কলসিন্দুরের ৯ কিশোরী ফুটবলারকে বহিষ্কারের হুমকি স্কুল কর্তৃপক্ষের!! - Women Words

কলসিন্দুরের ৯ কিশোরী ফুটবলারকে বহিষ্কারের হুমকি স্কুল কর্তৃপক্ষের!!

এই তো, পাঁচদিনও হয়নি। তলানীতে থাকা বাংলাদেশের ফুটবলকে এক অনন্য অর্জন এনে দিলেন তারা। সারাদেশ তাদের প্রশংসায় ভাসালো অথচ সপ্তাহ ঘুরার আগেই বিব্রতকর অবস্থার মুখে পড়তে হলো বাংলাদেশের কিশোরীদের। যারা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল বাছাই উতরে মূল পর্বে নিয়ে গেছে বাংলাদেশকে। এটা দেশের মহিলা ফুটবলের বিশাল অর্জন, অথচ সাফল্যের কারিগর সানজিদা-তহুরাদের অবস্থা তথৈবচ।

এত বড় অর্জন যাদেরকে ঘিরে, সেই নারী ফুটবলারদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। মূল্যায়ন করতে পারেনি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সংবর্ধনা ও সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নশিপ ক্যাম্পের ব্যস্ততার কারণে ৪৫তম গ্রীষ্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে খেলতে অপারগতার কথা জানানোয় তাদের পড়তে হয়েছে লাঞ্ছনার মধ্যে। এর আগে গত পরশু ঢাকা থেকে কলসিন্দুরে বাড়ি ফেরার পথে লোকাল বাসে টিকা-টিপ্পনীর শিকার হতে হয়েছে তাদের। দুই ফুটবলার বলেছে, ‘বাসে কিছু লোক বিশ্রী ভাষায় আমাদের বকা দিয়েছে।’

অসাধারণ কীর্তি গড়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা এসব মেয়েরা ঘরে ফিরেও নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের আচরণে হতবাক ও মর্মাহত। বিদ্যালয় থেকে এসব শিক্ষার্থীদের ছাঁটাইয়ের হুমকিতে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে সময় কাটছে তাদের। অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল টিমে খেলছেন গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষা গ্রাম কলসিন্দুরের ৯ ফুটবলার। এএফসি অন‍ূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে অপরাজেয় থেকে গত মঙ্গলবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বাড়ি ফিরেছেন গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।

কিন্তু বাড়ি ফেরার একদিন পরেই সেই আনন্দ যেন ফিকে হয়ে গেছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে কুমিল্লা যাচ্ছে কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিযোগিতায় নিজেদের বিদ্যালয়ের হয়ে খেলতে সানজিদা-মার্জিয়া-তাসলিমা ও তহুরাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিদ্যালয়ে নিজেদের অভিভাবকসহ ডেকে আনা হয় ওই ৯ নারী ফুটবলারকে।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক তাসলিমা বলেন, শিক্ষকদের তলবে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে তারা গিয়েছিলেন নিজেদের বিদ্যালয়ে। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাফুফে আমাদের সংবর্ধনা দেবে। এ জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর আমাদের ঢাকায় যেতে হবে। সাফ ফুটবলের ক্যাম্পও শুরু হবে ক’দিন বাদেই। এ সব বিষয় তুলে ধরলে উল্টো আমাদের শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী ক্ষেপে যান।

আমাদের অভিভাবকদের বলেছেন,বন্ড সই দিয়ে আপনাদের মেয়েদের নিয়ে যান। ওরা আর কোনদিন স্কুলে পড়া তো দূরের কথা, নাম নিলেই ওদের জুতাপেটা করে দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। তাসলিমা বলেন, সামনে আমাদের কয়েকজনের টেস্ট পরীক্ষা। যদি আমাদের রেজিস্ট্রেশন না করে টিসি দিয়ে দেয় তাহলে তো আর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হবে না। সেরা এগারতে খেলা গোলকিপার মাহমুদা আক্তারও একই অভিযোগ করেন।

তাসলিমার বাবা সবুজ মিয়া’র অভিযোগ করে বলেন, না খেললে আমগর মেয়েগরে বিদ্যালয় থেইক্ক্যা বাইর কইরা দিবার হুমকি দিছে জুবেদ স্যার। আমারেও মারপিট করছে। আমি পুলিশরে জানাইছি। একই রকম কথা জানিয়ে নাজমার বাবা আবুল কালাম বলেন, মাস্টাররা আমগরে ডাইক্যা নিয়া অপমান করছে। মাইয়াগরে বহিষ্কার করবার হুমকি দিছে। অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক জুবেদ আলী তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে ধরতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে ধরতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সূত্র : কালের কণ্ঠ