মোস্তাক আহমেদ
ভয়ের অভয়ারণ্যের যাপিত দিনে
বাতায়ন খোলো নারী
দখিণা বাতাস লাগাও গায়,
জুড়াও প্রাণ ওষ্ঠাগত চাতকের
বৃষ্টিজল অবগাহনে।
যদিও প্রকৃতি দিয়েছে তোমায়
অপার সৌন্দর্য আর
সৃষ্টির ঐশ্বরিক ঔদার্য ;
তবুও তোমার মূল্য
সমুদ্রের বুকে পড়ে থাকা
শ্যাওলা ধরা নুড়িপাথর সম।
তোমার মত, তোমার পথ
সংকীর্ণ করে দিয়েছে সমাজ-সংসার।
কোথায় যাবে তুমি,
কোথায় তোমার ঠিকানা?
যেখানে হীরামন পাখি
রঙিন খামে নিয়ে আসবে চিঠি
মন ভুলানো কথার ফাঁকে
স্বপ্নের বারতা; সেখানে?
হায়, এখনো তা অজানা।
আচ্ছা, রুদ্রের কথা মনে আছে তোমার?
যে তোমার যৈবতী মনে দোলা দিত
লোবানের নিষিদ্ধ ঘ্রাণের মত।
মনে থাকবে কেন?
মনে না রাখাই ভালো।
রুদ্রের সঙ্গে কথোপকথনের অভিযোগে
মহাভারত যে একদিন অশুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো!
সেদিন কি মারটাই না খেলে তুমি
জনক জননীর হাতে।
সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি
তোমার শরীর দোলে দোলে ওঠছিলো
নোনাজলের অকাল প্লাবনে;
সেই দু:সহ অন্তর্দহনের সাক্ষী হয়নি কেউ
একটি রাতজাগা বিরহী পাপিয়া ছাড়া।
রাত নিশুতি হয়,
বালিশে মাথা এলিয়ে দিয়ে
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ো তুমি গোপনে।
সেই দীর্ঘশ্বাসে খেলা করে
কিছু শব্দমালা ;
তুমি নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ তোমার মন
তোমার ভালোলাগা, মন্দলাগা
কথা বলার অধিকার।
এক সকালে জানালার ফাঁক গলে
এক চিলতে রোদ এসে লাগে
তোমার অবয়বে,
আবার চোখ বুঝে আসে তোমার
কপালে কারো কর্কশ হাতের স্পর্শ
অনুভব করো তুমি;
চোখ মেলে দেখো জননী শিয়রে তোমার।
জননীর হাত এত কর্কশ হলো কি করে!
তোমার এত ভেবে কাজ কি,
হয়তো সংসারের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে।
জননীর করুণ চাহনি দেখে
তুমি বিচলিত হও এক অজানা আশঙ্কায়;
পরিবার পরিজনের ব্যস্ততা
তোমাকে জানান দেয়
আজ পয়গাম আসছে তোমার।
সংসারের একখণ্ড বোঝা তুমি
আজ তোমার মূল্য নির্ধারণ হবে,
পরখ করা হবে নিক্তির চারসুতোয়।
ঘোমটায় অবগুণ্ঠিত হয়ে বসবে তুমি
লাজে অবনত হয়ে;
তোমার কেশ, বেশ
তোমার ঠোট, হাসিতে
দৃষ্টির নগ্ন তীর ছুঁড়া হবে আজ
তোমার স্তনে, নিতম্বে
তোমার পদযুগল আর হাটাচলায়।
তুমি আজ বড় অসহায়
নারী!
তোমার জন্য পঞ্চম পাঠ
তুমি বিনিময়যোগ্য সম্পত্তি।
লেখকের অন্যান্য লেখা