মেয়েটিকে যখন অপহরণ করা হয় তখন বয়স ছিল ১২। দশ বছর পর পাচারকারী চক্রের হাত থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হল সে। বয়স এখন ২২ এর কোঠায়। সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ভয়াবহ সেই দিনগুলোর অভিজ্ঞতার কথা শুনান তিনি। কি হয়েছিল তাঁর সাথে, পাঠক চলুন জেনে নেয়া যাক।
দশ বছর আগে দিল্লিতে তাঁর বাড়ির পাশে বাজার করতে যায় কিশোরীটি। হঠাৎ ই কেমন একটা গন্ধ, তারপরেই অজ্ঞান হয়ে যায় সে। মেয়েটির ভাষায়, ‘জ্ঞান হল নরকে’।
সে জানায়, একটা ঘরে বিভিন্ন বয়সী মেয়ে ছিল। কেউ কান্না করছিল, কেউবা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। তাদের কাছেই মেয়েটি জানল যে তাকে আম্বালায় নিয়ে আসা হয়েছে। খুব শ্রিঘ্রি বিক্রি করে দেয়া হবে।
সেই দিনগুলো যে খুব বিভৎস ছিল, তা মেয়েটির মুখের দিকে তাকালেই কিছুটা বোঝা যায়। মুখে কাটা-পোড়া দাগ, কামড়ের ক্ষত, সুঁচ ফোঁটানোর অজস্র চিহ্ন।
গত ১০ বছরে ৯ বার হাত বদল হতে হয়েছে তাকে। ১৫-২০ হাজার টাকায় ৯ জন আলাদা ব্যক্তি কিনে নেয় মেয়েটিকে। সে বলে, ‘চোখ ঘুলে নিজেকে একেকবার একেক জায়গায় দেখতাম। সারাদিন মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম, আর রাতে খাবারের সঙ্গে ড্রাগ মিশিয়ে চলত উপর্যুপরি ধর্ষণ। কাজে অল্প ভুল জলেই জুটত বেধরক মার। ২০০৯ এ ৬৬ বছরের এক বুড়োর কাছে বিক্রি করা হয় তাকে। গুরদোয়ারায় নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে বিয়েও করে লোকটি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫। বয়সের কারণে যাতে বেমানান না হয়, তাই হরমোন ইঞ্জেকশনও দেয়া হয় তাকে।
সেখানেই দুই ছেলে জন্ম নেয় তাঁর। কিন্তু জন্মের পরপরই ছেলেদেরকে কেড়ে নেয়া হয় তাঁর কাছ থেকে। কিছুদিন পর বুড়ার মৃত্যু হয়। তখন প্রতিরাতে তাঁর অন্য ছেলেরা ও ভাইয়েরা নিয়ম করে মেয়েটিকে ধর্ষণ করত। এরকম চলতে চলতে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তখন মেয়েটিকে আবারও বিক্রি করে দেয়া হয়। অবশেষে গত মাসে এক বার ড্যান্সারের সহযোগিতায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় মেয়েটি। মা ও আট বোনের কাছে ফিরে আসে সে।
তরুণীটির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি নারী ও শিশু পাচারচক্রের সন্ধান পেয়েছে। সেই গ্যাং এর বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু মেয়েটির স্বামীর পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। যাদের কাছে রয়েছে তাঁর দুই শিশু সন্তান। যেকোন মূল্যেই দুই ছেলেকে ফিরে পেতে চান তিনি। তার জীবন যেভাবে ধংস হয়েছে, সেরকম যেন তাঁর ছেলেদের সাথে না হয়, এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় সে।
সূত্র: এইসময়.ইন্ডিয়াটাইমস.কম