মেয়ে হারিয়ে ফেলো না নিজেকে - Women Words

মেয়ে হারিয়ে ফেলো না নিজেকে

রাহিমা বেগম

বিয়ের পর সংসারে মেয়েদের মোটামুটি দুইটার যেকোন একটা উপায় বেছে নিতে হয়। প্রথম উপায় নতুন সংসারে সবার মন জয় করে সবাইকে খুশী রেখে চলা। এই উপায়ে পরিবারের একজন  ভাল বউ হিসেবে পরিবার আর আত্মীয়স্বজনের সকলের কাছ থেকে সর্বদা প্রশংশা আর সুখ্যাতি অর্জন করা যায়। প্রথম উপায়ের সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটা শর্ত মানা মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক, সেটা হচ্ছে নিজস্বতা, , স্বকীয়তা, স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত পছন্দ -অপছন্দ, সুখ -স্বাচ্ছন্দ্যতা,নিজের ক্যারিয়ার, আর নিজের বাপ মায়ের পরিবারের প্রতি সবধরনের স্নেহ মায়া ও দায়িত্ববোধ সবকিছু নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করতে হবে।

দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে প্রথম উপায়ের যে শর্ত আছে সেটাই ভেঙে নতুন পরিবারের সাথে মানিয়ে চলে সুখী হওয়ার চেষ্টা করা। প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে যে তাঁর একটি সুন্দর হাসিখুশী সংসার হবে। সেকারণে এদেশের শতকরা নব্বই ভাগ মেয়েরাই প্রথম উপায়টা অনুসরণ করে। তাছাড়া একজন মেয়েকে সেভাবেই সামাজিকীকরণ করা হয়,যাতে সে প্রথম উপায়টা বেছে নেয়। এইসব মেয়েরা বিয়ের পর সবাইকে খুশী রাখতে যেয়ে, একটি সুখী সংসার উপহার দিতে গিয়ে একসময়  নিজেকে হারিয়ে ফেলে। নিজে কতটা সুখী সেই হিসেব করে দেখার সাহস পায়না। হয়ত কেউ কেউ নিজেকে ফিরে পাওয়ার একটা মিথ্যা প্রচেষ্টা করে, কিন্তু সে প্রচেষ্টার ফলাফল বরাবরই শূন্য থাকে। দ্বিতীয় উপায়টা শতকরা পাঁচ থেকে সাত ভাগ মেয়েরা বেছে নিলেও পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন ধরণের অসহযোগিতা ও সমস্যার কারণে তাদের মধ্যে সাড়ে তিন ভাগ নারীকে প্রথম উপায় অনুসরণকারীদের দলে ভিড়ে যেতে হয়।

মেয়ে তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেলোনা। তোমাকে নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আগলে রেখে লেখা পড়া করিয়ে বড় করতে, সামাজিক মর্যাদা দিতে তোমার বাবা মা পরিবার পরিজনদের অনেক কষ্ট হয়েছে। বিয়ের পর নিজের জন্য, নিজের বাবা মা আর পরিজনদের জন্য কিছু করতে গিয়ে লজ্জায় নুয়ে পড়না। এটা তোমার কৃতজ্ঞতা বোধ প্রকাশের একটা রাস্তা মাত্র। একটা ছোট অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, আমার এক চাচা হঠাৎ করে মারা গেলেন। সেদিন আমার চাচাত বোনের এস.এ.এসি পরীক্ষা ছিল। চাচার দাফনের আগেই বাড়ির সকলে তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠালেন। সে বাড়ি থাকলে তার বাবা ফিরে আসবেননা, কিন্তু পরীক্ষা দিতে না গেলে বাবার আদরের মেয়ের জীবন থেকে একটা বছর হারিয়ে যাবে। সেই সাথে আরেকটা সত্যি ঘটনার কথা বলি। এই বাড়িরই আরেকজন মেয়ে আমাদের এক ফুপুর এস.এ.এসি পরীক্ষার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছিল। শশুর বাড়ি থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পাঁচটা পরীক্ষা দেয়ার পর ফুপুর শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে গেলেন। শাশুড়ি অসুস্থ, বাড়ির নতুন বউ পরীক্ষা দিতে যাবেন এতটা উদারতা হয়ত এই সমাজের কাছে ফুপু আশা করেননি। পরীক্ষা আর দেওয়া হলোনা। শাশুড়ির অসুস্থতায় উনার শিক্ষার সমাপ্তি। তবে রেজাল্ট বের হওয়ার পর দেখা গেল পাঁচটার মধ্যে তিনটাতে ৮০% মার্কস ছিল। এইখানেই দাফন হয়েছিল ফুপুর ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন। এটা কোন ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। এটা বাংলাদেশে নিত্যদিনের হাজারো মেয়ের স্বপ্ন কবর দেয়ার একটা গল্প মাত্র।

 

লেখকের অন্য কলাম পড়ুন-
নষ্ট বীজ, দুষ্টু মানব
অনুভূতিহীন রোবট সন্তানরাই জঙ্গিবাদে পা দিচ্ছে

………………………………………………………………………………………..
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। womenwords.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে womenwords.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।