সৈয়দ শামসুল হকের জীবনাবসান - Women Words

সৈয়দ শামসুল হকের জীবনাবসান

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক (৮০) মৃত্যুবরণ করেছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫.২৬ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান।

ফুসফুসে কর্কট রোগের চিকিৎসার জন্য এপ্রিল মাসে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্য গিয়েছিলেন তিনি। সাহিত্যের সব শাখায় সমান সফল হলেও ক্যান্সারটাকে পরাজিত করা সম্ভব হলো না তাঁর। ফুসফুসের ক্যান্সার তাঁর যকৃতেও ছড়িয়ে পড়ে। অসফল চিকিৎসার পর মনভাঙা খবর নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন সৈয়দ শামসুল হক। ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন  তাঁর আয়ূস্কাল আর মাত্র ছয় মাস।

ইউনাইটেড হাসপাতালে  সোমবার দুপুরে সৈয়দ হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন দ্রুত তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে কৃত্রিম উপায়ে তাকে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল।

১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি  কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় ছিল তাঁর সাবলীল পদচারণা। এজন্য তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। । সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন।

সৈয়দ হকের মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে  গুলশানে নিজ বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখান থেকে আজ রাতেই তাঁর মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে।

সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে নেওয়া হবে। সেখানেই এই লেখককে দাফন করা হবে।

একুশে পদক পাওয়া এই সাহিত্যিকের পাঠকপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নীল দংশন’, ‘মৃগয়া’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘আয়না বিবির পালা’ প্রভৃতি।

তার লেখা নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নুরুল দীনের সারাজীবন’ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে মাইলফলক সৃষ্টি করেছে।

সংক্ষিপ্ত জীবনী
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে তিনি প্রথম। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন।
সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
 সৈয়দ শামসুল হকের পিতার ইচ্ছা ছিলো তাকে তিনি ডাক্তারি পড়াবেন। পিতার এরকম দাবি এড়াতে তিনি ১৯৫১ সালে বম্বে (মুম্বাই) পালিয়ে যান। সেখানে বছরখানেকের বেশি এক সিনেমা প্রডাকশন হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৫২ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে স্নাতক পাসের আগেই ১৯৫৬ সালে সেখান থেকে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয় ।
সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর রচিত প্রথম পদ তিনি লিখেছিলেন এগারো-বারো বছর বয়সে। টাইফয়েডে শয্যাশায়ী কবি তাঁর বাড়ীর রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে একটি লাল টুকটুকে পাখি দেখে দুলাইনের একটি পদ ‘আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে’ রচনা করেন। এরপর ১৯৪৯-৫০ সালের দিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরে ব্যক্তিগত খাতায় ২০০টির মতো কবিতা রচনা করেন। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে। সেখানে ‘উদয়াস্ত’ নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়।