গৃহকর্মী রাখার আগে তাদের সাথে কাজ করার মানসিকতা অর্জন করুন - Women Words

গৃহকর্মী রাখার আগে তাদের সাথে কাজ করার মানসিকতা অর্জন করুন

টুম্পা ধর

একজন সাংঘাতিক ভদ্র  নারী। হিজাব, নেকাব ছাড়া তো নিজের ছেলের সামনেও আসেন না।দুই ছেলের পরে একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।বাড়িতে এখন সব কাজের জন্য আলাদা আলাদা কাজের লোক।সব থেকে ছোট্ট গৃহকর্মীর বয়স ছয়।তার কাজ বাচ্চার পায়খানা প্রস্রাবের কাঁথা পরিস্কার করা। সে তা করছেও,কিন্তু একদিন ভুল করে সে বাচ্চার খালার দেয়া নকশি কাঁথা ধোঁয়নি।ওই নারী এসে দেখেন সেই হীরার দামে দামী কাঁথায় বাচ্চার গু লেগে আছে।শাস্তি হিসেবে তিনি ওই গু মাখা কাঁথা অই ছোট্ট গৃহকর্মী মেয়েটির মুখে চাপা দিয়ে রাখলেন।

এলাকায় একটা বিড়াল সব সময় সবার বাসায় ঘুর ঘুর করত।বেশ মোটাতাজা দেখতে।একদিন হঠাৎ দেখা গেলো ওর গায়ে দগদগে ঘা।সবাই উদ্বিগ্ন হলো কিভাবে এমন হলো।একদিন পাশের বাসার আন্টি কথা বলছেন আরেক আন্টির সাথে অই বিড়ালকে নিয়ে…
‘কাজের মেয়েটা ভাত সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলেছিল।আমি তো অই গরম মাড় অই কুত্তার বাচ্চা কাজের মাইয়ার গায়ে মারতে নিছিলাম। কিন্তু বিড়ালটা যে আগেই সেখানে দাঁড়ানো ছিলো তা আমি খেয়াল করি নাই ভাবী। মেয়েটা সরে গেলো আর তখন বিড়ালটার গায়ে…।আমার এখন খুব কষ্ট হচ্ছে।’
পাশের আন্টি জানালেন, ‘আর বইলেন না আপা,আপনার আর কি দোষ!সব তো হইছে অই ভিক্ষারীর বাচ্চাটার জন্য।এগুলারে একদম লাই দিবেন না আপা।’

আরেকজন চরম ভদ্রলোক,যিনি কিনা তার জীবন যৌবন পুরাটাই আমেরিকায় বিসর্জন দিয়া স্ত্রীর মৃত্যুকালে এবার আসছেন দেশে।কিন্তু প্যারালাইসড স্ত্রী দিয়ে তো আর খায়েশ মেটানো যাচ্ছে না।তাই হয়তো এক সকালে তাদের বাসার গৃহকর্মী নারীটি রাস্তায় নেমে চিল্লায়ে বলছিল… “অই খানকির পোলা আমি দাউ দিয়া তোর হাত কাইট্টা তোর বাড়ির কুত্তারে খাওয়ামু।”
ওই নারীটির অভিযোগ, সকালে যখন সে ঘর কুড়াচ্ছিল তখন এই লোক তাঁর কোমড়ে হাত দেন।এতে গৃহকর্মীটি খেপে গেলে তিনি তাঁকে বলেন, তোকে টাকা দিবো একটু থাক আমার সাথে।নারীটি অসম্মতি জানালে তাঁকে লাত্থি মেরে বের করে দেয়া হয়।

আমার এলাকাতে বাস করতেন এক ঠিকাদার।বয়স ষাটোর্ধ।দুই মেয়ে এক ছেলে নাতী নাতনী আর বউ নিয়ে সংসার।মাস দুয়েক থাকার পরেই সেই বাসায় কাজের লোক চিৎকার-চেচামেচি ও গালিগালাজ করে বিদায় হয়।কয়েক দিন পর আবার এক নতুন মুখ।এভাবেই চলছিল, আমার দীর্ঘ দিন দেখে আসা অভিজ্ঞতা।এলাকাবাসীর এ নিয়ে তেমন কোনো মাথা ব্যাথা বা অভিযোগ কিছুই ছিল না।
কিন্তু একবার আমি আমার এলাকার এক পরিচিত উকিল আপুর বাসায় গেলাম ল’তে ভর্তির নানা তথ্য জানতে।গিয়ে দেখি অই ঠিকাদারের স্ত্রী আর ছোট মেয়ে কান্নাকাটি করছে।আমাকে দেখে অনেকটা সামলে নিল।ওরা চলে যাওয়ার পরে আপু আমাকে জানালো এক ভয়ংকর তথ্য।ঐ লোকের অভ্যাস গৃহকর্মীদের দিয়ে শারীরিক জ্বালা মেটানো। কোনো গৃহকর্মী যদি তাতে অসম্মতি জানায়, তখন সেই লোক ওই নারীদের পেটাতেন।যা কিনা স্ত্রী কন্যারা ভালোভাবেই জানে।কিন্তু কেলেঙ্কারি বেঁধে যায় যখন কিনা এক নারী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে যায়। থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসলে মামলা হয়।তাই এই মামলার ইস্যু নিয়েই আপুর কাছে এসেছিলেন অই ঠিকাদারের মেয়ে বউ। অনেক টাকা তাদের, এসব টাচিং টাচিং খেলা কিচ্ছু না।

অনেকেই শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেন।আবার গৃহশ্রমিক হিসেবেও একটা শিশুকেই অগ্রাধিকার দেন।
আবার নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিয়ে অনেকেই বেশ স্বোচ্চার।কিন্তু নিজের ঘরে কি হচ্ছে সে খেয়াল নাই।
আপনাদের ঝামেলাটা আসলে ঠিক কোথায় তা বুঝলাম না। তবে আমি মনে করি গৃহকর্মী রাখবার আগে যেটা করা প্রয়োজন তা হলো তাদের সাথে কাজ করার মানসিকতা অর্জন করা।

আপনার মন মেজাজ খারাপ থাকতেই পারে,আপনার হরমোন ইমব্যালেন্সড হতেই পারে।আবার গৃহকর্মীও হাজারটা দোষ করতেই পারে।তাই বলে সব ঝাল ওই এক গৃহকর্মীর ওপর না মিটাইলেই তো হয়।তাদের চামড়াও কিন্তু আমার আপনার চামড়ার মতনই স্পর্শকাতর।