আঁধার পেরুনো ইউসরার আলোকময় দিন - Women Words

আঁধার পেরুনো ইউসরার আলোকময় দিন

ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা এখনও কলজে হিম করে দেয় ইউসরা মারদিনি। গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত মাতৃভূমি সিরিয়া ছেড়ে তাঁর পরিবার তখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ইউরোপের দিকে পাড়ি জমিয়েছিল। আতঙ্ক, হাহাকার আর মর্মন্তুদ বেদনার মধ্যেই ঘনিয়ে এল আরেক বিপদ। মাঝসমুদ্রে ভিড়ের চাপে ইউসরাদের নৌকাটি তখন প্রায় ডুবতে বসেছে। প্রাণ বাঁচাতেই সেদিন সমুদ্রের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইউসরা। ইউসরা ও তাঁর বোনের সাহসিকতায় সেদিন জীবন বেঁচেছিল নৌকায় থাকা ১৯ জন শরণার্থীর।

Yusra Mardini of the Refugee Olympic 02 Women wordsজার্মানির শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া এই সাহসিকা তরুণী ইউসরাই এখন লড়ছেন অলিম্পিকে। নাহ্, নিজের দেশের পতাকা নিয়ে অলিম্পিকে যাওয়ার ভাগ্য হয়নি তাঁর। তবে অলিম্পিক দরজাটা তাঁর সামনে খুলেছে অন্যভাবে। অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথম অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর বাইরে একটি ‘শরণার্থী দল’ খেলছে। বিভিন্ন দেশের শরণার্থীরা অন্য সব প্রতিযোগীর মতোই খেলবেন দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে। এই বিশ্ব মঞ্চে ৪৩ সদস্যের প্রথম শরণার্থী দলটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে জার্মানি এবং তাতে আছেন সিরিয়ান ইউসরাও।

অলিম্পিকে ইউসরার আবির্ভাবটা কিন্তু স্মরণীয়ই হয়ে থাকছে। সাঁতারের পুলে নেমেই আলো ছড়িয়েছেন। ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে মোটামুটি ভালো টাইমিংয়েই পেরিয়েছেন হিটের বাধা। কিন্তু পরের রাউন্ডে আর পেরে ওঠা হয়নি। ৯.২১ সেকেন্ড সময় নিয়ে হিট শেষ করা ইউসরা অবশ্য খুশি নিজের পারফরম্যান্সে। নানা কারণে দুই বছর সাঁতারের বাইরে থাকায় সামর্থ্যে যে মরচে পড়েছে, সেটা ভুলে যাননি। তাই অলিম্পিকে বিভিন্ন দেশের সেরা সাঁতারুদের সঙ্গে লড়ে ৯.২১ সেকেন্ড টাইমিংটাকে দেখছেন ভবিষ্যতের পাথেয় হিসেবেই, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছি। বিভিন্ন দেশের সেরা সাঁতারুদের সঙ্গে লড়াইয়ের এই অনুভূতি সত্যিই অতুলনীয়। দুবছর পর প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারে ফিরলাম। এখন আমাকে অনুশীলন করেই আগের ফর্ম ফিরে পেতে হবে।’

অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতাটাও তাঁর কাছে চির অমলিন থাকবে। তবে অনুষ্ঠানটা পুরোপুরি উপভোগ করতে না পারার আফসোসও করলেন, ‘অনুষ্ঠানটা সত্যিই দুর্দান্ত। আমি পুরোটা সময় থাকতে পারিনি, কারণ আমার ইভেন্ট ছিল।’

ইউসরার চোখ এখন ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে। ঠিকঠাক অনুশীলন আর অধ্যবসায় ধরে রাখতে পারলে টোকিওতে পদকের গৌরব গায়ে মাখতে পারবেন বলেই তাঁর বিশ্বাস। ইউসরা দেখিয়ে দিতে চান শুধু পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দিয়েই অনেক উঁচুতে ওঠা সম্ভব, ‘আমি চাই সবাই যেন আমার জন্য গর্ববোধ করে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই, কঠিন পরিস্থিতির মুখেও আমাদের মতো শরণার্থীরা লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম। এটা এমনই একটা ব্যাপার, যা থেকে পৃথিবীর যে–কেউ শক্তি অর্জন করতে পারে।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি।

এ সংক্রান্ত অন্য প্রতিবেদন
মৃত্যুমুখ থেকে ফেরা শরণার্থী ইউসরার পদক জয়ের স্বপ্ন