বহু চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজকের অ্যাডভোকেট শাহানা - Women Words

বহু চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজকের অ্যাডভোকেট শাহানা

romena-lais-women-wordsমুক্তিযুদ্ধ আমাদের এনে দিয়েছে অপার স্বাধীনতা। মুক্তির আনন্দ। সেই আনন্দের পাশাপাশি যে বেদনার কাব্য আছে তা কি আমরা সবাই জানি বা অনুধাবন করি? আমাদের এবারের নক্ষত্র শামসুন্নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এম পি।

rumana-shahana-2-women-wordsতিনি ১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা এডভোকেট সুনাওর আলী আর মা রশিদা মাজেদা খানম শান্তির প্রথম সন্তান । ১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধ কালীন তাদের পরিবারটি শহর ছেড়ে শামারচর নামক গ্রামে আশ্রয় নেন। অতর্কিতে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করে। সকালে একটি ঘরে আশ্রয় নিলেও তাঁর বাবাকে শত্রুপক্ষ গুলি করে। ছোটবোন সিতারা বাবাকে গুলি করতে দেখে ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে । নয় বছরের শিশু সিতারাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। যুদ্ধের সময় আমি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তাম। আমার মনে আছে যুদ্ধের আগে সিতারা আপা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ত।

rumana-shahana-3-women-words১৯৭১ এ ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা, স্বাধীন দেশ আর একটি পতাকা পেলেও শাহানা হারিয়েছেন তাঁর বাবা ও আদরের বোনকে। লিখতে গিয়ে অশ্রুসজল হচ্ছি । আমি দেখতে পাচ্ছি- একজন অসহায় মা তাঁর চারটি কন্যা আর একমাত্র শিশুপুত্রকে নিয়ে একই দিনে স্বামী আর সন্তান হারিয়ে কতটা বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়েছেন।একদিকে প্রিয়তম স্বামী আর সন্তানকে কবরে শুইয়ে আর একদিকে বাকী সন্তানদের বাঁচানোর তাগিদ। যার সবচেয়ে বড় কন্যাটি তখন মাত্র বার কী তের বছরের।বহু চড়াই উৎরাই পার হয়ে সেই বার বছরের কন্যা শিশুটিই আজকের অ্যাডভোকেট শামসুন্নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এম পি।

সতীশ চন্দ্র সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে এস এসসি পাশ করেন। সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ থেকে কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন ১৯৭৬ এ।একই কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করে সিলেট ল কলেজ থেকে ল পড়া শেষ করেন। তিনি সুনামগঞ্জ জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। কলেজে পড়ার সময়ই রাজনীতিতে যোগ দেন। সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। তাঁর স্বামী মরহুম গোলাম রব্বানী। দুই মেয়ে আর এক ছেলে। জীবনের শুরু থেকে কঠিন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। হাতাশাগ্রস্থ হননি। বার বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে মা আর ছোট ভাইবোনদের নিয়ে এগিয়ে চলছেন। সহযোদ্ধা হিসাবে সাথে পেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে ; তিনিও অকালে চলে গেলেন।

তিনি পরিবারের পাশাপাশি জনসেবামূলক কাজে সব সময় নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। ১.মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা,জেলা আওয়ামীলীগ। ২.সাধারণ সম্পাদিকা আইনজীবী সমিতি ২০০৫। ৩.সভাপতি ,সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব। ৪.সভাপতি,সুনামগঞ্জ মহিলা সংস্থা। ৫.সম্পাদক ও প্রকাশক সাপ্তাহিক গ্রাম বাংলার কথা। ৬.সভানেত্রী সুনামগঞ্জ মহিলা সমিতি। ৭.সভানেত্রী সুনামগঞ্জ বহুমূখী কুটিরশিল্প সমবায় সমিতি।

তিনি আইনপেশায় নিজেকে জড়িয়ে সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হন। বর্তমানে তিনি সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের মনোনীত মহিলা সংসদ সদস্য। তিনি যুক্তরাজ্য,সৌদিআরব ও ভারত ভ্রমণ করেছেন। মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষা ব্যাক্তির জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মায়ের ত্যাগ ও কঠোর দৃঢ়তা তাঁকেও ঋজু হতে ,সাহসী হতে, দুঃখে কষ্টে ভেঙে না পড়তে শিখিয়েছে। জীবনে দুঃখ আসবে। ভেঙে পড়লে চলবে না। মানুষ ও মানবতার সেবায় এগিয়ে যেতে হবে।আমি তাঁর সুস্থ, সুন্দর ও শান্তিময় জীবন কামনা করি ।