অনন্য উচ্চতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - Women Words

অনন্য উচ্চতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান আরও আগে থেকেই। তবে কেবল নেতৃত্বেই নয়, সাতশ’ কোটি মানুষের এই বিশ্বটির  উন্নয়ন কোন পথে, সে ভাবনা ও দর্শনের দিক থেকেও তিনি এখন বিশ্ব নেতাদের কাতারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বিশ্বের অন্বেষণে’ শীর্ষক বিশেষ নিবন্ধ তা-ই তুলে ধরেছে। যা  প্রকাশিত হয়েছে এবারের জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ ম্যাগাজিনে। বিশ্বের সকল শীর্ষ নেতার পাশাপাশি শেখ হাসিনার নিবন্ধ স্থান পেয়েছে এই প্রকাশনায়।

বিশ্ব নেতারা ভবিষ্যৎ বিশ্বকে কেমন দেখতে চান, তাদের উন্নয়ন ভাবনা ও দর্শন কী- সবই রয়েছে এসব নিবন্ধে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে লিখেছেন তার উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে।

জি-৭ রিসার্চ গ্রুপ এই বিশেষ শ্যুভেনিরটি প্রকাশ করেছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনঝো আবের লেখায় গুরুত্ব পেয়েছে একটি ফলপ্রসূ জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য করণীয় দিকগুলো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন Hasina-G7-inner-ট্রুডো লিখেছেন নাগরিকের সমতার কথা। বলেছেন, যখন প্রতিটি নাগরিকের সমান সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে, তখনই একটি দেশ এগিয়ে যাবে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল গুরুত্ব দিয়েছেন শরণার্থী সঙ্কট ইস্যুতে। তিনি বলেছেন, একমাত্র সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আমরা এমন বাস্তুচ্যুতির ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারবো। ইতালির প্রেসিডেন্ট মাত্তিও রেনজি ইউরোপের জন্য সুযোগ ও প্রত্যাশার দিকগুলো তুলে ধরেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ টেকসই উন্নত বিশ্বের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোতে আলোকপাত করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন বন্ধু ও মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও গুরুত্ব দিয়েছেন সাম্যের বিশ্বের প্রতি। আর বলেছেন, আমাদের অসমতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতেই হবে। আর শেখ হাসিনা লিখেছেন- আমাদের এমনই একটি বিশ্ব নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীঁড়িত মানুষ থাকবে না।

২৬ ও ২৭ মে জাপানের ইসে-শিমা পেনিনসুলায় যে জি-৭ এর বৈঠক হতে চলেছে, তাতে হাতে হাতে পৌঁছে যাবে এই বিশেষ প্রকাশনা। যা থেকে ধীরে ধীরে গোটা বিশ্ব জানবে বিশ্ব নেতাদের উন্নয়ন ভাবনা। তারা জানতে পারবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনা ও আদর্শের কথাও।

‘জাপান, দ্য ইসে-শিমা সামিট’ শীর্ষক এই ১২২ পৃষ্ঠার বিশ্ব প্রকাশনায় জি-৭ নেতাদের নিজস্ব ভাবনার পরপরই শেখ হাসিনার নিবন্ধ স্থান পেয়েছে বিশ্ব ভাবনা ক্যাটাগরিতে। যার প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছে তার ছবি।

এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা কেবল নেতৃত্বেই বিশ্ব নেতাদের কাতারে থাকলেন না, উন্নয়ন ভাবনা ও আদর্শেও তিনি উঠে এলেন একই উচ্চতায়।

জি-৭ এর আউটরিচ বৈঠকে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে ২৬ মে সকালে জাপানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে উপদ্বীপ ইসে-শিমায় বিশ্বের প্রধান শক্তিশালী দেশগুলোর নেতৃত্বের সঙ্গে অংশ নেবেন তিনিও। ইসে-শিমাতে অনুষ্ঠেয় এবারের সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং উন্নত অবকাঠামো বিনির্মাণে সহযোগিতা সংশ্লিষ্ট চারটি মৌলিক বিষয়ে আলোচনায় নেতৃত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের অন্বেষণে’ শীর্ষক নিবন্ধের হুবহু অনুবাদ

২০০১ সালে ইতালির জেনোয়ায় অনুষ্ঠিত জি-৮ সম্মেলনে অংশ নিয়ে আমি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমক্ত পৃথিবী গড়তে বিশ্ব নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলাম। ১৫ বছর হয়ে গেল, বিশ্ব ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের দৃশপট বদলেছে, কিন্তু প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসেনি। আমরা এখনও মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার জায়গা থেকে দূরে পড়ে আছি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এলেও সবার জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের নিশ্চয়তা আমরাও এখনও দিতে পারিনি। বরং ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও জঙ্গিবাদ মানবাধিকার পরিস্থিতির ‍আরও অবনতি ঘটিয়েছে এবং দারিদ্র্য ছড়িয়ে আমাদের অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে।

আমরা একটি সংযুক্ত ও স্বাধীন বিশ্বে বসবাস করি। এই বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধিলাভে আমাদের মধ্যে সহযোগিতার সংস্কৃতি বাড়ানো উচিত। আমি মনে করি, মানুষের অনাহারের মূল কারণ দারিদ্র্য। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের এক নম্বর শত্রু এই ‍দারিদ্র্যই। এরসঙ্গে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, যার কারণে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্ষয়ে যাচ্ছে, একইসঙ্গে বদলে যাচ্ছে আমাদের কর্মপরিকল্পনাও।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ফাও) তথ্যমতে, এই বিশ্বের ৭৩০ কোটি মানুষের মধ্যে এখনও ৮০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এর অর্থ প্রতি আটজনে একজন মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে না। এই অপুষ্টিতে ভোগা মানুষদের মধ্যে ৭৮ কোটিই উন্নয়নশীল দেশের, যার মধ্যে কেবল এশিয়ারই রয়েছে ২৮ কোটি ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ।

কিন্তু একজন মানুষও কেন এই পৃথিবীতে না খেয়ে থাকবে? সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের এই মাতৃবিশ্বের পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে।

বাংলাদেশে আমরা প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। সকল বাধা ভেঙে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছি। গত ছয় বছরে আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশের ওপরে থেকেছে, আর এট‍া গতবছর দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) বেশিরভাগই অর্জন করেছি, যার মধ্যে ছিল মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস। ২০০৬ সালে যেখানে আমাদের দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ, সেটা ২০১৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে। নারী ও শিশুসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আমরা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি।

আমি মনে করি, দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর সমান অবদান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের  ক্ষমতায়ন শ্রেষ্ঠ উপায়।

আমাদের দেশের স্কুলগামী শিশুদের শ্রেণিকক্ষে একশ’ ভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বেশ কিছু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি, যার মধ্যে বিনামূল্যে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, আমরা ১ কোটি ৭২ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বৃত্তির আওতায় রেখেছি।

আমরা অতি-দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের, বিশেষত হতদরিদ্র নারীদের জন্য কিছু সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি, যারমধ্যে এ বছর তিনশ’ ৯৪ কোটি ডলার বিতরণের কথা উল্লেখ করা যায়।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে আমাদের দেশ সেই অর্থে দায়ী না হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামলাতে আমাদেরই বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলীয় বদ্বীপ বাংলাদেশ এখন অস্তিত্ব হুমকিতেই পড়ে গেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জনগণের জন্য কঠিন এক বাস্তবতা। এর ফলে যখন-তখন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, বৃষ্টিপাতের ধরণ ও সময়ে অস্বাভাবিক পরিবর্তন, খরা, ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আমাদের সাম্প্রতিক উন্নয়নমূলক অর্জনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। আমরা দেখছি অনেক কৃষক, জেলে ও মিস্ত্রির জীবন ও জীবিকার ওপর বিরূপ ছাপ ফেলছে এই জলবায়ু পরিবর্তন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের কয়েক মিলিয়ন মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হবে। আমরা আশঙ্কা করছি, যদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে প্রতিবছর আমাদের ২-৩ শতাংশ জিডিপি হারাতে হবে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে আমাদের নারী ও শিশুরা।

জলবায়ু সহনশীল সম্পদ ও দক্ষতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরকার উন্নত দেশগুলোর ধারাবাহিক সহযোগিতা। আরও দরকার স্থানীয় ও টেকসই সমাধানে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও প্যারিস চুক্তি সার্থক করতে আমাদের প্রয়োজন ধনী রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্বশীল ও অগ্রগামী আচরণও।

জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর (যাদের সম্পদ পুরো বিশ্ব সম্পদের ৬৪ শতাংশ, ২৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদ, এক ট্রিলিয়ন সমান ১ লাখ কোটি) নেতারা জাপানে ৪২তম জি-৭ সম্মেলনে জড়ো হচ্ছেন। আপনারা এই সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক রূপলাভকারী বিশ্বের মূল খেলোয়াড়।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে আমি জি-৭ দেশগুলোর নেতাদের আহ্বান জানাবো, বৈশ্বিক ক্ষুধা-দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম এমন একটি কার্যকর উপায় খুঁজে বের করুন।

চলুন আমরা ন্যায়বিচার, বিশ্বাস ও সহযোগিতার সত্য উদ্যমে নিজেদের দায়িত্ব পালন করি। জনগণ আমাদের ওপর যে বিশ্বাস রেখেছে তাকে বাঁচিয়ে রাখি। আমাদের উত্তরসূরীরা যেন স্মরণ করে, মাতৃবিশ্ব থেকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলের ইতিহাসে ইসে-শিমা পেনিনসুলায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন ছিল নতুন অধ্যায়ের শুরু।

জি-৭ আউটরিচে চার উন্নয়ন এজেন্ডায় কথা বলবেন শেখ হাসিনা

 

সৌজন্যে : বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম