রাঙামাটির খাওখালী এলাকায়। চা চের ভাষ্য, ভোরে একজন এসে উপেনদিতাকে ডাকতে থাকে। দরজা খুলে লাল কাপড় পরা এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। তিনি বিহারের ভেতরে ঢুকে উপেনদিতাকে একটি কাপড় দেন। এরপর নাশতা আনার জন্য তাকে (চা চে) টাকা ধরিয়ে বাইরে পাঠানো হয়। ফিরে এসে দেখা যায়, উপেনদিতা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আগত লোকটিকে আর দেখা যায়নি।

জেলা আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মং টে লার ভাষ্য, বৌদ্ধসম্প্রদায়ের দুটি পক্ষের মধ্যে বিহারের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলও আছে। এর জের ধরে মং য়াই ছিন এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারেন। মং য়াই ছিন ভিক্ষু হলেও তিনি শহরের গোল দিঘিরপাড়ে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ সকাল নয়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তিনি হামলার বিষয় নিয়ে বৌদ্ধ (রাখাইন) সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে শ্যামল কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারী ভিক্ষু মং য়াই ছিন ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাঁকে ধরতে অভিযান চলছে।

সূত্রঃ প্রথম আলো