পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ২ - Women Words

পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ২

কলকাতার পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের সাড়ে ৪ বছর পর মূল অভিযুক্ত কাদের খানকে  গ্রেপ্তার করল কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লি আদালতে ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদনের পর এ দিনই তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে। গ্রেফতার করা হয়েছে কাদেরের আর এক সঙ্গী মহম্মদ আলিকেও।পুলিশের পক্ষ থেকে কাদের এবং আলিকে জেল হেফাজতে রাখার আবেদনও করা হবে বলে জানা গেছে।

অনেক দিন ধরেই কাদেরের সন্ধান করছিল পুলিশ। কিন্তু কোনও ভাবেই তার হদিস পাচ্ছিল না। কিন্তু গত কয়েক দিন আগেই গোপন সূত্রে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা খবর পান যে দিল্লিতে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন কাদের। সেই মতো কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ দল দিল্লিতে পৌঁছায়। তারা কাদেরের গতিবিধির উপর নজরদারি চালান। পরে বৃহস্পতিবারই তাকে হাতেনাতে ধরা হয়।

park-street-rape-kader-womenwords

পুলিশ জানিয়েছে, নাম ভাড়িয়ে গাজিয়াবাদের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন কাদের। একটি জন্মদিনের পার্টি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এসেছিলেন কাদের ও তার সঙ্গী। গাজিয়াবাদের ওই ফ্ল্যাটের খোঁজ পেয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা আগে থেকেই সেখানে হাজির হয়েছিলেন। পার্টি থেকে ফিরে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকতেই কাদের ও তার সঙ্গী আলিকে গ্রেফতার করা হয়। কাদেরের পরিবারের ফোন ট্যাপ করেছিল পুলিশ৷ আর সেই সূত্র ধরেই পুলিশ কাদেরের গাজিয়াবাদে আত্মগোপন করার বিষয়ে নিশ্চিত হয়৷

পুলিশ সূত্রের খবর, টাকার অভাবেই বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেন কাদের৷ এবং টাকা পেলেই হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেত সে৷ কলকাতায় নিয়ে এসে কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোথায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, কে বা কারা তাকে পালাতে সাহায্য করছিল এ সব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকরা হবে বলে জানিয়েছে তারা।

পার্ক স্ট্রিটের এক নাইট ক্লাব থেকে ফেরার পথে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চলন্ত গাড়িতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সুজেট জর্ডন নামের এক মহিলা৷ ধর্ষণের পর তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হয়। ওই ঘটনার প্রায় একবছর পরে নিজের পরিচয় প্রকাশ করার পর থেকে ভারতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন  তিনি। এই ঘটনায় কলকাতা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায় ৷ পুলিশ প্রথমে সুজেটের ধর্ষণের অভিযোগও নিতে চায় নি। কিন্তু খবরটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় চাপে পড়ে পুলিশকে ধর্ষণের মামলা শুরু করতে হয়।

অফিসার দময়ন্তী সেনের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অভিযুক্ত ৩ জনকে। এরা হলেন নাসের খান, রুমান খান এবং সুমিত বজাজ। গ্রেপ্তার হওয়া তিন অভিযুক্তকে ১০ বছরের করাদণ্ডের নির্দেশ দেন আদালত৷  কিন্তু মূল অভিযুক্ত কাদের খান ও তার সঙ্গী আলি পুলিশের নাগালের বাইরে চলে যান৷

সুজেট জর্ডন চল্লিশ বছর বয়সে ২০১৫ সালের ১৩ মার্চ ম্যানেনজো-এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে  তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সুজেটের মা আর দুই মেয়ে রয়েছেন।

ভারতে ধর্ষিতা বা যৌননিগ্রহের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশের ওপরে আইনী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কলকাতায় অন্য একটি ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সুজেট জর্ডন।

ওই ধর্ষণকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

তাঁর মন্ত্রীপরিষদের এক সদস্য – যিনি এখন দুর্নীতির অভিযোগে জেলে রয়েছেন – তিনি তির্যক মন্তব্য করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, “এক মধ্যবয়সী মহিলা অত রাতে পার্ক স্ট্রিটের পানশালায় কী করতে গিয়েছিলেন?”

এখন সুজেট জর্ডনের সুবিচারের প্রতিক্ষা করছেন কলকাতাবাসী৷